অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ডা. মো. কাওসার বিন সিদ্দিক

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার হলো মস্তিষ্কের বিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতা, যার কারণে এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সামাজিক, যোগাযোগ এবং আচরণগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। এএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শেখা, চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা প্রতিভাধর পর্যায় থেকে গুরুতর প্রতিবন্ধিতার পর্যায় পর্যন্ত হতে পারে। এএসডিতে আক্রান্ত অনেক রোগীদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য অন্যের সাহায্য বা তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

এএসডি রোগনির্ণয় এর জন্য এখন অনেক শর্তাবলি রয়েছে, যা পূর্বে আলাদাভাবে নির্ণয় করা হতো। অটিস্টিক ডিসঅর্ডার, পারভ্যাসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার নট আদারওয়াইজ স্পেসিফাইড : পিডিডি-এনওএস, এসপারজার সিনড্রোমণ্ড এ কন্ডিশনগুলো এখন সব অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের মধ্যে ধরা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

এএসসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্রমেই সামাজিক, মানসিক এবং যোগাযোগের দক্ষতায় ঘাটতি থাকে ও তারা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তারা বেশ কিছু আচরণের পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করেন এবং সাধারণত তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের কিছুই পরিবর্তন করতে চান না। এএসডিতে আক্রান্ত রোগীদের শেখার, মনোযোগ দেওয়ার বা কোনো কিছুতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিভিন্ন উপায় আছে। এএসডির লক্ষণ ও উপসর্গগুলো শৈশবকালে শুরু হয় এবং সাধারণত সারাজীবন ধরে বিদ্যমান থাকে।

* চোখাচোখি করতে অপারগ এবং একা থাকতে চান।

* তাদের দিকে কেউ তাকিয়ে হাসলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না।

* তাদের নাম ধরে ডাকলে কোনো উত্তর দেন না।

* কেউ যখন তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তাদের অসচেতন বলে মনে হয়; কিন্তু অন্যান্য শব্দে সাড়া দেন।

* কোনো বস্তুর দিকে তাকান না, যখন অন্য কেউ সেটির প্রতি পয়েন্ট করেন।

* ভাষাগত দক্ষতা খুব ধীরে ধীরে তৈরি হয়।

* সুনির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্য বারবার বলেন।

* আগে বলা শব্দ পরবর্তীতে ভুলে যান।

* অন্য মানুষের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ।

* নিজের অনুভূতি সম্পর্কে বলতে না পারা, অন্যদের অনুভূতি বুঝতে না পারা।

* কোলে উঠা, ধরে রাখা বা আলিঙ্গন না করা পছন্দ করা।

* কীভাবে অন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে বা অন্যদের সঙ্গে মিশতে হবে- তা না জানা।

* রুটিনে কোনো পরিবর্তন আসলে, সেটাতে অভিযোজিত হতে অসুবিধা বোধ করা।

* কোনো খেলনা বা কোনো বস্তুর প্রতি অস্বাভাবিক টান থাকা।

* একই কাজ বারবার করা ইত্যাদি।

বর্তমানে এএসডির কোনো প্রতিকার নেই। কিন্তু গবেষণায় এসেছে, যতদ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা পরিসেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়, শিশুর বিকাশে তা ইতিবাচক ভূমিকা ফেলে। অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি অটিজমে আক্রান্ত রোগীর পুনর্বাসনে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে। পশ্চার, ভারসাম্য ও সমন্বয়, মাংশপেশির শক্তি, প্রাথমিক মোটর স্কিল যেমন : নিজে নিজে বসা, হাঁটা, দৌড়ানো, লাফ দেওয়া, কোনো কিছু ধরা, ছুড়ে মারা, বলকে লাধি মারা ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক কাজ করে থাকেন।

কিছু ফিজিওথেরাপি ইন্টারভেনশন হলো :

১. চলাচলের পরিসীমা বাড়ানোর জন্য প্যাসিভ বা একটিভ এক্সারসাইজ।

২. মাংশপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য একটিভ বা রেজিসটেড এক্সারসাইজ।

৩. ফাংশনাল স্কিল যেমন বিছানা থেকে নামা, এক পাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া।

৪. ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি যা ডিজাইন করা হয়, গ্রস মোটর মাইলেস্টোন প্রতি অগ্রগতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, পাশাপাশি সন্তোষজনক চলাচলের কোয়ালিটি বজায় রাখার জন্য।

৫. অর্থোটিক্স বা কাস্টের ব্যবহার।

৬. প্রসথেটিকক্স এর প্রশিক্ষণ

৭. ব্যথা কমানো ও নিয়ন্ত্রণ এবং অস্থিসন্ধির নমনীয়তা বাড়াতে তাপ, ঠান্ডা, বৈদ্যুতিক কারেন্ট বা ওয়ার্লপুল এর ব্যবহার করা।

৮. একুয়াটিক বা হাইড্রোথেরাপি।

৯. কার্ডিওভাস্কুলার এনডুরেন্স বা সহনশীলতা বাড়াতে এরোবিক এক্সারসাইজ করা।

১০. রেসপিটরি মাসলের জন্য বিভিন্ন ধরণের ব্রিদিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি।

ডা. মো. কাওসার বিন সিদ্দিক

গবেষক ও পরামর্শক- ফেইথ বাংলাদেশ ও ফিজিওকেয়ার

কাশফিয়া রহমান, ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী, সিআরপি, বিএইচপিআই