ইসতিগফারের ১০ উপকারিতা

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসতিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় ইসতিগফার মানে নিজের পাপরাশি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে মাগফিরাত বা ক্ষমা চাওয়া এবং নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা। ইসতিগফার আল্লাহতায়ালার কাছে খুব পছন্দের আমল। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইসতিগফারের পথে হাঁটার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাপিত জীবনে ইসতিগফারের সৌরভে সুরভিত হতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও পরম মমতায় ইসতিগফারের সৌন্দর্য নিজের মাঝে ধারণ করতেন। সাহাবিদেরও ইসতিগফারের কথা বলতেন।

কোরআনের ভাষায় ইসতিগফারের ৫টি উপকারিতা

উত্তম জীবন উপভোগ : আমরা সবাই উত্তম জীবন উপভোগ করতে চাই। এই উত্তম জীবন উপভোগের অনন্য মাধ্যম হচ্ছে ইসতিগফার। ইরশাদ হয়েছে, (কোরআন নির্দেশনা দেয় যে,) ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইসতিগফার তথা গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও। তিনি তোমাদের এক নির্ধারিতকাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং যে বেশি আমল করবে, তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশি প্রতিদান দেবেন। আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিবসে শাস্তির আশঙ্কা করি। (সুরা হুদ : ৩)।

আজাব থেকে মুক্তি : সব ধরনের আজাব-গজব থেকে বাঁচতে পারা মানবমাত্রই আকাঙ্ক্ষার বিষয়। সেই আজাব-গজব থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হলো ইসতিগফার। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী,) আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইসতিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদের শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল : ৩৩)।

ধনসম্পদে সমৃদ্ধি, সন্তানপ্রাপ্তি ও ফসল-ফলাদিতে উন্নতি : ইসতিগফারের সুফল হিসেবে উপরোক্ত তিনটি পুরস্কারের ঘোষণা আল্লাহতায়ালা একই সুরায় ধারাবাহিক তিনটি আয়াতে প্রদান করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২)।

হাদিসের ভাষায় ইসতিগফারের ৫টি উপকারিতা

সুসংবাদ প্রাপ্তি : যারা ইসতিগফার করে তাদের আমলনামা সমৃদ্ধ হয়। আর ইসতিগফারের মাধ্যমে যাদের আমলনামা সমৃদ্ধ তাদের জন্য সুসংবাদের ঘোষণা। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের আমলনামায় প্রচুর পরিমাণে ইসতিগফার পাওয়া যাবে তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৮১৮)।

একটি অভ্যাসের সঙ্গে সাদৃশ্যতা : ইসতিগফার আল্লাহতায়ালার প্রিয় আমল। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রচুর পরিমাণে ইসতিগফার করতেন। অন্যদেরও ইসতিগফারের নির্দেশনা দিতেন। আগার বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তারই কাছে ইসতিগফার করো। জেনে রেখো, আমি প্রতিদিন একশোবার আল্লাহর কাছে তাওবা ইসতিগফার করি।’ (মুসলিম : ২৭০২)। এভাবে ইসতিগফারের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি পবিত্র অভ্যাসের সাথে সাদৃশ্যতা তৈরি হয়। আর যে যার সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে তারই দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে যার সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে তারই দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৩১)।

বিপন্মুক্তি, দুশ্চিন্তাহীন জীবন ও অকল্পনীয় রিজিক : আমরা সবাই সংকটমুক্ত জীবন চাই। চাই ডিপ্রেশন থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতে। আর নিরাপদ অকল্পনীয় রিজিক পেলে এক জীবনে আর কিইবা দরকার। এই তিনটি কাঙ্ক্ষিত বস্তু পাওয়ার সহজ উপায় হলো ধারাবাহিকভাবে ইসতিগফার করে যাওয়া। ইসতিগফারকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ : ১৫১৮)।

লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী