ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফিস্টুলা কি একটি জটিল রোগ?

ফিস্টুলা কি একটি জটিল রোগ?

ফিস্টুলা রোগকে বাংলায় বহুল প্রচলিত ভগন্দর রোগ বলা হয়। মলদ্বারের ভেতরের সঙ্গে বাইরের নালি তৈরি হওয়াকে বলা হয় ফিস্টুলা। সাধারণত মলদ্বারের পাশের গ্রন্থি (অহধষ মষধহফ) বন্ধ ও সংক্রমিত হয়ে ফোঁড়া হয় এবং ফোঁড়া ফেটে গিয়ে নালি তৈরি করে। মলদ্বারে ফোঁড়া হওয়া রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগ ফিস্টুলা হয়ে থাকে। এছাড়া মলদ্বারের যক্ষ্মা, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ এবং মলদ্বারের ক্যান্সার থেকে ফিস্টুলা হতে পারে। রোগটিতে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

লক্ষণগুলো

সাধারণত মলদ্বারে ব্যথা, মলদ্বারের পাশে ফোলা এবং নিজে থেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ-পানি ঝরা কিংবা ফোঁড়ার জন্য আগের অপারেশনের ইতিহাস নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। পুঁজ-পানি পড়লে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আরাম বোধ করেন এবং কিছুদিনের জন্য রোগী ভালো হয়ে যান। কিন্তু রোগটি দু’তিন মাস সুপ্ত বা নির্জীব থেকে আবার দেখা দিতে পারে।

জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে মলদ্বারের মাংসপেশি বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত হয়। অপারেশনের পর পুনরায় হওয়া ফিস্টুলা, মলদ্বারের যক্ষ্মা, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ এবং মলদ্বারের ক্যান্সার থেকে হওয়া ফিস্টুলা সাধারণত জটিল ফিস্টুলা হয়ে থাকে। অনেক সময় এ ধরনের ফিস্টুলার ক্ষেত্রে বাইরে একাধিক মুখ থাকতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো

বর্তমানে ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত অপারেশন পদ্ধতিগুলো হচ্ছেÑ ফিস্টুলোটোমি, ফিস্টুলেকটোমি, সিটন পদ্ধতি, ফিস্টুলা প্লাগ, ফিব্রিন গ্লু, ফ্ল্যাপ ব্যবহার, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার, স্টেম সেল ব্যবহার, মলদ্বারের মাংসপেশির মাঝখানের নালি বন্ধ করে দেওয়া, এন্ডোস্কোপিক ফিস্টুলা সার্জারি।

চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত অপারেশন। অপারেশন ছাড়া এই রোগ সাধারণত ভালো হয় না। কিন্তু অনেকেই অপারেশনকে ভয় পেয়ে ‘বিনা অপারেশনে চিকিৎসা’ এই নামে হাতুড়ে চিকিৎসক এর চিকিৎসা নিয়ে অনেক ক্ষতি করে ফেলেন। হাতুড়ি চিকিৎসকরা বিনা অপারেশনে চিকিৎসার নামে রোগীর মলদ্বারে এসিড লাগিয়ে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। আর এ ভুলের কারণে আজীবনের জন্য অনেক রোগী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেকের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বিকল্প মলের রাস্তা কেলোস্টমি বানিয়ে দিতে হয়। তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর শরণাপন্ন হবেন। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিবেন একেবারে ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। যতদিন যাবে এ রোগ তত জটিল হতে থাকে। আর যত জটিল হবে অপারেশনের সংখ্যাও তত বেশি হবে।

প্রচলিত চিকিৎসা

১. অপারেশন : এটাই সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি। সারা বিশ্বে এ পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা হয়।

২. লেজারের মাধ্যমে : খুব ছোট ও সহজ ফিস্টুলা হলে এ পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। কিন্ত এই পদ্ধতিতে বিশ্বের নামি-দামি কোনো কোলেরেক্টাল সার্জন অপারেশন করেন না। এই পদ্ধতির ওপর কোনো গবেষণাও নেই। একটু বড় বা জটিল ফিস্টুলা এ পদ্ধতিতে করলে আবার হওয়া সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত কোমরের নিচ থেকে অবশ করে অপারেশন করা হয়। এক দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ফিস্টুলা অপারেশনের পর ঘা শুকাতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে সিটন পদ্ধতিতে দু’তিন ধাপে অপারেশন করা হয়। প্রতিটি ধাপের মাঝে ৭ থেকে ১০ দিন বিরতি দেওয়া হয়। এ সময় নিয়মিত ড্রেসিং করা প্রয়োজন। ড্রেসিং অপারেশনের পর পুনরায় ফিস্টুলা হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ফিস্টুলা অপারেশনের পর আবার হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপারেশনের পর ফিস্টুলা পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা তিন থেকে সাত ভাগ। জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এটি শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। তবে ফিস্টুলা অপারেশনের পর পুনরায় হবে কি-না তা বলা মুশকিল। ফিস্টুলার ধরন, সার্জনের অভিজ্ঞতা এবং সার্জন এমএস ডিগ্রিধারী (মাস্টার্স অব সার্জারি) কি-না তা দেখতে হবে এবং অপারেশনের পরের যতœ বা পরিচর্যার ওপর ফিস্টুলা অপারেশনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসায় ফিস্টুলা ভালো হয়। এই রোগ নিয়ে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা ভালো।

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল

সহযোগী অধ্যাপক

কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ

কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

চেম্বার : ১৯ গ্রীন রোড,

এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা

ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত