এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই
ভাঙা হৃদয় নিয়ে হংকংয়ে হামজারা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করেও হংকং, চায়নার বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ দিকে যখন চার প্রবাসী ফুটবলার যখন মাঠে নামেন তখন আশাটা জোরালো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরও একটি হতাশাজনক পরাজয় সঙ্গী হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। এই হারের ফলে কাগজে-কলমে টিকে থাকা সমীকরণ মিলিয়ে এশিয়ান কাপের বাছাই উৎরানো এখন বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিন। তবে এখনই আশা ছাড়তে রাজী নন জামাল ভূঁইয়ারা। পরের ম্যাচ খেলতে হংকং চায়নার উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে ঝরল প্রায় অসম্ভব বৈতরণীই পার হওয়ার আশাবাদ। বাছাইয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় স্টেডিয়ামে ৭ গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
১ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের টেবিলে তলানিতে নেমে গেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে হংকং। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। তৃতীয় স্থানে আছে ভারত, ২ পয়েন্ট নিয়ে। গ্রুপ সেরা হতে বাকি তিন ম্যাচেই এখন জিততে হবে বাংলাদেশকে। এই তিন পরীক্ষার প্রথমটি আগামী মঙ্গলবার হংকংয়ের মাঠে। গতকাল শুক্রবার দেশটির পথে রওনা হওয়ার আগে জামাল ভূঁইয়া বলেন, হাল ছাড়বেন না তারা। তবে লক্ষ্য পূরণে সবশেষ ম্যাচের মতো শেষ মুহূর্তে খেই হারানোর ধারা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে, নিজেদেরকেই যেন মনে করিয়ে দিলেন তিনি। ‘এই দলের একটা ইতিহাস আছে-আমরা শেষ মুহূর্তে গোল হজম করি। এই ম্যাচের আগে আমরা আলাপ করেছি, আমাদের পুরো ম্যাচে মনোযোগী থাকতে হবে। সংবাদ সম্মেলনেও বলেছি, আমরা যদি জিততে চাই বা পয়েন্ট নিতে চাই, আমাদের পুরো ম্যাচে মনোযোগী থাকতে হবে, কিন্তু আমরা পারিনি।’
লাল সবুজ দলের এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘আমাদের হাতে তিন ম্যাচ আছে। তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। এক পয়েন্ট হারালেই আমাদের বিদায়। জেতা সম্ভব হবে না কেন? সমর্থকদের ধন্যবাদ। (হংকংয়ের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে) ৩ পয়েন্ট পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। ইনশাল্লাহ এবার আমরা কিছু দিতে পারব।’ হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম লেগের ম্যাচে সেরা একাদশে ছিলেন না জামাল। সামিত সোম, ফাহামিদুল ইসলাম, জায়ান আহমেদণ্ডএই তিন প্রবাসীকেও বেঞ্চে রেখেছিলেন কোচ কাবরেরা। দ্বিতীয়ার্ধে এই চার প্রবাসী বদলি নামলে বাংলাদেশের খেলার গতি বাড়ে। শেষ দিকে শোমিতের গোলে সমতায়ও ফিরে দল। কিন্তু অন্তিম সময়ে ফের গোল হজম করে হারে বাংলাদেশ। এই চার জনের শুরুর একাদশে না থাকা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন কাবরেরা। দ্বিতীয়ার্ধের ভাবনায় তাদের বদলি নামানোর পরিকল্পনার কথা বলেন কোচ।
হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি লেগে শুরুর একাদশে খেলার সুযোগ চান জামাল। ‘আমি, শমিত, ফাহামিদুল, জায়ান যখন একসঙ্গে ওয়ার্মণ্ডআপ শুরু করেছি, তখন ওদেরকে বলেছি আমরা যখন নামব, তখন ম্যাচের গতিপথ বদলাতে হবে। আমাদের চারজনের ইমপ্যাক্ট ভালো ছিল। চারজনই শুরুর একাদশে খেলতে চাই। আমি তো সব ম্যাচ খেলতে চাই, কিন্তু দিনশেষে কারা খেলবে এটা কোচের সিদ্ধান্ত।’
এদিকে গতকাল বাংলাদেশের ফ্লাইট ছিল দুপুর দেড়টায়। ফ্লাইট ছাড়ার দেড় ঘণ্টা আগে ফাহমিদুল তার পাসপোর্ট পেয়েছেন। দলের সবার ভিসা হলেও ফাহমিদুলের পাসপোর্ট চাইনিজ দূতাবাসে ছিল। কারণ ফাহমিদুল ইতালি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার পর ফেডারেশন তার পাসপোর্ট ভিসার জন্য জমা দিয়েছে। তাই ফাহমিদুলের ভিসা পেতে খানিকটা বিলম্ব। হামজা, সামিত ও জায়ান আহমেদের যথাক্রমে ইংল্যান্ড, কানাডা ও আমেরকিার পাসপোর্ট থাকায় তাদের হংকংয়ের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়নি। ফাহমিদুলের ইতালির পাসপোর্ট নেই শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকায় তার ভিসার প্রয়োজন ছিল। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ঘণ্টা খানেক আগে বোর্ডিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। বাংলাদেশ টিমের সবাই পাসপোর্ট নিয়ে এয়ারপোর্ট রওনা হয়েছিলেন শুধু ফাহমিদুল ছাড়া। তার পাসপোর্ট তখনও চীনা দূতাবাসে। শুক্রবার ছুটির দিনও চীনা দূতাবাস বাংলাদেশের ফুটবলারকে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। বাফুফে স্টাফ সাড়ে এগারোটায় ফাহমিদুলের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বারোটার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছান। ব্যাংককে যাত্রা বিরতি দিয়ে বাংলাদেশ দল হংকং সময় রাত দশটায় পৌঁছায়।
আজ থেকেই মাঠে অনুশীলন শুরু করবেন হামজারা। ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী স্বাগতিক দেশ ৪৮ ঘণ্টা আগে সফরকারীদের অনুশীলন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানে বাধ্য না। ভারতে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ বিড়ম্বনায় পড়েছিল।
হংকংয়ের জন্য দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশের ম্যানেজার আমের খানের মন্তব্য, ‘স্বাগতিক দল তো কিছু সুবিধা নেবেই। হংকং যেমন দাবি করেছে আমরা নাকি রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করেছি। যেটা ম্যাচ কমিশনার মিটিং ছিল সেখানে এটা ভেঙে দেয়া হয়েছে যে ছোট শহর এ রকম জ্যাম আমাদের নিয়মিতই হয়।’ হংকংয়ের ঢাকা থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটেই যাওয়ার কথা থাকলেও তারা গতকাল রাতে চাটার্ড ফ্লাইটে দেশে রওনা হয়।
