আল্লাহর ৯৯ নাম ও তার ফজিলত
ফারহান রহমান
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মানুষ তার রবকে যত বেশি চেনে, তার ইমান তত দৃঢ় হয়, ভালোবাসা তত গভীর হয়, আমল তত নিখুঁত হয়। আল্লাহর পরিচয় জানার সর্বোত্তম উপায় হলো তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলি জানা। কোরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহরই সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামগুলোর মাধ্যমে ডাকো।’ (সুরা আরাফ : ১৮০)। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। যে এগুলো মুখস্থ করে, বুঝে ও আমল করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বোখারি : ২৭৩৬)। এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর নামগুলো জানা, সেগুলো দিয়ে দোয়া করা ও জীবনে প্রয়োগ করা হলো ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আল্লাহর ৯৯ নামের তালিকা
১. আল্লাহ- উপাসনার একমাত্র যোগ্য, ২. আর-রহমান- অসীম দয়ালু, ৩. আর-রহিম- পরম করুণাময়, ৪. আল-মালিক- জগতের একচ্ছত্র মালিক, ৫. আল-কুদ্দুস- পরম পবিত্র, ৬. আস-সালাম- শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস, ৭. আল-মুমিন- নিরাপত্তা দানকারী, ৮. আল-মুহাইমিন- অভিভাবক ও রক্ষক, ৯. আল-আজিজ- পরাক্রমশালী, ১০. আল-জাব্বার- ইচ্ছামতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণকারী, ১১. আল-মুতাকাব্বির- মহিমাময়, ১২. আল-খালিক- স্রষ্টা, ১৩. আল-বারি- নিখুঁতভাবে সৃষ্টিকারী, ১৪. আল-মুসাওয়ির- আকৃতি দানকারী, ১৫. আল-গফ্ফার- অপরাধ ক্ষমাকারী, ১৬. আল-কাহহার- প্রভাবশালী, ১৭. আল-ওয়াহ্?হাব- সীমাহীন দানশীল, ১৮. আর-রাজজাক- রিজিকদাতা, ১৯. আল-ফাত্তাহ- উন্মোচনকারী, ২০. আল-আলিম- সর্বজ্ঞ, ২১. আল-কাবিদ- সংযমকারী, ২২. আল-বাসিত- প্রাচুর্যদানকারী, ২৩. আল-খাফিদ- মর্যাদা হ্রাসকারী, ২৪. আর-রাফি- মর্যাদা উন্নীতকারী, ২৫. আল-মুইজ্জ- সম্মান দানকারী, ২৬. আল-মুজিল্ল- অপমান দানকারী, ২৭. আস-সামি- সর্বশ্রোতা, ২৮. আল-বাসির- সর্বদ্রষ্টা, ২৯. আল-হাকাম- বিচারক, ৩০. আল-আদল- ন্যায়পরায়ণ, ৩১. আল-লতিফ- সূক্ষ্মদর্শী ও সদয়, ৩২. আল-খবির- সব বিষয়ে অবহিত, ৩৩. আল-হালিম- সহনশীল, ৩৪. আল-আজিম- মহান, ৩৫. আল-গফুর- ক্ষমাশীল, ৩৬. আশ-শাকুর- কৃতজ্ঞতা গ্রহণকারী, ৩৭. আল-আলি- সর্বোচ্চ, ৩৮. আল-কবির- মহত্তম, ৩৯. আল-হাফিজ- সংরক্ষণকারী, ৪০. আল-মুকিত- জীবিকার যোগানদাতা, ৪১. আল-হাসিব- হিসাব গ্রহণকারী, ৪২. আল-জলিল- গৌরবময়, ৪৩. আল-করিম- উদারদাতা, ৪৪. আর-রকিব- তত্ত্বাবধায়ক, ৪৫. আল-মুজিব- সাড়া দানকারী, ৪৬. আল-ওয়াসি- সীমাহীন, ৪৭. আল-হাকিম- প্রজ্ঞাময়, ৪৮. আল-ওয়াদুদ- প্রেমময়, ৪৯. আল-মাজিদ- মহিমান্বিত, ৫০. আল-বাস- পুনরুত্থানকারী, ৫১. আশ-শাহিদ- সাক্ষী, ৫২. আল-হাক্ক- পরম