ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সীতাকুণ্ডে নিজেই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসে তোলপাড় সৃষ্টি করল বানর

সীতাকুণ্ডে নিজেই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসে তোলপাড় সৃষ্টি করল বানর

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে তোলপাড় সৃষ্টি করা সেই বানরটিকে অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিভাসুতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের উদ্যোগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা থেকে বানরটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু।

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ের একটি বানর সীতাকুণ্ডের পৌর সদর বাজার, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে বানরটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠলে বৈদ্যুতিক তারের সাথে শর্ট সার্কিটে মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা ও মাথায় পানি ঢাললে বানরটি কিছুটা সুস্থ হয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। কয়েকদিন পরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে সৃষ্ট ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করে। শরীরের অতিরিক্ত ব্যথা নিয়ে বানরটি গত শনিবার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হয় এবং বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হয়। তাৎক্ষণিক তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে নিয়ে বানরটির চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। কিন্তু পরদিন (রবিবার) বিকালে বানরটি আবারো স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সামনে এসে বসে থাকে। বানরটি দেখে তিনি পুনরায় বানরটির ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করে ঔষুধ প্রদান শেষে ব্যান্ডেজ করে দেন। এসময় বানরটি চুপচাপ বসে চিকিৎসা গ্রহন করেছিলো। চিকিৎসা শেষে সেটি বাগানের গাছে ফিরে যায়। কিন্তু সোমবার সকালে বানরটি আবারো হাসপাতালে আসে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বানরটির পূর্বের ব্যান্ডেজ খুলে পুনরায় ড্রেসিং করে দেন। এদিকে একটি বানর প্রতিদিন হাসপাতালে আসার এই খবর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বারবার বন বিভাগ ও প্রাণী সম্পদ কার্যালয়কে জানাতে থাকলে সোমবার সকালে চিকিৎসা শেষে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে যান ঐ বিভাগের কর্মকর্তা প্রিয়ঙ্কা চৌধুরী। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ উপস্থিত হয়ে বানরটিকে কৌতহূল ভরে দেখেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বানরটি অসচেতন জনতার ধাওয়া খেয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে গুরুতর আহত হয়। বানরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ক্ষত হয়। এই ক্ষত নিয়ে সেটি প্রতিদিন হাসপাতালে আসতে থাকে। প্রথম দিন আমরা এটিকে সামান্য কিছু ঔষুধ দিই। তাতে বানরটি চলে গেলেও পরদিন রবিবার বিকালে সেটি আবারো আমার কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। এসময় আমি সেটির ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ ও ঔষুধ দেবার পাশাপাশি বন বিভাগ ও প্রাণী সম্পদ কার্যালয়কে খবর দিই। কিন্তু দু’দিনেও তাদের কোন সাড়া পাইনি। সোমবার সকাল ৯টার দিকে বানরটি আবারো আমার কার্যালয়ের কাছাকাছি চিকিৎসা নিতে আসলে আমি পূর্বের ব্যান্ডেজ খুলে আবারো ড্রেসিং করে ঔষুধ দিয়েছি। অবশ্য এরপর প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসে বানরটিকে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, বানরের উপযুক্ত চিকিৎসা হবে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে। তাদের সেবায় বানরটি আরো ভালোভাবে চিকিৎসা পেয়ে দ্রত সুস্থ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু বলেন, বানরটির শরীরে যে ক্ষত তাতে সামান্য ড্রেসিং আর ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা এটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিটাগাং ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেছি। সোমবার রাত থেকে সেখানে চিকিৎসকদের তত্বাবধানে এটির উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আশা করি চিকিৎসায় এটি দ্রুত সুস্থ হবে উঠবে।

সীতাকুণ্ড,বানর,তোলপাড়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত