‘ঈদেও নতুন জামা কিনতে পারিনি’
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া ডেস্ক

একটা সময় বাংলাদেশে মেয়েদের খেলাধুলায় অনেক বাধা ছিল। মেয়ে মানুষের আবার খেলা কি? পাড়া প্রতিবেশীরা অনেক সময়েই কটু কথা বলত। পরিবার থেকে বলা হতো মেয়েদের খেলাধুলা ভালো না। মান ইজ্জতের ব্যাপার! কেউ বিয়ে করবে না। পরিবার ও সমাজের তরফ থেকে আসতো নানা বাঁধা। তবে দিন বদলেছে, বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ ফুটবলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তার আগে থেকেই খেলছে আইসিসি বিশ্বকাপে। তারই ধারাবাহিকতায় ভারত ও শ্রীলঙ্কায় চলমান নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত টাইগ্রেসরা যে কয়টা ম্যাচ খেলেছে তাতে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন মারুফা আক্তার। এই পেসারের পেস-সুইংয়ে দিশেহারা বিশ্বের বড় বড় ব্যাটাররা। লাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে নাসের হোসেন ক্রিকেট বোদ্ধাদেরও প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। জাহানারা আলমণ্ডপরবর্তী বাংলাদেশ দলের পেস বোলিংয়ের কাণ্ডারি ভাবা হচ্ছে তাকে।
যদিও মারুফার উঠে আসার পথ এতটা মসৃণ ছিল না। বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সাহায্য করছেন মারুফা- এমন একটি ছবি অনেকেরই মনে থাকার কথা। কর্দমাক্ত জমিতে শক্ত হাতে লাঙলের হাল ধরে জমি চাষ করছিলেন মারুফা। সেই ছবিটি আজও অনেক উঠতি ক্রিকেটারের প্রেরণা হয়ে আছে। চরম দারিদ্র্য ও সমাজের কটুকথা, অবজ্ঞা পেছনে ফেলে আজ বিশ্ব মঞ্চে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন মারুফা। সম্প্রতি আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সংগ্রামের গল্প বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এই পেসার। এ সময় চোখের পানি আটকাতে পারেননি তিনি। নীলফামারীর সৈয়দপুরের হতদরিদ্র এক পরিবারে জন্ম মারুফার। ৬ সদস্যের পরিবারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করতেন মারুফার বাবা। বাবার কাজে সাহায্য করতেন মারুফারাও। আর্থিক দুর্দশার কারণে ভালো জামাকাপড় গায়ে জড়াতে পারতেন না। যে কারণে সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে আত্মীয়রা তেমন ডাকতেন না তাদের।
সেই কষ্টের কথা বলতে গিয়ে মারুফা বলেন, ‘কোথাও যদি বিয়ে বা কোনোকিছু (অনুষ্ঠান) হয়, দাওয়াত দেয় না? আমাদেরকে সেটাও দিতো না। বলত ওদের ড্রেস নাই, ওইখানে গেলে আমাদের মান-সম্মান থাকবে না। এরকম বলত অনেকে। একটা সময় ছিল যখন আমরা ঈদেও নতুন জামা কিনতে পারিনি।’ মারুফা বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের ওইরকম পয়সাকড়ি ছিল না। আব্বা যখন বাসায় থাকত না, বাজারে যেত, তখন মাকে এসে অনেকে অনেক কথা বলত। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলত, যেগুলো মেনে নেওয়ার মতো না। আমার মা রুমে গিয়ে কান্না করত। আমি আবার গিয়ে এক কোণায় কান্না করতাম, যে আমার জন্য এতকিছু হচ্ছে।’
সমাজের মানুষের কটু কথা দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য মারুফাকে। দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে তিনি আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গন মাতাচ্ছেন। টাইগ্রেস এ পেসার বলেন, ‘আমি ভাবতাম ঠিক আছে, আমি একদিন ভালো কিছু করে দেখাব। এখন আমরা যেরকম অবস্থাতে এসেছি, অন্যরা এখন সেরকম জায়গায় নেই। আমি যেভাবে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করছি, অনেক ছেলেরাও হয়তো সেভাবে পারছে না। এটা অন্যরকম একটা শান্তি দেয়। ছোটবেলায় ভেবেছি মানুষ কবে আমাদের এভাবে দেখবে, হাততালি দিবে। এখন টিভিতে (নিজেকে) দেখলে লজ্জা লাগে (হাসি)।’
