যেসব কারণে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয় এর মধ্যে ‘মেরুদণ্ডের ব্যথা’ অন্যতম। আর যতগুলো কারণে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়, এরমধ্যে তৃতীয় কারণ হচ্ছে এ রোগ।
মেরুদণ্ডের ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ অনেক দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হতে পারে। আর সেসব বিষয়ে সাবধান থাকলে এ ব্যথার হাত থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকলে :
চেয়ারের ওপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। ফলে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয় যার ফলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
‘এক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তাহলে আর বাঁকা হয়ে বসতে হবে না’, ‘তাছাড়া অনেক মানুষই জানেন না যে, পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না।’
কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া :
কাজ করার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখার কথা অনেকেই ভাবেন না। ব্যস্ত সময়ে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি না নেওয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকা যাবে না।
তবে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়ার অভ্যাস না করলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী জায়গা কম সংকোচিত হবে। তাছাড়া আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে এবং হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অফিসের চেয়ার মেরুদণ্ডের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ বসার সময় মাথা সোজা এবং মেরুদণ্ড চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তাছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝোকা যাবে না।
মানসিক চাপ :
দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও মেরুদণ্ডে ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশি, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।
তাই প্রতিদিন শান্ত বা চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। তাহাড়া গবেষণায় জানা যায় ব্যথা কমাতে গান বেশ কাজ করে। সংগীত হরমোনের চাপ ও পেশির উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
পুরাতন তোশক :
একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা মেরুদণ্ডে ব্যথা হলে পাঁচ থেকে সাত বছরের অধিক পুরোনো তোশক পরিবর্তন করা উচিত। যারা পাঁচ বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করেন তাদের মেরুদন্ডে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে বেশি শক্তও না আবার বেশি নরমও না, এমন তোশক কিনতে বা ব্যবহার করতে হবে। শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস :
যেসব খাবার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং শরীরের ওজন ও রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে সেসব খাবার মেরুদণ্ডের জন্যও উপকারী। গবেষকরা দেখতে পান, যাদের পিঠব্যথা করে তাদের বেশিরভাগেরই ধমনী ও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত।
তবে স্বাভাবিক রক্তচলাচল মেরুদণ্ডে পুষ্টি জুগিয়ে ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করে, এমনটা না হলে, মেরুদণ্ডে প্রদাহ হতে পারে যা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সয়া, বাদাম, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রোটিনজাতীয় খাদ্য যেমন- মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস এবং ফল খেতে বলা হয়।
ভারি ব্যাগ :
কাঁধে প্রতিদিন ভারি ব্যাগ বহন করলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে। কারণ ভারী ব্যাগ কাঁধের ভারসাম্যতা নষ্ট করে ফেলে
এক্ষেত্রে হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া ব্যবহৃত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে কাঁধের ওপর চাপ কম পড়বে।
সঠিক নিয়ম মেনে চলুন মেরুদণ্ডের ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করুন, মনে রাখবেন প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তমপন্থা।
ডা. এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ড ও বিভাগীয় প্রধান
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,
চিফ কনসালটেন্ড ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবা : ০১৭৮৭১০৬৭০২।