ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বার্ধক্যে পৌঁছার আগেই খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করুন

বার্ধক্যে পৌঁছার আগেই খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করুন

আমাদের শরীর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাবারনির্ভর। শরীর ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, সঠিক দেহের গঠন ঠিক রাখতে, কর্মশক্তি ও জীবনীশক্তি বাড়াতে এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করা জরুরি। আপনি জানেন কি, আপনি যদি মধ্যবয়স থেকে খাবার তালিকাটি পরিবর্তন করে খাবারের পুষ্টিমান অনুযায়ী সঠিকভাবে খাবার খান, তবে আপনার শরীরের বার্ধক্য দেরিতে আসবে, বার্ধক্যে আপনি অনেক রোগের ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন এবং বার্ধক্যকালীন সময়ে সঠিক খাদ্যমান বিবেচনা করে খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি মিলবে, দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারবেন। তাই আসুন জেনে নিই, আমাদের খাবার তালিকায় কোন খাবার কেন জরুরি। জেনে নিন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব পুষ্টি উপাদান অবশ্যই রাখতে হবে সেগুলো কী কী

শর্করা জাতীয় খাবার

শর্করা আমাদের শরীরে শক্তি বা ক্যালোরি বাড়ায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভাত, আলু, মিষ্টি বা আঁশজাতীয় খাবারে পর্যাপ্ত শর্করা রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস ও লিভার রোগ রয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শর্করা জাতীয় খাবার খাবেন।

আমিষ জাতীয় খাবার

দেহের সব কিছুই কোষ দিয়ে তৈরি। কোষ, মাংসপেশি ও টিস্যু গঠনের জন্য প্রোটিন খুবই জরুরি। আমিষ জাতীয় খাবারগুলো হলো ডিম, মাংস, বাদাম, ডাল, মাছ ও দুধজাতীয় খাবার। প্রতিদিন খাবার তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণে আমিষ রাখুন। তবে প্রবীণদের অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। কিডনি রোগীদের নেফ্রোলজিস্ট বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমিষ খাওয়া ভালো।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আমাদের হাড় ও জয়েন্ট শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র অভাবে শরীরে হাড়ক্ষয় জাতীয় নানা রোগ হতে পারে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার রাখা জরুরি। সাধারণত ডিম, দুধ, টুনাফিস, বাদাম, ব্রোকলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়া আমরা সবাই জানি সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই নিয়ম করে দিনের একটি সময় ১০ মিনিট থেকে তিরিশ মিনিট পর্যন্ত সূর্যের আলো শরীরে প্রবেশ করতে দিন।

চর্বিজাতীয় খাবার

বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়া ভালো নয়। কিন্তু আপনি জানেন কি পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীর সুস্থ রাখার জন্য সহায়ক ও জরুরি? সাধারণত পনির, ডিম, অলিভ অয়েল, ডার্ক চকলেট ও সামুদ্রিক মাছে গুডফ্যাট পাওয়া যায়।

আয়রন জাতীয় খাবার

দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো আয়রন। শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়। এছাড়া আয়রনের অভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। সাধারণত ডিমের হলুদ অংশ, ডাল, কলিজা, পালংশাক, কাঁচাকলা, মাছ, শিমের বিচি, মুরগির মাংস ও তরমুজ থেকে পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় আয়রন। তাই খাবার তালিকায় প্রতিদিন আয়রন জাতীয় খাবার রাখুন।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া তারুণ্য ধরে রাখতে, ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন সি’র জুড়ি নেই। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, লেবু ও ফলমূল রাখলে ভিটামিন সি’র ঘাটতি মিটবে।

ভিটামিন বি

সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকার জন্য ভিটামিন বি খুব জরুরি। থাইমিন, ফলিক অ্যাসিড, রিবফ্লভিন, বায়োটিন ভিটামিন বি১২, বি৬ ও বি৫ সমৃদ্ধ খাবার চাই প্রতিদিন। সাধারণত ডিম, দুধ, মাংস, কলিজা থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন পাওয়া যায়।

পর্যাপ্ত পানি

আপনি জানেন কি, আমাদের শরীরের ষাট ভাগজুড়েই রয়েছে পানি। প্রতিদিন খাদ্যা তালিকায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি প্রতিদিন পান করুন। যারা ভারী কাজ করেন তাদের অবশ্যই আরও বেশি পানি পান করা উচিত।

পরিশেষে মনে রাখবেন, মধ্যবয়স থেকে আপনার পরিবর্তিত খাদ্য তালিকার ওপর নির্ভর করছে আপনার বার্ধক্য শারীরিকভাবে কতটা স্বস্তিদায়ক হবে। তাই বার্ধক্যে পৌঁছার আগেই মাঝবয়স থেকেই আপনার খাদ্য তালিকাটি পরিবর্তন করুন।

মহসীন কবির

বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন (আইজিএম)

ব্যবস্থাপক, প্রবীণ নিবাস, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ

mohsinkabir13@gmail.com

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত