ছয় রাউন্ড পিছিয়ে থেকেও হ্যাটট্রিক শিরোপা নোশিনের
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

টানা দুই বারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফেবারিট হিসেবেই খেলা শুরু করেন দাবাড়ু নোশিন আনজুম। কিন্তু কুমিল্লা জেলার নুসরাত জাহান আলোর কাছে ছয় রাউন্ড পর্যন্ত পিছিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই ফিদে মাস্টার। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত শীর্ষ স্থান বজায় রেখে জাতীয় মহিলা দাবায় হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে নেন নোশিন। গতকাল শুক্রবার শেষ রাউন্ডে নোশিনের প্রয়োজন ছিল ড্র। প্রতিপক্ষ ওয়ারসিয়া খুশবুর সঙ্গে ছয় চালেই ড্র হয়েছে। দাবা বোর্ডে দুই জনের সমঝোতায় ড্র বৈধ। শেষ রাউন্ডে লড়াই ছাড়া ড্র নিয়ে নোশিন বলেন, ‘আমি ড্র অফার করেছিলাম, খুশবু রাজি হয়েছে কারণ ড্রতে খুশবুও অলিম্পিয়াডে দলে থাকবে। বোর্ডে আলোচনার ভিত্তিতে ড্র দাবাতে হয়েই থাকে।’
জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের উত্থান-পতন নিয়ে নোশিন বলেন, ‘আলোর কাছে হারের পর খুব আপসেট ছিলাম। খেলায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলছিলাম। আম্মু উৎসাহ দিয়ে বলছিল বাকি খেলাগুলো জিতলে আলো একটা হারলে প্লে অফ হবে। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে বাকি খেলাগুলো জিতি। সব মিলিয়ে ১১ রাউন্ডের মধ্যে তিনটি ড্র, একটি হার ও সাতটি জয়।’ এবারের প্রতিযোগিতার মানকে বিগত সময়গুলোর চেয়ে এগিয়ে রাখলেন তিনি, ‘যখন জাতীয় মহিলা দাবা শুরু করেছিলাম, তখন অনেক বয়স্ক নারীরা খেলতেন। এখন রাণী আন্টি ছাড়া সবাই খুব কম বয়স। যে কেউ যে কাউকে হারানোর মত অবস্থা রয়েছে। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মান অবশ্যই বেশি।’ নোশিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধূলার ভারসাম্যতা নিয়ে বলেন, ‘জাতীয় দাবার জন্য দু’টি মিডটার্ম মিস করেছি। সেগুলো এখন পরে দিতে হবে। দু’টোই চালিয়ে যাচ্ছি সমানভাবে।’
টানা তিন বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেও নোশিন এখনও ফিদে মাস্টার। দু’টি আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম রয়েছে। মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে এখনও আরেকটি নর্ম ও ২২০০ রেটিং প্রয়োজন। তার বর্তমান রেটিং ১৯৯০। এ নিয়ে খানিকটা আফসোস ঝরল তার কণ্ঠে, ‘এটা একটা অতৃপ্তি। জোনালে চ্যাম্পিয়ন হলে আমিও সরাসরি মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে পারতাম কিন্তু ওয়াদিফার কাছে হারায় হতে পারিনি। ওয়াদিফা আমাদের নৌবাহিনীরই সে হয়েছে, আমারও সুযোগ ছিল হওয়ার।’
রেটিং কম ও টাইটেল নিম্ন হলেও নোশিনই বাংলাদেশের সেরা নারী দাবাড়ু। তার স্বপ্ন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার নয়, গ্র্যান্ডমাস্টারই হওয়া। সেই গ্র্যান্ডমাস্টার হতে নর্ম, রেটিং উভয় বৃদ্ধি প্রয়োজন। এজন্য দেশের বাইরে বেশি খেলতে হয়। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় সেটা হয় না। তাই খানিকটা শঙ্কিতই এই চ্যাম্পিয়ন, ‘আমার যখন সেরা ফর্ম ছিল তখন ২১০০ প্লাস রেটিং ছিল। বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে দাবার কে ফ্যাক্টর ৪০ থেকে কমে ২০ হয়। আমাদের দেশে টুর্নামেন্ট তেমন হয় না। ইউরোপে হাঙেরী, স্পেনে খেলতে পারলে রেটিং বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। সেখানে খেলতে অনেক খরচ। আমি নৌবাহিনী থেকে যা পাই তা দিয়ে পরিবার নির্বাহ হয়। বাইরে থেকে স্পন্সর আমার খুবই প্রয়োজন।’ জাতীয় মহিলা দাবায় মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদ ২০ বার চ্যাম্পিয়ন।
৮২ বছর বয়সি রাণী হামিদ গত বছর হাঙেরীতে দাবা অলিম্পিয়াডে টানা ৬ রাউন্ড জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এবার জাতীয় দাবায় তার অবস্থান শেষ রাউন্ড পর্যন্ত ১১ তম। প্রথম পাচ জন অলিম্পিায়াডে খেলার সুযোগ পান। ফলে আগামী বছর উজবেকিস্তানের অলিম্পিয়াডে রাণী হামিদের খেলার কথা নয়। বুদ্ধির খেলা দাবায় বেশ কয়েক বছর আগেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন নোশিন। ২০০৪ সালে জন্মগ্রহণ করা এই নারী দাবাড়ু মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার প্রথম নর্ম উইমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার (২০১৯) অর্জন করেন। এর পরের বছর ২০২০ সালে ২য় নর্ম উইমেন ফিদে মাস্টার অর্জন করেন। এছাড়া তার দুটি আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম রয়েছে।
