ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পেটে ব্যথার বিবিধ কারণ ও প্রতিকার

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
পেটে ব্যথার বিবিধ কারণ ও প্রতিকার

মাঝরাতে হঠাৎ কেঁদে ওঠে ঘুমন্ত শিশু। অভিজ্ঞ মা ততদিনে বুঝে গেছেন, ক্ষুধায় পেটে টান পড়েছে সোনা যাদু মণির। ক্ষুধার কারণেই পেটে ব্যথা। কিন্তু সবসময় শিশুর পেটের ব্যথা মানে ক্ষুধার ব্যথা নয়। ভরপেট খাইয়ে দেওয়ার পর যে শিশু কাঁদে তারও পেটে ব্যথা হয়। এ ব্যথা স্তন্যপানের সঙ্গে হাওয়া টেনে নেওয়ার ব্যথা। পিঠে হাল্কা চাপড় দিলেই পেটের হাওয়া বের হয়ে যায়। পেট আর মোড়ায় না, শিশুও কাঁদে না। শিশু একটু বড় হলে পেটে কৃমি সংক্রমণের ব্যথা বোধ করে। নাভির চারপাশে ব্যথায় সে কঁকাতে থাকে। খাবারে কখনও কখনও জীবাণু সংক্রমণ হলে গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের ব্যথা হয়। এ ব্যথায় বমি, জ্বর ও পাতলা পায়খানা হয়। পেটে এসিডিটির তীব্র ব্যথা হলে বমি হয় বা বমি ভাব হয়। তখন এন্টাসিড সিরাপ, ডমপেরিডন ও ওমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবনে সে ব্যথার উপশম হয়। গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর কিংবা জীবাণুর সংক্রমণ হলে পেটের ডান দিকে ব্যথা হয়। যদি পিত্তনালিতে কৃমি আটকে যায় তাও ব্যথা হতে পারে। প্যানক্রিয়াসের প্রদাহে পেটে তীব্র ব্যথা হয়, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি পেট ভাঁজ করে প্রার্থনার ভঙ্গিতে নুয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহে পেটের ডান দিকে ব্যথা হয়। এতে বমি হয়, খাবারে অরুচি হয়, জ্বর হয় সঙ্গে। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় নাভির চারপাশ প্রথমে আক্রান্ত থাকে, যা পরে ডানদিকে তলপেটে গিয়ে তীব্রতা পায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদেরও পেটে ব্যথা হয়। মেন্সট্রুয়েশন কালে অনেক নারীর তলপেটে ব্যথা হয়। যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে, প্রস্রাবের থলিতে সংক্রমণ আছে, তাদেরও তলপেটে তীব্র ব্যথা করে। কিডনিতে পাথর হলে কিংবা ইউরেটার বা মূত্রনালিতে পাথর হলেও পেটে ব্যথা হয়। এ ব্যথা অতি তীব্র।

নারীর জরায়ুতে টিউমার, ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বথলিতে টিউমার বা সিস্ট হলে তলপেটে বা পেটে তীব্র ব্যথা হয়। পাশাপাশি মাসিক স্রাবে তীব্র রক্তক্ষরণ হয়। মূত্রথলিতে টিউমার বা ক্যান্সার হলে কিংবা পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্যান্সার বা বৃদ্ধিতেও তলপেটে ব্যথা হয়। কোনো কারণে পেটে পানি জমলে বা অ্যাসাইটিস হলে পেটে ব্যথা হয়। পেটে গ্যাস্ট্রিক পারফোরেশন হলে বা ডিউডেনাল আলসার বা টাইফয়েড আলসার পারফোরেশন হলে পেটে ব্যথা হয়। পেটে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, পেটের এক্সরে, কিডনি ও মূত্রথলির এক্সরে কিংবা বেরিয়াম মিল এক্সরে বা বেরিয়াম সোয়ালো এক্সরে এর মাধ্যমে সহজেই পেটে ব্যথার কারণ শনাক্ত করা যায়।

ক্ষেত্র বিশেষে পেটে ব্যথায় মুখে খাবার বন্ধ করে দিয়ে নাকে নল দিয়ে সাকশান দিতে হয়। বেশি কষা পায়খানায় এনেমা দিলে মুক্তি পাওয়া যায়। ইউরিন আটকে গিয়ে তলপেটে ব্যথা হলে ক্যাথেটার প্রয়োগে সে ব্যথার উপশম হয়। কৃমির সংক্রমণে কৃমির ওষুধের পাশাপাশি লিকুইড প্যারাফিন খাইয়ে দিলে উপশম হয়। অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন : অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পারফোরেশন, হার্নিয়া, টিউব প্রেগন্যান্সি, গল ব্লাডার স্টোন প্রভৃতি ক্ষেত্রে শৈল্য চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত