‘সামাজিকমাধ্যমে ক্রিকেটারদের জবাব দেওয়া উচিত না’
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

এশিয়া কাপের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতলেও ওয়ানডে সিরিজে একই ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় কিছু সমর্থকের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, তাসকিন আহমেদসহ কয়েকজন ক্রিকেটার। সেই ঘটনা নিয়ে পরে সামাজিকমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করায় আবার ক্রিকেট অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েন নাঈম। তার সেই পোস্টে ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন পড়েছে শুক্রবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। সেখানে হাসির রিঅ্যাক্ট আছে ১ লাখ ৩ হাজারের বেশি। মন্তব্যগুলোর প্রায় সবকটিতেই নাঈমকে একরকম ধুয়ে দিয়েছেন অনুসারীরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয় সিমন্সের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ রন ফিল সিমন্স যেন এই প্রশ্নটির অপেক্ষাতেই ছিলেন। গতকাল শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুশি যে আপনি প্রসঙ্গটি তুলেছেন। প্রথমত বলতে চাই, সামাজিক মাধ্যমে কী হচ্ছে, এসব নিয়ে ক্রিকেটারদের কিছু করার আছে বলে আমি একদমই মনে করি না। ব্যক্তি হিসেবে সবারই অধিকার আছে সামাজিকমাধ্যমে যা ইচ্ছা বলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও জাতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আমার ক্রিকেটারদের অবশ্যই উচিত নয় এসবের জবাব দেওয়া।’ তবে ‘যা কিছু বলার অধিকার- মানে যে বর্ণবাদী মন্তব্য বা আচরণ নয়, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সামাজিকমাধ্যমে জাকের আলির প্রতি বর্ণবাদমূলক নানা মন্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরলেন কোচ, ‘ক্রিকেটারদের প্রতি কোনো ধরনের বর্ণবিদ্বেষী সুর কোনোভাবেই থাকা ভালো কিছু নয়। আপনি যেখান থেকেই আসেন না কেন, আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু জাকের আলির প্রতি যা হয়েছে, সেসবে আমি ক্ষুব্ধ। ভালো কিছু নয় এসব।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সিমন্সকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, জাকের আলির প্রতি বর্ণবাদমূলক কথার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশ দলের এখনকার কোচিং স্টাফের এক সদস্যের একটি মন্তব্যের জের ধরেই। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, জাকের যখনও জাতীয় দলে সুযোগ পাননি, বিপিএল চলার সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ বলেছিলেন, ‘জাকেরের কথাটা সবসময় আপনারা ভুলে যান, কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করেন না। ছেলেটার হয়তো চেহারা একটু কালো, এই কারণে আমার মনে হয় বোর্ডও তাকে দেখে না ঠিকমতো।’ সালাউদ্দিনের সেই মন্তব্য তখন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। এবার সিমন্সকে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার পর তিনি বললেন, ‘আমি জানি, সে এরকম বলেছিল। কিন্তু তার মানে কি এই যে, সে বলেছে বলেই লোকে জাকেরকে নিয়ে কটূকথা বলবে!’
কোচকে যখন আবার বলা হলো, কোচিং স্টাফের একজন সদস্য এমন মন্তব্য করলে অন্যরাও সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নিতে পারে, তখন তিনি বললেন, ‘ইউ হ্যাভ আ পয়েন্ট।’
সমালোচনার জবাবটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়, খেলার মাঠেই ক্রিকেটাররা দিক-এমন চাওয়া সিমন্সের। সেই সুযোগটা তারা পাচ্ছেন আজই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার টাটকা স্মৃতি ভুলতে এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। সিমন্স এ নিয়ে বলেছেন, ‘শেষ সিরিজটা যেমন কেটেছে, আপনি যেটা পারেন তা হচ্ছে, সবকিছু পেছনে ফেলা। কারণ, আমরা এর চেয়ে ভালো দল। আমরা আজ (গতকাল) এমনভাবেই অনুশীলন করেছি, যেন সামনে ভালো করতে পারি। নিশ্চিত করতে চেয়েছি কাল কীভাবে খেলব, সেদিকে যেন মনোযোগটা থাকে।’
প্রসঙ্গত, দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নাঈম শেখ লিখেছিলেন, ‘আমরা যারা মাঠে নামি, আমরা শুধু খেলি না। আমরা দেশের নামটা বুকে নিয়ে নামি। লাল-সবুজ পতাকাটা শুধু শরীরে নয়, রক্তে মিশে থাকে। প্রতিটা বল, প্রতিটা রান, প্রতিটা শ্বাসে চেষ্টা করি সেই পতাকাটাকে গর্বিত করতে। হ্যাঁ, কখনও পারি, কখনও পারি না। জয় আসে, পরাজয়ও আসে, এটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। জানি, আমরা যখন হেরে যাই, তখন আপনাদের কষ্ট হয়, রাগ হয়। কারণ আপনারাও এই দেশটাকে আমাদের মতোই ভালোবাসেন।’
‘কিন্তু যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি; কিন্তু কখনও দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখি না। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।’ সমালোচনা যৌক্তিকভাবে করা হোক বলেও সমর্থকদের প্রতি আহবান করেছেন নাঈম, ‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়। সমালোচনা হোক যুক্তিতে, রাগে নয়। কারণ আমরা সবাই একই পতাকার সন্তান। জয় হোক, পরাজয় হোক, লাল সবুজ যেন আমাদের সবার গর্ব থাকে, ক্ষোভের নয়। আমরা লড়ব, আবার উঠব, দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, এই পতাকার জন্য।’
