বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড় ৪৫ ক্লাব

বিসিবির নতুন কমিটিকে বৈধ মানতেই রাজি নয় ক্লাব সংগঠকদের বড় অংশ

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাইশ গজের লড়াইয়ের মতোই পরতে পরতে উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে। নির্বাচন হবে কি হবে না, তা নিয়ে সংসয় দেখা দিয়েছিল। শেষমেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিকই, তবে তাতে কোনো ঝাঁজ ছিল না। বড় এবং শক্তিশালী একটি অংশ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না বললেই চলে। নানা নাটকীয়তা এবং অনেক টানাপোড়েনের পর বিসিবির নির্বাচন হয়ে গেলেও, তা নিয়ে জটিলতা খুব একটা কমেনি। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ঢাকার প্রথম বিভাগসহ বিভিন্ন ঘরোয়া লিগ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল ৪৫টি ক্লাব। তাদের এই অবস্থানের কারণে প্রথম বিভাগসহ রাজধানী কেন্দ্রিক ঘরোয়া ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কারণ, বিসিবির নতুন কমিটিকে বৈধ মানতেই রাজি নয় ক্লাব সংগঠকদের বড় অংশ। ঢাকা মেট্রোপলিটনের ৭৬টি ক্লাবের মধ্যে ৪৫টি আবারও দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিল, লিগ বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও সরছে না তারা। ফলে আগামী শুক্রবার ও শনিবার নির্ধারিত টোকেন জমার প্রক্রিয়া, যা কি না দলবদলের অংশ, তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ক্লাব প্রতিনিধি ও ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সঙ্গে বৈঠক শেষে ঘোষণা দেন যে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। লিগটি মূলত ১৮ নভেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে মাত্র ১২টি ক্লাব প্লেয়ার্স ট্রান্সফারে অংশ নেওয়ায় তা প্রথমে ২৫ নভেম্বর, পরে আবার ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। নতুন তারিখ নিশ্চিত করেই বিসিবি সভাপতি জানান, খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার উইন্ডো বাড়িয়ে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে ক্লাবগুলো তাদের বয়কট সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি। গত মঙ্গলবার পুনরায় আলোচনায় বসে ক্লাবগুলো জানিয়ে দেয়, তারা তাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা বয়কট প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেবে না।

ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিটনের (সিসিডিএম) আওতাধীন ক্লাবগুলোর ওই বড় অংশ নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে বিসিবি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অধীনে কোনো লিগে না খেলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে আবাহনীর পরিচালক শেখ বশির আল মামুন নিজেদেরকে ক্রিকেট উন্নয়নের আসল লোক দাবি করেন। ‘বিসিবিতে যারা নিজেদের ‘অবৈধ’ বা ‘বৈধ’ বোর্ড সদস্য বলে দাবি করছেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের কারণে খেলোয়াড়রা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তাদেরকে আমরা বলতে চাচ্ছি যে- আমরা ঐক্যবদ্ধ, আমরা খেলার পক্ষের লোক। বোর্ড চাইলেই খেলা হবে না। আমরা চাইলেই খেলা হবে। এটাই আমাদের অবস্থান সবার জন্য। আজকে কথা বাড়াব না। আমরা একজন দুইজন না। আমরা পুরা সবাই। সবাই আমাদেরকে সমর্থন করছে।’ বিসিবির বর্তমান কমিটিকে এই ক্লাব সংগঠকরা যেমন ‘অবৈধ’ বলেছে, তেমনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম ইকবালও এই কমিটিকে অবৈধ বলেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের দলবদলে তামিমের ক্লাব অংশ নেওয়ায় গুঞ্জন ছড়ায়, লিগ বর্জনের ঘোষণা দেওয়া ক্লাব সংগঠকদের একাংশ থেকে তামিম বেরিয়ে গেছেন।

সেই গুঞ্জন নিয়ে কথা বলেছেন মোহামেডান পরিচালক মাসুদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘তামিম আমাদের বাইরে না। আবার তামিম খেলোয়াড়দের বাইরেও না। পাশাপাশি আমরাও প্লেয়ারদের বাইরে না কিন্তু। তামিম ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়দের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ও পাশাপাশি আমাদের সঙ্গেও আছে। নিয়মিতই কথা হয়।’ সংবাদ সম্মেলনে সিসিডিএমের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে কথা বলার দরকার ছিল, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সময়ে আলোচনা বাড়াতে চান না। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, মোহামেডান ক্লাব এই আন্দোলনে সবার পাশে আছে এবং কোনো মিথ্যাচারে কান না দিতে অনুরোধ করেন। ‘মোহামেডান ক্লাব আগেও আপনাদের (ক্রিকেটারদের) পাশে ছিল, সামনেও থাকবে। আমরা আমাদের আগের অবস্থানেই আছি। যারা ক্লাব সংগঠক আছেন তাদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, মোহামেডানকে আপনারা পাশে পাবেন।’ বোর্ডের বর্তমান কমিটির সমালোচনা করে মাসুদুজ্জামান বলেন, ক্লাব সংগঠকদের মূল লক্ষ্য খেলার উন্নয়ন হলেও বোর্ডে এর উল্টো চিত্র। ‘এখানে আমাদের অনেকের অনেক পরিচয় হতে পারে। তবে ক্রিকেটে এলে আমরা স্রেফ ক্লাব সংগঠক। আমাদের ক্লাবের বাইরে ব্যক্তিগত দলীয় পরিচয় থাকতেই পারে। কিন্তু ক্লাবে আমরা সংগঠক। সেখানে আমরা শুধু খেলার উন্নয়ন, ক্রিকেটারদের ভাবনা, এসব নিয়েই আলোচনা করি। এখানে অন্য কোনো এজেন্ডা নেই। অথচ আমরা লক্ষ্য করলাম, এখন বোর্ডে কিছু লোক এসেছেন যাদের সঙ্গে ক্রিকেটের কোনো সম্পর্ক নেই। তারাই আজকে আমাদেরকে পেছনে সরিয়ে জায়গা দখল করতে চায়। তারা কী নির্বাচন করেছেন সেটার বড় সাক্ষী তো আপনারা (সাংবাদিকরা)!’

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মাসুদুজ্জামান পরে আবারও নিজেদের আগের অবস্থানে অটল থাকার কথা বলেন। ‘উনারা নির্বাচিত হলেন। এত অনুষ্ঠান হচ্ছে, এতকিছু হচ্ছে, কোনো কিছুতেই ক্লাবগুলোকে ডাকছে না। আমাদেরকে উনারা পছন্দ করেন না। ঠিক আছে, এটা উনাদের ব্যাপার। এটা উনাদের পুরোনো খেলা, এটা আমরা জানি। তবে আমরাও আমাদের অবস্থানেই আছি। সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে আসিনি।’ নারী ক্রিকেটে যৌন হয়রানির মতো যে স্পর্শকাতর বিষয়টি সামনে এসেছে, এর তদন্ত প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করারও কঠোর সমালোচনা করেছেন ক্লাব সংগঠকরা।

বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, বোর্ডের নিষ্ক্রিয়তা দেশের ক্রিকেটের জন্য ‘নেক্কারজনক।’ তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, এটা আমাদের দাবি। প্রত্যেকের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে। যদি তারা না করে, আমরা এটা বিচার করব ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে। বোর্ডে যারা আছে তারাও কিন্তু এটার সঙ্গে জড়িত। তাদের ব্যাপারগুলো কিন্তু বোর্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা ধিক্কার জানাই।’