বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে অবসর সময় পার করছিলেন টাইগাররা। নেই কোনো ব্যস্ততা। তাই জাতীয় দলের ব্যাটারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প শুরু করেছেন কোচ ফিল সিমন্স। প্রথম দিনে অনুশীলন সেরেছে দলের ব্যাটাররা। তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সাইফ হাসান ও নুরুল হাসান সোহানরা ছিলেন এদিন অনুশীলনে। পুরো সেশনে উপস্থিত ছিলেন সিমন্স। সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন ও ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল।

গতকাল শনিবার মিরপুরে অনুশীলন সেশন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সালাহউদ্দিন জানান, ‘উন্নতির আসলে শেষ নেই। আপনারা প্রায়ই বলেন আমাদের স্কিলে ঘাটতি আছে, সেটা আমরাও জানি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার কারণে কাজ করার সময় পাওয়া যায় না। এই ক্যাম্পটা খেলোয়াড়দের ঘষা-মাজার জন্য। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ভালো শটও অনেক সময় ফিল্ডারের কাছে চলে যায়, এগুলো সামলানোর দক্ষতা বাড়ানোই লক্ষ্য।’

ব্যাটারদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘টিম মিটিংয়ে কথা বলা, আলোচনায় অংশ নেওয়া, এমনকি নিজেরাই মিটিং লিড করা, এসব করতে বলা হয়। কারণ সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে, খেলেন তো তারাই। খেলোয়াড়রা যত নেতৃত্ব নেবে, তত পরিপক্ব হবে; গেম সেন্সও তত বাড়বে।’ দলের চলতি বছরের পারফরম্যান্স নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখন সেই জায়গার কাছাকাছি, যেখানে যেতে চাই। বড় কোনও সাফল্য এখনো পাইনি ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত সিরিজ খেলছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি। ব্যাটাররা তাদের ভূমিকা বুঝতে শুরু করেছে। সামনে দুই মাস যদি এভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপের আগে দল খুব ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবে।’

চলতি বছর ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৫টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৪টি হারের সাথে ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। নিজেদের টি-টোয়েন্টিতে এক বছরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে টাইগাররা। এছাড়া টানা চারটিসহ এ বছর পাঁচটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছি। যা আমাদের উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। বিশ্বকাপের আগে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। এখনও উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আমরা যে ফলাফল আশা করেছিলাম তা পেয়েছি।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কিভাবে খেলতে হবে সেই ধারণা এ বছর খেলোয়াড়রা ভালভাবে পেয়েছে বলে মনে করেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, টি-টোয়েন্টি সর্ম্পকে ভাল হয়েছে খেলোয়াড়দের। তারা এখন জানে কিভাবে খেলা উচিত। এ বছর এটিই সবচেয়ে বড় অর্জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাটাররা নিজেদের দায়িত্ব অনুযায়ী খেলেছে। এমন সময় ছিল, যখন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হত না। এখন সবাই নিজেদের দায়িত্ব সর্ম্পকে ভাল বুঝতে পারে।’ ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ৬টি টেস্ট খেলেছে। এরমধ্যে তিনটিতে জয় ও দু’টি হার এবং ১টিতে ড্র করেছে। এমন পারফরমেন্সকে ইতিবাচক বলছেন সালাউদ্দিন। তিনি জানান, টেস্ট দলে বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের টেস্ট দল উন্নতি করলেও, ফলাফল ধীরে ধীরে আসছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, টেস্ট দলের অগ্রগতি ভাল হচ্ছে।’ এ বছর ওয়ানডেতে ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটিতে জয় ও ৮টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওয়ানডেতে আমরা নিয়মিত সিরিজ খেলি না, যা আমাদের ফলাফলে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও ওয়ানডে দলকে ভাল অবস্থায় নিয়ে আসা চার-পাঁচজন খেলোয়াড় সাম্প্রতিক বছরে খুব বেশি খেলেনি। তাদের শূন্যতা পূরণে আমাদের আরও সময় প্রয়োজন।’

ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে সালাউদ্দিন বলছিলেন, ‘সব দিকেই নজর রাখা হবে। কারণ তারা তাদের মেন্টাল সেটটা কেমন আছে, তাদের ফিজিক্যাল সেটটা কেমন আছে, তারা টেকনিক্যালি কেমন করছে, সবকিছুই তাদের নজর রাখতে হবে। কারণ দেখা গেল যে এখানে ন্যাশনাল টিমে একটা ট্রেনার যেভাবে ট্রেনিং করাচ্ছে হয়তো বিপিএল এসে সে ট্রেনিং সে পাচ্ছে না। বা ফিটনেস ডাউন হলে তো পরবর্তীতে তো আমাদেরই আবার এটা রিকভার করে আবার তাকে ফিট করে নিয়ে আসতে হবে। এই জিনিসগুলো পুরো লক্ষ্য রাখা হবে। তারা যেন প্রতিটা সেক্টরেই ওয়ার্ল্ড কাপের জন্য রেডি থাকে। কারণ খুব বেশি সময় থাকবে না।’

পরে বিপিএলে ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য আমাদের যেহেতু ট্রেনার আছে আমরা কিন্তু সবসময় খেয়াল রাখি। এর আগের বিপিএলের সময় আমাদের ট্রেনার ইনভলভ ছিল, সে সবসময় মনিটর করছে কিভাবে ওয়ার্কলোডটা হচ্ছে। ছেলেরা এখন আগের থেকে অনেক ম্যাচিউর। স্পেশালি আমি আমাদের সাথে যেসব ছেলেরা আছে, তারা কিন্তু নিজেদের ওয়ার্কলোড বলেন, ফুড হ্যাবিট বলেন; আগের থেকে নিজেরা অনেক আপগ্রেড। তাই আমার মনে হয় না খুব বেশি সমস্যা হবে এবং তারা নিজেরাও জানে আসলে তাদের জিমে কী করতে হবে।’

বিশ্বকাপের আগে বিপিএল করা নিয়ে সিনিয়র সহকারী এই কোচ বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে একটা টুর্নামেন্ট খেলবে। ভালো বোলাররা আসবে, ব্যাটাররা তাদের ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। তো অবশ্যই এটা অনেক অনেক একটা ভালো। আমি বলবো ভালো প্র্যাকটিস হবে ওয়ার্ল্ড কাপের আগে। যেহেতু আপনি একটা একই ফর্মে খেলার পর বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন। তারা যদি ভালোভাবে সেটা ইউজ করতে পারে, আমি মনে করি এটা টিমের জন্য অনেক ভালো।’