কাঁধ একটি হাড় ও বাহুর একটি হাড় নিয়ে গঠিত। এর মাংসপেশি ও লিগামেন্টশোল্ডার জয়েন্টকে শক্তিশালী করে। কাঁধের হাড়ে একটি ক্যাপসুল থাকে ও বাহুর হাড়ে একটি বলের মতো অংশ থাকে যা, ওই ক্যাপসুলের মধ্যে আটকে থাকে। দেখা যায়, জয়েন্ট ঝুলন্ত থাকার কারণে ও দৈনন্দিন জীবনে বেশি ব্যবহার হওয়ার কারণে ইনজুরি হয়ে থাকে বা ঝুঁকিতে থাকে।
কাঁধ ব্যথার কারণ
কাঁধ ব্যথার জন্য যে কোনো রোগের কারণ ছাড়াও মাংসপেশি বা লিগামেন্টস ইনজুরি, হাড় ভেঙে যাওয়া, কখনও বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং স্নায়ুতে চাপ বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এই তিনটি বিষয়কে হাড় ব্যথার মূল কারণ হিসেবে দেখা হয়। এছাড়া আরও কিছু কারণ আছে। নিম্নের ব্যথার কারণগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
আঘাতজনিত কারণে কাঁধ ব্যথা
আঘাতের কারণে মাংসপেশি, লিগামেন্টসে ইনজুরি হতে পারে। কাঁধ বা শোল্ডার জয়েন্টকে ঘিরে রাখে চারটি টেন্ডন বা লিগামেন্টস। এগুলোকে একত্রে বলে রোটেটর কাফ। আঘাতের কারণে এই রোটেটর কাফের যে কোনো লিগামেন্ট ইনজুরি হতে পারে। যদি কাঁধে ইনজুরি হয়, তখন ঠিক হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে, নিয়োমিতভাবে ব্যথার কাঁধ দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলে সেই ইনজুরি থেকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা বা ক্রনিক পেইন হতে পারে। আবার অত্যধিক ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে বা জোরে হাত টানের কারণে শোল্ডার ডিসলোকেশন বা ছুটে যেতে পারে।
কাঁধের হাড় ফেটে যাওয়া
বা ভেঙে গেলে
আঘাতে পেলে অনেক সময় হাড় ভেঙে যায়, তখন প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। আবার অনেক কোনো সময় হাড় ফেটে যাওয়া সুক্ষ ফাটল খেয়াল করা হয় না। ফলো ব্যথাটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় রূপ নিতে পারে। কাঁধের হাড়ের ইনজুরির মধ্যে সাধারণভাবে ক্লাভিকল বা কলার বোন ইনজুরি হয়ে ব্যথা হতে পারে। আবার কাঁধের হাড় বিশেষ করে বাহুর হাড় ফেটে বা ইনজুরিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ইনজুরি হতে পারে। অস্টিও পোরোসিসের কারণে হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমে যাওয়া কাঁধ
ফ্রোজেন শোল্ডার কাঁধের একটি অতিপরিচিত সমস্যা। কাঁধের জয়েন্টে প্রথম দিকে ভেতরের আবরণীতে প্রদাহ হয়ে ব্যথা অনুভূত হয়। দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে কাঁধের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়।
বাইসেপস টেনডিনাইটিস
আমাদের কাঁধে রোটেটর কাফের চারটি মাংশপেশির শেষের অংশ বা টেনডন ঘিরে রাখে। বাইসেপস টেনডন তাদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সামনের দিক থেকে শোল্ডারকে রক্ষা করে। কোনো কারণে এটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে যেমন অত্যধিক ভারী কিছু ওপরে তোলা, বারবার মাথার ওপরের দিকে হাত জোরে জোরে ঘোরানো অথবা সরাসরি কোনো আঘাতে এতে প্রদাহ হয় ও ব্যথা হয়।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস
অস্টিও আর্থাইটসকে কাঁধ ব্যথার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে কাঁধের জয়েন্টের ভেতরের আবরণীতে প্রদাহ হয়। অনেক সময় জয়েন্ট ফুলে গিয়ে বেশি ব্যথা হয়।
কাঁধ ব্যথা পরিত্রাণে অনুশীলনগুলো
যেসব অনুশীলন শোল্ডার বা কাঁধকে ভালো রাখতে পারে বলে মনে করা হয় হলো শোল্ডারকে কয়েকবার সামনের দিকে কয়েকবার পেছনের দিকে ঘুরিয়ে আনা-নেওয়া করুন। এটি ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে চর্চা করতে হবে।
ডান হাতটি সোজা করে বুকের ওপর বরাবর রাখুন। এবার বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কনুই বরবর ধরে বুকের বাম পাশের দিকে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ১০-১৫ সেকেন্ড। এই অনুশীলনটি দুই হাত ব্যবহার করে ৩-৫ বার করতে হবে।
ডান হাত দিয়ে কাঁধকে স্পর্শ করুন। এবার বাম হাত দিয়ে কনুইয়ের পেছন থেকে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ১০-১৫ সেকেন্ড। অপর হাতে বিষয়টি করুন একইভাবে। পুরো পদ্ধতিটি ৩-৫ বার করুন।
ডান হাত উঁচু করে ডান হাত দিয়ে ডান শোল্ডারকে পেছনের অংশ স্পর্শ করুন। এবার বাম হাত দিয়ে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড। এভাবে অপর পাশে করুন।
ডান হাত শোল্ডার ও কনুই বরাবর ৯০ ডিগ্রি কোণে বা সমকোণে রাখুন। এবার বাম হাত দিয়ে বাহু বরাবর ধরে বাম পাশে চাপ দিন একই সঙ্গে ডান হাত ডান দিকে নেওয়ার চেষ্টা করুন, একই সঙ্গে হাত সোজা রাখুন। ৩-৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। অপর হাত দিয়ে একইভাবে করুন। ৩-৫ বার করুন।
দুই হাত পেছনের দিকে নিন। দুই হাতের তালু একত্রিত করুন। এবার দু’হাত সোজা করুন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড।
বাম হাত বাম উরুর নিচে রাখুন। ডান হাত দিয়ে মাথার ওপর দিয়ে কান স্পর্শ করুন। এবার মাথা ও ঘাড়কে ডান পাশে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড। এভাবে বাপ পাশে করুন। পুরো অনুশীলটি ২-৩ বার করুন। এতে শোল্ডার ও নেক স্ট্রেস হবে। মাথায় ও ঘাড়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে।
কখন অনুশীলন বা ব্যয়াম
করবেন না
১. ব্যায়ামের সময় হাতে বা কাঁধে ব্যথা হলে।
২. ফ্রোজেন শোল্ডার অনুভব হলে।
৩. হঠাৎ আঘাত পেলে।
৪. অতিরিক্ত চাপের এক্সারসাইজ করবেন না।
লেখক :
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক
এবং ব্যাবস্থাপনা পরিচালক
খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল
সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর