মোমিনের পরিচয় ও গুণাবলি
ফাহাদ আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ঈমান অর্থ বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদি। তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মুমিন বলা হয়। ইসলাম অর্থ আনুগত্য, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ইত্যাদি। মুসলিম মানে আনুগত্যশীল বা অনুগত ব্যক্তি- যিনি নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন।
মোমিন এবং মুসলিম জন্মগত ও বংশীয় কোনো পরিচয় নয়; এটি বিশ্বাস ও কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। কোরআন এবং হাদিসে বহু জায়গায় প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও সফল মোমিনের গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
ঈমান, ইয়াকিন, ইখলাস, তাকওয়া, তাজকিয়া ও ইহসান অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ মোমিন হয়। কোরআনের শুরুতেই বিবৃত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মিম! এই সেই মহাগ্রন্থ, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপনার আগে যেসব কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতিও, আর তারা পরকালে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এরা এদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে, আর এরাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা : ১-৫)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মোমিনরা সফল হয়েছে। যারা তাদের নামাজে মনোযোগী। যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাত আদায়কারী। যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী। নিজেদের স্ত্রী ও যেসব দাসী তাদের মালিকানাধীন তারা ছাড়া, কেননা, তারা নিন্দিত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সুরা মোমিনুন : ১-৬)।
একই সুরায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা নিজেদের আমানত ও চুক্তিগুলো পূর্ণ করে। যারা নিজেদের নামাজে যত্নবান (নিয়মিত নামাজ আদায় করে এবং অন্যকে আদায়ের উপদেশ দেয়)। তারাই উত্তরাধিকারী লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা মোমিনুন : ৮-১১)।
তাকওয়া, পবিত্রতা, সততা, সত্যবাদিতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবনযাপনই সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সফল হলো তারা যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল, আর ব্যর্থ হলো তারা যারা নিজেকে কলুষিত করল।’ (সুরা শামস : ৯-১০)। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সাবধান, একমাত্র বিশুদ্ধ ধর্মকর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।’ (সুরা জুমার : ৩)।
তাকওয়া বা পরহেজগারি বলতে বেশি আমল করাকে বোঝায় না; বরং বদ আমল বা মন্দ কাজ পরিহার করে চলাই হলো তাকওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।’ (বোখারি : ৪৮)।
ঈমানের বিশুদ্ধতা আমলের বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল আর আমলের বিশুদ্ধতা নিয়ত বা অভিপ্রায়ের বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা তার জন্য নির্দিষ্ট। সুতরাং যার অভিবাসন আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য হবে, তার অভিবাসন আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য হবে। আর যার অভিবাসন হবে দুনিয়া অর্জন অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার জন্য হবে, তার অভিবাসন সেই উদ্দেশ্যের জন্য নির্দিষ্ট হবে।’ (বোখারি : ১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তুমি তোমার দ্বীনের প্রতি আন্তরিক হও, সামান্য কাজই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৯১৪)।
ঈমান হলো- আন্তরিক বিশ্বাসের প্রতিফলন, আর যিনি কাজে-কর্মে এ বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান তাকে মোমিন বলা হয়। একমাত্র চিত্তের বিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমেই সফলতা তথা ইহজাগতিক শান্তি ও পরজগতে মুক্তিলাভ সম্ভব। এজন্য ধর্মীয় অনুশীলন, বিধিবিধান পালন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত মোমিন হওয়ার তওফিক দান করুন।
