ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মেরুদণ্ডের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

মেরুদণ্ডের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

যেসব কারণে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়, এর মধ্যে ‘মেরুদণ্ডের ব্যথা’ অন্যতম। আর যতগুলো কারণে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে তৃতীয় কারণ হচ্ছে এ রোগ।

মেরুদ-ের ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ অনেক দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হতে পারে। আর ওইসব বিষয়ে সাবধান থাকলে এ ব্যথার হাত থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।

দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকলে :

চেয়ারের ওপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। ফলে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয় যার ফলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়।

‘এক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তাহলে আর বাঁকা হয়ে বসতে হবে না’, ‘তাছাড়া অনেক মানুষই জানেন না যে, পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না।’

কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া :

কাজ করার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখার কথা অনেকেই ভাবেন না। ব্যস্ত সময়ে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি না নেওয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকা যাবে না।

তবে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়ার অভ্যাস না করলে মেরুদ-ে ব্যথা হতে পারে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে কাজ করলে মেরুদ-ের মধ্যবর্তী জায়গা কম সংকোচিত হবে। এছাড়া আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে এবং হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অফিসের চেয়ার মেরুদ-ের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ, বসার সময় মাথা সোজা এবং মেরুদ- চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। এছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝোকা যাবে না।

মানসিক চাপ :

দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও মেরুদ-ে ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশি, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।

তাই প্রতিদিন শান্ত বা চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। এহাড়া গবেষণায় জানা যায়, ব্যথা কমাতে গান বেশ কাজ করে। সংগীত হরমোনের চাপ ও পেশির উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।

পুরোনো তোশক :

একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা মেরুদ-ে ব্যথা হলে ৫ থেকে ৭ বছরের অধিক পুরোনো তোশক পরিবর্তন করা উচিত। যারা ৫ বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করেন, তাদের মেরুদ-ে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে বেশি শক্তও না আবার বেশি নরমও না, এমন তোশক কিনতে বা ব্যবহার করতে হবে। শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদ-ে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস :

যেসব খাবার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং শরীরের ওজন ও রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে সেসব খাবার মেরুদ-ের জন্যও উপকারী। গবেষকরা দেখতে পান, যাদের পিঠব্যথা করে তাদের বেশিরভাগেরই ধমনী ও মেরুদ- ক্ষতিগ্রস্ত।

তবে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল মেরুদ-ে পুষ্টি জুগিয়ে ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করে, এমনটা না হলে, মেরুদ-ে প্রদাহ হতে পারে, যা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সয়া, বাদাম, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমনÑ মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস এবং ফল খেতে বলা হয়।

ভারি ব্যাগ :

কাঁধে প্রতিদিন ভারি ব্যাগ বহন করলে মেরুদ-ে ব্যথা হতে পারে। কারণ ভারি ব্যাগ কাঁধের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে

এ ক্ষেত্রে হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ব্যবহৃত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে কাঁধের ওপর চাপ কম পড়বে।

সঠিক নিয়ম মেনে চলুন মেরুদ-ের ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করুন, মনে রাখবেন প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তমপন্থা।

ডা. এম ইয়াছিন আলী

বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান

প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,

চিফ কনসালটেন্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবা : ০১৭৮৭১০৬৭০২।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত