‘তাসকিন আমার রেকর্ড ভেঙে দিক’
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ গতির বলের মালিক শোয়েব আখতার। এরপর তার কাছাকাছি গিয়েছেন অনেকেই। এক সময় মনে হয়েছে শন টেইট বা ব্রেট লিরা ভেঙে দিতে পারবেন শোয়েবের রেকর্ড। তবে তা হয়নি। শোয়েবের করা সর্বোচ্চ গতির বলের রেকর্ড এখনও বহাত তবিয়তে টিকে আছে। ২০০৩ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা শোয়েবের ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির রেকর্ড এখনও ইতিহাসের অংশ। বর্তমান সময়ে অনেক গতিময় পেসারই উঠে এসেছেন। পাকিস্তানের নাসিম শাহ, ভারতের উমরান মালিক, বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা। তবে শোয়েবের চাওয়া তাসকিন সেই রেকর্ড ভাঙুক।
শোয়েব ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাসকিনও খেলবেন শোয়েবের দল ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়েই। এরই মধ্যে দায়িত্ব বুঝে নিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন তিনি। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন তাসকিন তার গতির রেকর্ড ভেঙে দিলে কোনো আপত্তি নেই। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তাসকিন আমার সর্বোচ্চ গতির রেকর্ড ভেঙে দিক।’ তরুণ পেসারদের খেলাটা উপভোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন শোয়েব। এরপর তিনি নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন বল করে ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার শচিন টেন্ডুলকারের মাথায় আঘাত করেছেন। এমনকি তার পাঁজরের হাড়ও ভেঙে দিয়েছেন। তবে তিনিই তার প্রিয় খেলোয়াড়।
গতকাল রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানালেন শোয়েব। পাকিস্তান কিংবদন্তিকে পেয়ে বিপিএল ও ঢাকা ক্যাপিটালস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খুব কমই। শোয়েবের ক্যারিয়ার, গতিময় বোলিং, এখনকার ফাস্ট বোলিং, পছন্দের ডেলিভারি ও ক্রিকেটার- এসব নিয়েই কথা হলো বেশি, সেটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে গতিময় বোলারকে কাছে পেয়ে এসব জানার বিষয়েই সবার আগ্রহ ছিল বেশি। আমার ব্যক্তিগত মতে, সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনজন- শেন ওয়ার্ন, ওয়াসিম আকরাম ও শচীন টেন্ডুলকার। ২০১১ বিশ্বকাপে অবসর নেওয়ার আগে ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় তিনটি ডেলিভারি সমন্ধে জানতে চাওয়া হয়েছিল। শোয়েব এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তার বিবেচনায় সর্বকালের সেরা তিন ক্রিকেটারের নাম বলেন সবার আগে, ‘আমার ব্যক্তিগত মতে, সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনজন- শেন ওয়ার্ন, ওয়াসিম আকরাম ও শচীন টেন্ডুলকার।’ শোয়েব এরপর পছন্দের তিনটি ডেলিভারি নিয়ে বলতে গিয়ে মজা করেন, ‘আমার তিনটি প্রিয় ডেলিভারি হলো-শচীনকে প্রথম বলে আউট করা। দ্বিতীয়টি ব্রায়ান লারাকে ঘাড়ে আঘাত করা। তৃতীয়টি গ্যারি কারস্টেনকে বুকে আঘাত করা। না, না, আমি মজা করছি। আমার সেরা তিনটি ডেলিভারি হলো-শচীন এবং কলম্বোতে গিলক্রিস্টকে ইয়র্কারে আউট করা, ২০০২ সালে। আমার তৃতীয় বা চতুর্থ টেস্টে জ্যাক ক্যালিসকে একটি খুব গতিময় ডেলিভারিতে আউট করা (তৃতীয়টি)।’ মাঠে আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণেও আলোচিত ও সমালোচিত ছিলেন শোয়েব। কখনো কখনো শরীর সোজা বাউন্সার মেরে ভয়ও পাওয়াতেন ব্যাটসম্যানদের। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ফাস্ট বোলিং করার চূড়ান্ত আনন্দ কী- হেলমেটে বাউন্সার মারা নাকি ৫ উইকেট নেওয়া? পাশাপাশি ফাস্ট বোলিং উপভোগের মন্ত্র কী?
শোয়েব বলেন, ‘যেকোনো ফাস্ট বোলারকে আমার পরামর্শ হলো নিজের বোলিং উপভোগ করুন। লম্বা রানআপ, লম্বা চুল, খোলা শার্ট...মুহূর্তটি উপভোগ করুন। রানআপের প্রতিটি ধাপ ক্রিকেট নয়, এটি একটি ইভেন্ট। প্রতিটি বল একটি ইভেন্ট। নিজেকে উপভোগ করুন, নিশ্চিত করুন যে আপনি মানুষের জন্য একটি দুর্দান্ত শো তৈরি করছেন- যাতে তারা দেখতে পারে, উপভোগ করতে পারে।
একই সঙ্গে লক্ষ্য হওয়া উচিত উইকেট নেওয়া, আঘাত করা নয়।’ এ প্রসঙ্গে শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারাকে আঘাত করে যে ভালো লাগেনি, সেটাও জানান শোয়েব। শোয়েবের নিজের সময় এবং বর্তমান প্রজন্মের পেস বোলিংয়ের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে কিংবদন্তির ভাষ্য, ‘এ প্রজন্মকে দোষ দিতে চাই না। কারণ, তারা টি-টোয়েন্টির যুগে জন্ম নিয়েছে। তাদের প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়। ম্যাচ খেলে পরদিন সকালে আবারও খেলতে হয়। তাই সবচেয়ে দ্রুততম ডেলিভারিটি করতে তাদের শারীরিকভাবে পুনরায় ফিট হয়ে ওঠার সময় নেই। কিন্তু ছয় মাস বিশ্রাম নিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে দ্রুততম বোলিং করা সম্ভব। তাই এই প্রজন্মের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু এটাও বিশ্বাস করি, যে পরিমাণ আগ্রাসন আমরা দেখতে চাই, সেটা (বিশ্ব ক্রিকেটে) অনুপস্থিত।’
