প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১১ আগস্ট, ২০২২
কখনও মনে হয় কানে ঝিঁঝিঁ শব্দ হচ্ছে; কখনও মনে হয় ঢাক পেটাচ্ছে। চারদিক নিস্তব্ধ থাকার পরও কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনার এ সমস্যাকে বলা হয় টিনিটাস। বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন এ রোগে আক্রান্ত। পুরুষরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ঝিঁঝিঁ ও ঢাক পেটার শব্দ ছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শোঁ শোঁ শব্দ, ট্রেন চলার শব্দ, ঘণ্টার শব্দ ইত্যাদি শোনেন।
কারণ : কানের তিনটি ভাগ- বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। টিনিটাসের কারণগুলোকে এসব ভাগ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা হয়।
বহিঃকর্ণজনিত সমস্যা : কানে ময়লা বা খইল জমা হলে;
মধ্যকর্ণজনিত সমস্যা : মধ্যকর্ণে পানি জমলে, কানের পর্দা ফেটে গেলে, কান পাকা রোগ হলে, অটোস্কেলেরোসিস অর্থাৎ মধ্যকর্ণের অস্থি নাড়াচাড়া না করলে;
অন্তঃকর্ণজনিত সমস্যা : অন্তঃকর্ণের কোষের সমস্যার কারণে টিনিটাস হতে পারে।
কানের ভেতর ক্ষুদ্র চুলের মতো এক ধরনের কোষ থাকে, যেগুলো শব্দতরঙ্গের সঙ্গে নড়াচড়া করে। এর ফলে শব্দ শুনতে পাই। কোষগুলো যদি ছিঁড়ে যায় বা সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন মস্তিষ্কে অনিয়মিত ও ভুল ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস পৌঁছায়। ফলে কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যায়।
মিনিয়ার্স ডিজিজ, শব্দদূষণজনিত বধিরতা, অন্তঃকর্ণের প্রদাহ, অষ্টম স্নায়ুর টিউমারের রোগীরা টিনিটাসে আক্রান্ত হন। বয়সজনিত সমস্যায় অনেকে কানে শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পান।
কানের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, ফ্রুসেমাইড, অ্যামাইনোগ্লাইকোসাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন সেবন করলে টিনিটাস হতে পারে।
রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেনের সমস্যা, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে, দাঁত ও চোয়ালের সমস্যায়, ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি প্রয়োগেও টিনিটাস হতে পারে ।
চিকিৎসা : টিনিটাসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণের ওপর। টিনিটাসের সম্পূর্ণ নিরাময় না-ও হতে পারে। চিকিৎসকরা এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং আক্রান্তের মানসিক যন্ত্রণা বা অনিদ্রার সমস্যা হ্রাসে ওষুধ ও থেরাপি দিয়ে থাকেন।
কারণের ওপর নির্ভর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা লাগতে পারে। যেমন কানের ময়লা অপসারণ।
শ্রবণসহায়ক যন্ত্র : বয়সজনিত শ্রবণশক্তি হ্রাস বা উচ্চ শব্দের কারণে টিনিটাসের ক্ষেত্রে শ্রবণসহায়ক যন্ত্র উপসর্গগুলোকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
ওষুধ : ওষুধের মাধ্যমে টিনিটাস সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। তবে উপসর্গগুলোর কিছুটা উপশম করতে পারে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে।
কাউন্সেলিং ও থেরাপি : রোগীকে বোঝাতে হবে, এটা জীবনসংহারী সমস্যা নয়। রিলাক্সেজশন থেরাপি বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কমতে পারে। ঘুমানোর কক্ষে টিকটিক শব্দ করে চলা দেওয়ালঘড়ি, টিনিটাস মাস্কিং অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ
রেজিস্ট্রার, নাক কান গলা ও হেড-নেক
সার্জারি বিভাগ, সিলেট এম এ জি
ওসমানী মেডিকেল কলেজ