রাতকানা রোগ কী কেন হয়?

ডা. মো. ছায়েদুল হক

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাতকানা রোগ কী : রাতকানা রোগ বলতে রাতে বা কম আলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম যদিও দিনের বেলায় বা আলোতে তেমন একটা দৃষ্টিসমস্যা থাকে না। এমনটি কেন হয়? আসলে দেখার জন্য আমাদের চোখে একই সঙ্গে দু’টি সিস্টেম বিদ্যমান। দিনের আলোতে দেখার জন্য একটি এবং কম আলো বা অন্ধকারে দেখার জন্য ভিন্নতর একটি সিস্টেম কাজ করে।

দেখার জন্য চোখ আলোর মাধ্যমে বস্তু থেকে প্রাথমিক সঙ্কেত বা সিগন্যাল সংগ্রহ করে ফটোরিসেপ্টর নামক রেটিনার বিশেষ এক ধরনের কোষ। এই ফটোরিসেপ্টর আবার দুই ধরনের। কোণ ফটোরিসেপ্টর এবং রড ফটোরিসেপ্টর। কোণ ফটোরিসেপ্টর দিনের বেলায় বা অধিকতর আলোতে সংবেদনশীল। আর রড ফটোরিসেপ্টর অন্ধকার বা স্বল্প আলোতে সংবেদনশীল। একটি সক্রিয় হলে অন্যটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

দিনের বেলা যখন চোখে আলো আপতিত হয় তখন দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়। একই সময়ে কিছু রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হলেও দ্রুতই এটি সংবেদনশীলতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে তখন একমাত্র কোণ ফটোরিসেপ্টর সক্রিয় থাকে। এমতাবস্থায়, দেখার সব কাজ কোণ ফটোরিসেপ্টরের মাধ্যমে সাধিত হতে থাকে। দিন শেষে বা আলো থেকে যখন আমরা অন্ধকার বা কম আলোতে প্রবেশ করি, তখন উল্টো ঘটনার অবতারণা হয়। এখানে দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর তার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে এবং রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হতে থাকে। ৫-১০ মিনিট সময়ের ব্যবধানে রড ফটোরিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা কোণকে ছাড়িয়ে যায় এবং ১৫-৩০ মিনিটের সময়ের মধ্যে রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে দেখার জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় ডার্ক এডাপ্টেশন বা অন্ধাকারে মানিয়ে নেয়া। রাতের বেলায় গাড়ি চালক গাড়ির ভেতরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসলে অন্ধকারে চোখকে মানিয়ে নিতে তথা রড ফটোরিসেপ্টর সিস্টেমকে সক্রিয় করে থাকে।

এখন যদি কোনো কারণে রড সিস্টেম বা রড ফটোরিসেপ্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রাতের দেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এটিকে বলা হয় রাতকানা বা নিক্টেলোপিয়া।

রাতকানা রোগের কারণ, ভিটামিন এ স্বল্পতা : শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ঘাটতিজনিত কারণে চোখের রড সিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে শিশুর ডায়রিয়াজনিত কারণে হঠাৎ করে ভিটামিন এ ঘাটতি তীব্র হলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। ভিটামিন এ কেম্পেইনের কারণে এ সমস্যার তীব্রতা আগের যেকোনো সমসয়ের চেয়ে কম। তবে এখনো এটি ঝুঁকিমুক্ত নয়।

চোখের রোগ : চোখের এমন কিছু সমস্যা আছে যেগুলোতে রড সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাতকানা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (আরপি); হাই মায়োপিয়া; রেটিনাল ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি।

চিকিৎসা : উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-এ ব্যবহারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রাণিজাত যেমন কলিজা এবং শাকসবজি, গাজর, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান।

সতর্কতা : ধূমপান ও রেটিনো টক্সিক কিছু ওষুধ যেমন হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত), টেমোক্সিফেন (ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত) সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।

উচ্চমাত্রার ভিটামিন-এ বা বিটা কেরোটিন দীর্ঘদিন ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার ধূমপান ও বিটা-কেরোটিন সাপ্লিমেন্ট দীর্ঘদিন একসঙ্গে চলতে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।

ডা. মো. ছায়েদুল হক

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন,

প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক জাতীয়

চক্ষু বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল।