ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্রেন টিউমারে করণীয়

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
ব্রেন টিউমারে করণীয়

টিউমার বা ক্যান্সার শুনলেই আমরা আঁৎকে উঠি। খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আগে কারও ক্যান্সার হলে মৃত্যুর প্রহর গুনতেন। এখন কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশ এগিয়েছে অনেক। এখন আমরা বলি ক্যান্সার হলে এনসার নেই, এ কথার ভিত্তি নেই। ক্যান্সার চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে রোগ নির্ণয় করতে হয় শুরুতেই।

কিছু ক্যান্সার আছে শুরুতে চিকিৎসকদের কাছে গেলে সহজেই ধরা পড়ে এবং এগুলো চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয়ের ভূমিকা অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ রোগ নিয়ে সচেতন নয়। তাই রোগকে তারা চেপে রাখেন। যখন রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেন তখন চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু অন্য রোগ চিকিৎসায় ভালো করা গেলেও ক্যান্সার; কিন্তু ভালো করা সম্ভব হয় না। শরীরের এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে ক্যান্সার একবার ছড়িয়ে গেলে চিকিৎসা করা দুরূহ হয়ে যায়। তাই ক্যান্সারকে প্রতিহত করতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

দেহে বিভিন্ন অঙ্গে টিউমার বা ক্যান্সার হতে পারে। মস্তিষ্কেও টিউমার হতে পারে। মস্তিষ্কের টিউমার নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাপী ৮ জুন ‘বিশ্ব ব্রেন টিউমার’ দিবস পালন করা হয়।

টিউমার কী

টিউমার হলো শরীরের কোনো কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যেমন পাকস্থলীর কোষের সংখ্যা যদি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা চাকার মতো বড় হয়ে যায়। একেই বলে পাকস্থলীর ক্যান্সার। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার বা টিউমার হতে পারে।

টিউমার দুই ধরনের। একটি হলো বেনাইন ও অন্যটি মেলিগনেন্ট। বেনাইন টিউমার এত বেশি ক্ষতিকর নয়। এটি চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়। ক্যান্সার বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো মেলিগনেন্ট টিউমার।

মস্তিষ্কের টিউমার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২০ সালে বিশ্বে ৩ লাখ ৮ হাজার ১০২ জন মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় আড়াই লাখ। আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও যতটুকু জানা যায় তাতে ১ হাজার ২৮৪ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১৪৪ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হার আরও বেশি। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে- মস্তিষ্কের ক্যান্সার বা টিউমার কতটা মারাত্মক। তাই আমরা বলি, মস্তিষ্কের মারাত্মক রোগ টিউমার। ভালো দিক হলো মস্তিষ্কে বেনাইন টিউমার বেশি হয়। কিন্তু সমস্যা হলো মস্তিষ্কে যেহেতু জায়গা কম তাই টিউমার প্রভাব ফেলতে পারে সহজেই। মানে হলো লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাড়াতাড়ি। এর সুবিধাও আছে। এর ফলে রোগী দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। তাই রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। মস্তিষ্কে মেটাস্ট্যাসিস হতে পারে তবে তা খুব কম।

কারণ

মস্তিষ্কের টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে। শিশুদের যত ক্যান্সার হয়, তার দ্বিতীয় কারণ এটি। কিন্তু এর কারণ জানা যায় না। তবে কিছু জিনের মিউটেশনে এটি হতে পারে। এ ছাড়া রেডিয়েশনেও হতে পারে টিউমার।

মোবাইল ও মস্তিষ্কের টিউমার

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলি স্কুল অব হেলথ, কোরিয়ান ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার ও সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে ২০০৯ সাল থেকে গবেষণা করে। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক। ২০২১ সালে তাদের প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে টিউমার তৈরির সম্পর্ক আছে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে- যদি ১ হাজার ঘণ্টা বা প্রতিদিন ১৭ মিনিট করে ১০ বছর কথা বলা হয় তাহলে মস্তিষ্কের টিউমারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বাড়ে। তবে এমন বেশ কিছু গবেষণা আছে যেখানে বলা হয়েছে- মোবাইল ফোনে কথা বলার সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক নেই।

লক্ষণ

মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথাব্যথা। তবে মাথাব্যথা হলেই যে মস্তিষ্কের ক্যান্সার তা কিন্তু নয়। মাথাব্যথার যত কারণ আছে তার বেশির ভাগই কিন্তু অন্য। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথাব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। শরীরের একপাশ ধীরে ধীরে অবশ হওয়া, চোখে দেখার সমস্যা, হাঁটতে সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা, কথা বলার সমস্যা, খিঁচুনি, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

টিউমার নির্ণয়ে শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জরুরি মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই। এ ছাড়া আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসা

মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আছে- মেডিকেল চিকিৎসা, সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি।

সার্জারি ব্রেন টিউমারের মূল চিকিৎসা পদ্ধতি। কিছু কিছু টিউমার আছে যেটা মস্তিষ্কের মূল অংশ থেকে আলাদা থাকে। এদের চারদিকে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এমন হলে সার্জারির মাধ্যমে টিউমার পুরোপুরি কেটে ফেলা সম্ভব হয়। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মূল অংশ থেকে টিউমার দেখা দেয়। সে সব ক্ষেত্রে অপারেশন করে পুরো টিউমার কেটে ফেলা যায় না। তখন টিউমার আংশিক কেটে ফেলে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়।

আবার কিছু টিউমার আছে যার পরিমাণ বেশ কম তা শুধু ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে যায়।

অনেকে জানতে চান অপারেশন ছাড়া কি টিউমারের চিকিৎসা নেই? তারা অকারণে অপারেশন করতে দেরি করেন। তাদের বলছি, চিকিৎসক যদি অপারেশন করতে বলেন তাহলে অহেতুক দেরি না করে অপারেশন করাই ভালো।

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু

কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট,

ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক

সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত