মানুষের সুখ প্রকাশের নানান ধরন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম তার হাসি। হাসির সৌন্দর্য নিয়ে কতশত কবিতা, গল্প ও উপন্যাস রচিত হয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু সচরাচর আমরা নিজেদের এ সুন্দর হাসির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দাঁতের যত্নে অবহেলা করে থাকি। ফলে সঠিক যত্নের অভাবে দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত ও মাড়িতে অসহনীয় ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, পুঁজ জমা হওয়া, দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া, এমনকি দাঁত পড়েও যেতে পারে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, দাঁতের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন খাবার খেয়ে থাকি। তাই সুস্থ, সুন্দর ও মজবুত দাঁতের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্নের অভ্যাস তৈরি করা।
দাঁতের সঠিক যত্নে করণীয়
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা : নিয়মিত দু’বার (সকালে নাস্তার পর ও রাতের খাবারের পর) সঠিক নিয়মে দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। অনেকেরই ধারণা, বেশি বল প্রয়োগ করে ব্রাশ করলে দাঁত ভালো পরিষ্কার হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল।
উপরন্তু এতে দাঁতের বাইরের আবরণ (এনামেল) ক্ষয় হয়ে যায় এবং পরে দাঁতে শিরশির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তাই ব্রাশ করার সময় আলতো করে বৃত্তাকার গতিতে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। খুব শক্ত ব্রাশ মাড়িতে রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে। তাই মাঝারি ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি তিন থেকে পাঁচ মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
মাউথওয়াশ ব্যবহার করা : একজন ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুসারে ফ্লোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা একটি ভালো ঘরোয়া উপায়।
দাঁতের ফ্লস ও জিহ্বার স্ক্র্যাপার ব্যবহার করা : দাঁতের যত্নে ফ্লসিং করা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দাঁতের যেসব স্থান ব্রাশের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না (যেমন, দুই দাঁতের মাঝে), ফ্লসিং দ্বারা তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা যায়। ফলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যাংশ জমে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয় না। দাঁত পরিষ্কারের পাশাপাশি স্ক্র্যাপার দিয়ে জিহ্বাও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা : ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন দুধ পান করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। চিনিযুক্ত ও আঠালো জাতীয় খাবার গ্রহণের পর ভালোভাবে কুলকুচি করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। কোমল পানীয় পান পরিহার করতে হবে। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার- যেমন, লেবু, আমলকি, পেয়ারা,কাঁচা মরিচ, টমেটো ইত্যাদি গ্রহণের অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
বদ অভ্যাস পরিত্যাগ করা : ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, সিগারেটে থাকা নিকোটিনের প্রভাবে দাঁতের ক্ষতি হয়ে থাকে। পান, জর্দা, তামাক খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, যা মুখে ঘা, এমনকি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।
দাঁতের সমস্যা না থাকলেও প্রতি ছয় মাসে একবার দন্তচিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মুখে বারবার কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ঘা হলে অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত কাছের দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই দাঁতের যত্নে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের দাঁতের যত্নের ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
দাঁতের যত্ন নিলে প্রতিটি মানুষের হাসি হয়ে উঠবে তার প্রাণবন্ত জীবনের বহিঃপ্রকাশ এবং দাঁত হবে সুন্দর ও মজবুত।
ফাতেমা বিনতে নূর
ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস)
পঞ্চম বর্ষ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ, ঢাকা