সত্য, ৫৩. আল-ওকিল- ভরসাযোগ্য, ৫৪. আল-কাওই- শক্তিশালী, ৫৫. আল-মাতিন- দৃঢ়শক্তিধর, ৫৬. আল-ওয়ালি- সাহায্যকারী অভিভাবক, ৫৭. আল-হামিদ- প্রশংসার অধিকারী, ৫৮. আল-মুহসি- গণনাকারী, ৫৯. আল-মুবদি- সৃষ্টির সূচনা দানকারী, ৬০. আল-মুইদ- পুনরায় সৃষ্টি দানকারী, ৬১. আল-মুহই- জীবনদাতা, ৬২. আল-মুমিত- মৃত্যুদাতা, ৬৩. আল-হাইয়ু- চিরঞ্জীব, ৬৪. আল-কাইয়ুম- ধারক ও পালনকর্তা, ৬৫. আল-ওয়াজিদ- সন্ধানকারী, ৬৬. আল-মাজিদ- মহিমান্বিত, ৬৭. আল-ওয়াহিদ- একক, ৬৮. আস-সামাদ- অমুখাপেক্ষী, ৬৯. আল-কাদির- সর্বশক্তিমান, ৭০. আল-মুকতাদির- নিয়ন্ত্রণকারী, ৭১. আল-মুকাদ্দিম- অগ্রগামীকারী, ৭২. আল-মুআখখির- পশ্চাদপসারক, ৭৩. আল-আউয়াল- সবার আগে, ৭৪. আল-আখির- সবার পরে, ৭৫. আজ-জাহির- প্রকাশ্য, ৭৬. আল-বাতিন- অদৃশ্য, ৭৭. আল-ওয়ালি- অভিভাবক, ৭৮. আল-মুতাআলি- মর্যাদাবান, ৭৯. আল-বা?রর- কল্যাণকারী, ৮০. আত-তাওয়াব- তওবা গ্রহণকারী, ৮১. আল-মুনতাকিম- প্রতিশোধ গ্রহণকারী, ৮২. আল-আফু- ক্ষমাশীল, ৮৩. আর-রউফ- দয়ালু, ৮৪. মালিকুল মুলক- সবকিছুর মালিক, ৮৫. জুল জালালি ওয়াল ইকরাম- মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, ৮৬. আল-মুকসিত- ন্যায়বিচারকারী, ৮৭. আল-জামি- একত্রকারী, ৮৮. আল-গানি- অমুখাপেক্ষী, ৮৯. আল-মুগনি- সম্পদদাতা, ৯০. আল-মানি- বাধাদানকারী, ৯১. আদণ্ডদার- ক্ষতিসাধনকারী, ৯২. আন-নাফি- উপকার দানকারী, ৯৩. আন-নুর- আলো, ৯৪. আল-হাদি- পথপ্রদর্শক, ৯৫. আল-বাদি- অভিনব স্রষ্টা, ৯৬. আল-বাকি- চিরস্থায়ী, ৯৭. আল-ওয়ারিস- উত্তরাধিকারী, ৯৮. আর-রশিদ - দিশাদাতা, ৯৯. আস-সবুর- ধৈর্যশীল।
আল্লাহর নামের ফজিলত
আল্লাহর নাম দ্বারা দোয়া কবুল হয় : ‘সবচেয়ে সুন্দর নাম আল্লাহরই। তাই সে নামগুলো দিয়ে তাঁকে ডাকো।’ (সুরা আরাফ : ১৮০)।আল্লাহর নাম মুখস্থ ও বোঝা জান্নাতের পথ : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস্থ রাখবে ও বুঝবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম : ২৬৭৭)।
আল্লাহর নাম জীবনে প্রভাব ফেলে : ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নামগুলো শুধু মুখস্থ রাখার জন্য নয়, বরং সেগুলো মানুষকে আল্লাহর মহিমা ও গুণাবলির প্রতি জাগ্রত করে।’ (ইবনুল কাইয়িম, আল-নুনিয়া, ২/৯১, দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০০৫)। আল্লাহর সুন্দর নামগুলো হলো ইমানের রশ্মি, হৃদয়ের প্রশান্তি এবং দোয়ার চাবিকাঠি।
মুসলমানের উচিত এই নামগুলো মুখস্থ করা, দোয়া-ইবাদতে ব্যবহার করা এবং জীবনে প্রতিফলিত করা। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর নামগুলো জানবে ও মানবে, তার ইমান হবে দৃঢ়, আমল হবে খাঁটি, আর জীবন হবে প্রশান্তির।
