বিসিবি নির্বাচনে ভোটার তালিকায় সেই ‘১৫ ক্লাব’
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে ক্রীড়াঙ্গন এখন সরগরম। পাল্টা পাল্টি অভিযোগ আর যুক্তি তর্কে এরইমধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে পড়েছে ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনার পারদ ততই চড়ছে। বিশেষ করে গত দুই দিনে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে একের পর এক আপত্তি উঠেছে। বিতর্কের মাঝেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অন্যায় সুবিধা নিয়ে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট থেকে উঠে আসা বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরদের রেখেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে বিসিবির নির্বাচন কমিশন। খসড়া ভোটার তালিকায় ছিল না ছয়টি জেলা ও ১৫টি ক্লাবের কোনো প্রতিনিধি। চূড়ান্ত তালিকায় ছয় জেলার পাঁচটিই জায়গা, আছে ওই ১৫ ক্লাবের সবকটিই।
দুর্নীতির অভিযোগে যে ১৮টি ক্লাবের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে দুদকের, সেগুলোর মধ্যে আছে ওই ১৫ ক্লাব। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছিল দুদক। তদন্ত শেষ না হওয়ায় ও অভিযোগ এখনও প্রমাণিত না হওয়ায় ক্লাবগুলিকে নির্বাচনে অংশ নেওার সুযোগ করে দেয় বিসিবি। তবে ‘দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে’ সেই ক্লাবগুলিকে খসড়া তালিকায় রাখেনি নির্বাচন কমিশন। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপলি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত তালিকায় তাদের রাখা হয়েছে। খসড়া তালিকায় ৮-১০টি আপত্তি পড়েছিল ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার সন্ধ্যায় ৬টায় ছিল কাউন্সিলর নাম জমা দেওয়ার শেষ সময়। কিন্তু তার নাম জমা পড়ে রাত সাড়ে ৮টায়। তবু তাকে খসড়া তালিকায় রাখা হয়। নানা বিতর্কের পর অবশ্য পরদিন কাউন্সিলরের নাম জমা দেওয়ার সময় একদিন বাড়ানো হয়। চূড়ান্ত তালিকায় ফারুক আহমেদকে রেখে দেওয়ার পেছনে এটিকেই যুক্তি দেখালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ‘যেহেতু খসড়া ভোটার তালিকার জন্য একদিন সময় বাড়ানো হয়েছিল, সেই কারণে ফারুক আহমেদের আবেদন গৃহীত হয়েছে। দেরিতে জমা পড়ার পেছনে উনার কিছু ব্যাখ্যা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যেহেতু একদিন সময় এমনিতেই বাড়ানো হয়েছিল, তাই উনারটাও ভ্যালিড হয়ে গেছে।’
খসড়া তালিকায় যে ছয় জেলার কাউন্সিলের নাম ফাঁকা ছিল, সেখানে পাঁচ জেলার প্রতিনিধির জায়গা পাওয়া ও একটি জেলা শেষ পর্যন্ত ফাঁকা থাকার ব্যাখ্যাও দিলেন প্রধান নির্বাচক। ‘আমাদের কাছে ই-মেইলে অভিযোগ এসেছিল, যারা যারা কাউন্সিলর হতে চান, তারা অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘আমরা যখন ডিসি সাহেবের কাছে গিয়েছি আমাদের নাম জমা দিতে, ডিসি তখন অন্যায়ভাবে আমাদের নাম জমা দেননি। তবে আমরা অ্যাড হক কমিটির সদস্য।’ যেহেতু তারা অ্যাড হক কমিটির সদস্যা, এজন্য তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিসিবির ওয়েবসাইটে এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নেই শুধু নরসিংদী জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো কাউন্সিলর।
জানা গেছে নাজমুল হাসান বিসিবি সভাপতি থাকার সময় বিতর্কিত ১৮টি ক্লাব তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের বৈতরণী পার হয়েছিল লিগ না খেলেই। তিনটি ক্লাব পরে আবার তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নেমে যাওয়ায় এদের মধ্যে কাউন্সিলর হওয়ার মতো ক্লাব ছিল ১৫টি। এন্ট্রি ফি একলাফে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ায় প্রায় কোনো ক্লাবই আর তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে ছিল না। প্রতিবছর বোর্ডের ঘনিষ্ঠদের দুটি করে ক্লাব নাম এন্ট্রি করত এবং তারাই চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়ে তৃতীয় বিভাগে উঠত।
এসব ক্লাবকে টেনে তুলে বিসিবিতে নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়াতেই মূলত এমন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল সেই সময়ের বোর্ড। আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই ক্লাবগুলোর মালিকানাও বদলে গেছে। মজার বিষয় হলো, একসময় যারা অবৈধ পন্থায় ক্লাবগুলোকে তৃতীয় বিভাগ লিগে সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন, সুযোগ বুঝে এখন তারাই ক্লাবগুলোর মালিকানায়।
গত দুই দিন সেসব আপিল গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। খসড়া ভোটার তালিকায় নরসিংদী, সিলেট, নওগাঁ, বগুড়া ও পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকেও কোনো কাউন্সিলর ছিলেন না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নরসিংদী ছাড়া বাকি শূন্যস্থানগুলোও ভরে গেছে।
তামিম ইকবালের বিরুদ্ধে আসা আপিল আমলে না নেওয়ার কথা গতকালই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন আমলে নেয়নি সাবেক বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে করা আপিলও। ওল্ড ডিওএইচএসের কাউন্সিলর তামিমের সঙ্গে রেঞ্জার্স ক্রিকেট একাডেমির ফারুকের নামও আছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়। তামিমের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি এখনও ‘সাবেক ক্রিকেটার’ হননি, ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবেরও তিনি কেউ নন। আর ফারুকের বিরুদ্ধে আপিলের কারণ, তিনি কাউন্সিলর ফর্ম জমা দিয়েছিলেন নির্ধারিত সময়ের পর। গতকাল নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে ফারুক এর কারণ ব্যাখ্যা করলে কমিশন সেটি গ্রহণ করে। বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ অক্টোবর। আগামীকাল মনোনয়নপত্র বিতরণ ও পরশু মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন।
