রংপুরের গঙ্গাচড়া সড়ক সেতুর পয়েন্টে সোমবার দুপুরে এক জনসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত প্রয়োজনের সময় তিস্তা নদীর পানি দেয় না, বরং যখন প্রয়োজন থাকে না, তখন অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে নদীপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে।
তিনি বলেন, “তিস্তা পারের মানুষের দুঃখ কখনো শেষ হয় না। খরা মৌসুমে ভারত পানি দেয় না, আর বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে বন্যার সৃষ্টি করে। অথচ আ.লীগ সরকার এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তিস্তা নয়, অন্যান্য নদীগুলোর পানির সুরক্ষায়ও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিনি আ.লীগ সরকারকে “ফ্যাসিবাদী” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। অথচ সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে।”
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা এই কর্মসূচি শুরু করেছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি আন্দোলনে যুক্ত হন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অন্যান্য নেতারা বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “প্রতিবছর তিস্তা অববাহিকার দুই পাড়ে বিশ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়, ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।”
তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির জন্য ১১টি পয়েন্টে বাঁশের খুঁটিতে সামিয়ানা টানিয়ে তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানুষরা সেখানেই রাত যাপন করছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কর্মসূচি ব্যাপক প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে এ কর্মসূচি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আরও বর্ণিল হয়ে উঠেছে। নাচ-গান ও নাটিকার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে।