বিপিএলে আসছে নোয়াখালী-ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে ও শর্ত পূরণ করতে পারলে নোয়াখালী কিংবা ময়মনসিংহ দল দেখা যেতে পারে এবারের বিপিএলে। ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য সম্ভাব্য ১০টি এলাকার রূপরেখা তৈরি করেছে বিসিবি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও কুমিল্লার ফ্র্যাঞ্চাইজি নানা সময়েই খেলেছে বিপিএলে। এগুলোর সঙ্গে এবার নোয়াখালী ও ময়মনসিংহের নামেও ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিপিএল নিয়ে বিসিবির নতুন পরিচালনা পর্ষদের আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত, এবার পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হবে দলগুলির মালিকানা। আগে কখনও টানা তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া হয়নি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, বিপিএলে দল নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক্সপ্রেশন্স অব ইন্টারেস্ট আহ্বান করা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনও যাবে আজ রোববার। এর মাধ্যমে এবারের বিপিএলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
অন্তত পাঁচটি দল নিয়ে এবারের বিপিএল আয়োজন করতে চায় বিসিবি। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা, ভাবমূর্তি ও টুর্নামেন্টের দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে মালিকানা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে বিসিবি। গত সোমবার বিসিবি নির্বাচন পরদিন প্রথম বোর্ড সভার পরই বিসিবির নতুন গর্ভনিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান জানান, পূর্ব-নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই বিপিএলে আয়োজন করতে চান তারা। সামনে যদিও সময় একদমই কম, তবু টুর্নামেন্ট আয়োজন করার চ্যালেঞ্জ তারা নিতে চান।
আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি অনুযায়ী, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো খেলা নেই। ফেব্রুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির জন্যই এই সময়টাতেই বিপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগের বোর্ড। অতীতের সমালোচনা ও বিতর্কে অধ্যায় পেছনে ফেলে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে বিপিএল আয়োজনের কথা গত জুলাই থেকেই বলে আসছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। তবে নানা কারণে সময়ক্ষেপণ আর বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা এখন অবস্থা এমন যে, এত কম সময়ে বিপিএল আয়োজন করা নিয়ে নতুন শঙ্কাও উঁকি দিচ্ছে কিছু। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল অবশ্য সেসবকে পাত্তা না দিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গত শনিবার বিকালে বিসিবিতে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনের পর পরিবারের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলেও এই সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বিসিবি সভাপতি ও বিপিএল চেয়ারম্যান কাউন্সিলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সভা শেষে সদস্য সচিব ইফতেখার জানান, এক মাসের মধ্যে টুর্নামেন্ট শেষ করতে চান তারা। ‘নির্বাচনের পর নতুন দায়িত্ব পেয়েছি আমরা। আজকের সভায় প্রথমেই ঠিক করতে হয়েছে, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপিএল করব কি না। বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে, আমরা ধরেছি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়টাকে। আগের দলগুলোর চুক্তি শেষ, তাই এবারের বিপিএল নতুনভাবে শুরু হচ্ছে।’
বিতর্ক, অব্যবস্থাপনা আর সমন্বয়হীনতার কারণে কখনোই সে অর্থে বিপিএল আয়োজন করে প্রশংসিত হয়নি দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা। নতুন আসরের আগে তাই সতর্ক তারা। ‘আমরা দশটা অঞ্চলের নাম বলেছি, তবে এবার সময় কম। তাই অন্তত পাঁচটা দল নিয়ে আয়োজনের পরিকল্পনা করছি। বলছি না ছয় বা সাতটা দল হবে না, কিন্তু আমাদের প্রাধান্য পাঁচটি দল নিয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করা। আগের বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যে সব সমস্যা হয়েছিল, এবার আমরা কঠোর থাকব। ফাইনান্সিয়াল দিক ঠিক না থাকলে, কিংবা ম্যানেজমেন্ট দুর্বল হলে, বড় প্রতিষ্ঠান হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া হবে না। ফাইনান্স আর ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট দুটোই এবার কঠোরভাবে যাচাই করা হবে।’
গোছানোভাবে বিপিএল আয়োজনের জন্য স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইএমজির সঙ্গে চুক্তির কথা বলেছিল বিসিবি। যদিও সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, সময়ের স্বল্পতার কারণে মার্কিন কোম্পানিটি বিপিএলে কাজ করতে আগ্রহী নয়। তবে ইফতেখার সেটি সরাসরি নাকচ করে দিলেন। ‘এই খবরটা ভুল। আইএমজির সঙ্গে আমাদের আলোচনা এগোচ্ছে, চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। কয়েক দিনের মধ্যেই সই হয়ে যাবে। শুধু এবার সময় স্বল্পতার কারণে তাদের কাজের পরিসর কিছুটা ছোট হবে। সাত মাসের কাজ এবার দুই মাসে করতে হবে। ছোট পরিসরে আয়োজন করা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির জন্যও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজন করতে মরিয়া বিসিবি। ‘আমাদের উইন্ডো বিশ্বকাপের আগেই। এটা ক্রিকেটারদের জন্য প্রস্তুতির সুযোগও হবে। যারা বিপিএলে ভালো করবে, তারাই বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাবে। আর জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়দের জন্যও ম্যাচ প্র্যাকটিসের চমৎকার সময় এটা।
প্রেসিডেন্ট ও বোর্ড এই বিষয়টা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রিকেট চালু রাখতে হবে, আর জাতীয় দলকেও সহায়তা করতে হবে।’
সবশেষ বিপিএলে রাজশাহীসহ বেশ কিছু দল ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখা কাণ্ডে বিপিএলকে আগের মতো কলুষিত করেছে। তাই এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা আইএমজি ও বিসিবি যৌথভাবে দেখা হবে বলে জানান ইফতেখার। ‘ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়টা এবার খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এখানে আইএমজিও থাকবে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আইপিএলসহ বড় বড় লিগ পরিচালনা করছে, সেখান থেকে আমরা তাদের অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। আমাদের নিজস্ব গাইডলাইনও তৈরি হচ্ছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে এবার আমরা ভুলগুলো আর করতে চাই না। এক অর্থে বিপিএল এবার রিলঞ্চ হচ্ছে। সবাই মিলে সফল করতে পারলে এটা দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় ব্যাপার হবে।’
আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের বিপিএলে অন্তত একটি ভেন্যু বাড়ানো হবে বলেও জানান সবশেষ বোর্ডেও কাজ করা এই পরিচালক।
‘ভেন্যু বাড়ানোর কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। লজিস্টিকস, মিডিয়া, ফ্যাসিলিটিজ—সব যাচাই করতে টিম রাজশাহী যাচ্ছে। এরপর খুলনা ও বরিশালও দেখা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে আরও একটা ভেন্যু যুক্ত করতে চাই।’ নির্বাচন নিয়ে আরেকটি বড় শঙ্কার জায়গা নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে আগেই। সেক্ষেত্রে বিপিএলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আয়োজন নিয়ে উঠতে পারে প্রশ্ন। তবে সরকারের কাছ থেকে এখানে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে বিসিবি। ‘(জাতীয়) নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে, তাই ডিসেম্বর-জানুয়ারির এই সময়টায় বিপিএল আয়োজনের জন্য আমরা সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছি। নিরাপত্তা ও অন্যান্য দিক থেকেও সরকারের সহযোগিতা থাকবে।’
