ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুড়িগ্রামে পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ির চাষ

কুড়িগ্রামে পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ির চাষ

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষীরা। এতে করে মাছ চাষে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এই পিছিয়ে পড়া জেলার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকায় পল্লব চন্দ্র রায়ের ৪০ শতকের একটি পুকুরে জাল টানছে জেলেরা। পুকুর পাড়ে জালে ধরা মাছ আনতেই স্থানীয়রা অবাক বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি দেখে! মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ কিছুটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই বিষয়!

প্রায় ৭ মাস আগে পিএল সাইজের ৬শ পিস গলদা চিংড়ি ছাড়া হয় পুকুরে। জেলায় প্রথমবারের মতো কার্প, পাঙ্গাস, সিলভার কার্পসহ দেশীয় জাতের মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক লাভও পাওয়া যাচ্ছে। জেলার মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা দেখে খুশি স্থানীয়রাও।

বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় প্রথমবারের মতো দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছে মৎস্যচাষিরা। এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৎস্য চাষীরা লাভবান হবেন এবং কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

মৎস্যচাষি পল্লব চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি কেজিতে ৮/১০টি করে গলদা চিংড়ি উঠছে। বর্তমান ১২শ টাকা কেজি বাজার দরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন তিনি। এই মাছ চাষে মাছের খাবারসহ পুকুর প্রস্তুতকরণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো হয়েছে। এক খরচে বাড়তি দেশীয় মাছ বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে জানান এই মৎস্যচাষি।

মাধবী রাণী বলেন,বাজারে গলদা চিংড়ি মাছের দাম বেশি। গরিব মানুষের সার্মথ্যের বাইরে এই মাছ। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে করে এই মাছ খাওয়া এখন স্বপ্ন দেখার মতো। এখন নিজের পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে বাড়তি খরচ না করেই গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সাইজেও বড়, খেতেও সুস্বাদু।

স্থানীয় মৎস্যচাষিরা বলেন, দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ হয় এটা আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু পল্লব রায়ের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ দেখে অবাক হয়েছি। সামনে আমার নিজের পুকুরেও এই মাছ চাষ করব।

স্বপ্না রাণী বলেন, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আমাদের গ্রামে আরও অনেক পুকুর আছে সেখানে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।

আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলার ১০ জন চাষির প্রায় চার একর পুকুরে ছয় হাজার পিস গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ এই জেলায়। তাই গলদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। আগামীতে আমরা গলদা চিংড়ি চাষে প্রসারের পরিকল্পনা করছি।

আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষি ইউনিট টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, উত্তরবঙ্গে মৎস্য চাষীদের মধ্যে গলদা চিংড়ি চাষে আগ্রহ কম। এর প্রসার বৃদ্ধি করা গেলে আগামীতে উচ্চ মূল্যের এই মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র রপ্তানি করা সম্ভব। এতে করে জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

রাজারহাট উপজেলা মৎস্য অফিসার এমদাদুল হক বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভাবে গলদা চিংড়ি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬ হাজারের অধিক পুকুরে সাড়ে ২০ হাজার চাষি মাছ উৎপাদন করছে।

গলদা চিংড়ি,মাছ চাষ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত