প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
জ্বরের মতো শ্বাসকষ্ট নিজে কোনো রোগ নয়। এটি অন্যান্য রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। সাধারণত নাক বন্ধভাব, সর্দি, চোখে চুলকানি ও পানি ঝরা, বুকে চাপ চাপ বোধ, কাশি, হাঁচি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি উপসর্গ শ্বাসকষ্টের সঙ্গে থাকে। আর হাঁপানি রোগীদের জন্য শীতল আবহাওয়া, সর্দি-কাশি-ফ্লু বা ঠান্ডা-জ্বর প্রচ- কষ্ট আর বিপদের কারণ হতে পারে। প্রতি বছর শীতে শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং বড়দের ৪০ শতাংশ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণগুলো হলোÑ এই সময়ে ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লুর প্রকোপ, ঠান্ডা-শুষ্ক বাতাস যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত করে, শীতে বেড়ে যাওয়া ধুলাবালু ও ধোঁয়ার পরিমাণ, কুয়াশা ও বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি। এসবই শ্বাসতন্ত্রের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে হাঁপানি রোগীর কষ্ট বাড়ে। এই হাঁপানিটি দুরারোগ্য ব্যাধি, করোনাকালে যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে, তারা বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে।
অ্যাজমা ২ ধরনের
একিউট অ্যাজমা : তীব্রতা অনুসারে অ্যাজমা- তীব্র হাঁপানি এতে ফুসফুসের বায়ুবাহী নালীগুলো আকস্মিকভাবে সংকুচিত হয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টের সৃষ্টি করে।
ক্রনিক অ্যাজমা : দীর্ঘমেয়াদি হাঁপানি। এতে ঘন ঘন অ্যাজমায় আক্রান্ত হয় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
নন এলার্জিক অ্যাজমা : এ ধরনের অ্যাজমা এলার্জি ঘটিত নয় বরং ধূমপান, রাসায়নিক দ্রব্য, জীবাণুর সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অট্টহাসি, অধিক ব্যায়াম, এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন, খাদ্য সংরক্ষণকারী উপাদান, পারফিউম, অত্যধিক ঠান্ডা, গরম, আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাসের কারণে দেখা দেয়।
অ্যাজমা রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ
বুকে সাঁই সাঁই বা বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, শ্বাস কষ্ট হওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা, দীর্ঘমেয়াদি কাশিতে ভুগতে থাকা, ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
অ্যাজমা রোগীকে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে : ১. বিছানা ও বালিশ প্লাস্টিকের সিট দিয়ে ঢেকে নিতে হবে বা বালিশে বিশেষ ধরনের কভার লাগিয়ে নিতে হবে। ২. ধুলো ঝাড়াঝাড়ি করা চলবে না। ৩. ধোঁয়াযুক্ত বা খুব কড়া গন্ধওয়ালা পরিবেশে থাকা চলবে না। ৩. আলো-হাওয়াযুক্ত, দূষণমুক্ত খোলামেলা পরিবেশ থাকা দরকার। কারণ সেঁতস্যাঁতে জায়গায় ফাঙ্গাল স্পোর অনেক সময় হাঁপানির কারণ হয়। ৪. হাঁপানি রোগীর আশপাশে ধূমপান বর্জনীয় ও মশার কয়েল জ্বালানো যাবে না। ৫. অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্যও হাঁপানি রোগী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে পরিশ্রমের ঝুঁকি নেওয়া উচিত। ৬. হালকা খাওয়া-দাওয়া করা উচিত, যাতে হজমের কোনো অসুবিধা না হয়। কারণ, বদহজম এবং অম্বল থেকেও হাঁপানি হতে পারে। যে খাবারে অ্যালার্জি আছে তা বর্জন করে চলতে হবে। ৭. প্রয়োজনে স্থান ও পেশা পরিবর্তন করতে হবে। শুধু নিয়ম মেনে চললেই এ ধরনের রোগীর শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ভালো থাকেন।
হাঁপানি রোগীর খাদ্য ও পথ্য
অ্যাজমা রোগীর খাবার : কুসুম গরম খাবার, মৌসুমি ফলমূল, ছাগলের দুধ (তেজপাতা, পুদিনা ও কালোজিরাসহ), আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সৈন্ধব লবণ, মধু, স্যুপ, জুস, কালোজিরার তেল, আদা পুদিনার চা।
হাঁপানি রোগীর জন্য যেসব খাবার নিষিদ্ধ
ডিম : ডিমে অ্যালার্জি হাঁপানি রোগীদের জন্য খুব সাধারণ ব্যাপার। ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনই অ্যালার্জির উদ্রেক করে হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
দুধ : দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম যা হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করে তোলে। তবে এতে থাকা প্রোটিন হাঁপানির সমস্যাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।
বাদাম : বাদাম খেলেও হাঁপানির সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যায় বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গম : গমে থাকা গ্লুটেন নামক প্রোটিন হাঁপানিকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে ঠিকভাবে শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়।
চিংড়ি মাছ : চিংড়ি মাছে সালফাইটের পরিমাণ বেশি বলে এটি অনেকেরই অ্যালার্জির কারণ হয়। শ্বাসকষ্টের রোগীদের এমনিতেই মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়। করোনা মহামারির এ সময় এ সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে উদ্বেগ।
হোমিও সমাধান :
হোমিওপ্যাথি মতে, তিনটি রোগ-বীজ হলো সবরকম অসুস্থতার কারণ। সোরা, সাইকোসি, সিফিলিস, সোরা-সাইকোসিস বা সোরা-সাইকোসিস-সিফিলিস মিশ্রভাবে অ্যাজমা রোগের জন্য দায়ী। বর্তমান যুগের এই মিশ্র রোগ-বীজকে অনেকে টিউবারকুলার মায়াজম নামে নামকরণ করে থাকে, এ জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডা. হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে সঠিক রোগী লিপিকরণের মাধ্যমে যদি চিকিৎসা করা যায়, তাহলে অ্যাজমাসহ যে কোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যভিত্তিক লক্ষণ সমষ্টিনির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই। কেননা, একসময় আমরা শুনেছি যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই, বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষ্মা ভালো হয়। এ সবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ রোগীকল্যাণ সোসাইটি
০১৮২২৮৬৯৩৮৯