ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমের মুকুলের ভাঁজে ভাঁজে কৃষকের সোনালি স্বপ্নের হাতছানি

আমের মুকুলের ভাঁজে ভাঁজে কৃষকের সোনালি স্বপ্নের হাতছানি

আমের মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুর অঞ্চলের চাষিরা। এ অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় ৬,৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২,৮৩৫ মেট্রিক টন। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল, বাতাসে ভাসছে এর মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ। এতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন চাষিরা।

গত কয়েক বছরে আম চাষে বদলে গেছে রংপুরের চাষিদের জীবনমান। মৌ মৌ ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে আমবাগান। চাষিরা জানান, শীতের প্রকোপ থাকলেও কুয়াশা কম থাকায় আমের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুর সদরের পালিচড়া, শ্যামপুর, লাহেড়ীরহাট, মিঠাপুকুরের গোপালপুর, পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা গাছে স্প্রে প্রয়োগ, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যত্ন নিচ্ছেন।

বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউপির কাঁচা বাড়ি নয়াপাড়া গ্রামের আম চাষি শাহাবুল ইসলাম জানান, আমার আম বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে কয়েক লক্ষ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ বলেন, বদরগঞ্জ উপজেলা ৫৫৮হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে।আমের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সময়ের আগেই কিছু গাছে মুকুল আসছে। হাড়িভাঙ্গাসহ অন্যান্য আমের মুকুল এবার আগাম হয়েছে। তাতে তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন আম। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবার এই অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন আমের। তবে হাড়িভাঙ্গার উৎপত্তিস্থল রংপুরে গত বছর ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে হাড়ি ভাঙ্গার চাষ হয়েছিল। এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা কৃষিবিভাগের।

চাষিরা বলছেন, হাড়িভাঙ্গা আমের একটি রীতি আছে। এক বছর বেশি ফলন হয় তো পরের বছর কম হয় এটাই স্বাভাবিক। দাম কম পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের কাছে আমের বাগান আগাম বিক্রি করতে হয় বলে জানান তারা। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও হিমাগারের ব্যবস্থা হলে তারা আম বিক্রি করে লাভবান হবেন।

মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, পদাগঞ্জ, রানীপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষি অভিযোগ করেন, আমচাষিদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মতো মনোভাব কৃষি বিভাগের নেই এবং সব ধরনের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত তারা। সরকারি প্রণোদনাগুলোর সঠিক বণ্টন হলে আমচাষিরা আরও উপকৃত হতো ও নতুন নতুন চাষি বাড়তো।

মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকার চাষি নুর হোসেন বলেন, আমের মুকুল এবার ভালোই আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।

একই উপজেলার এলাহিমোড় চকবাজার এলাকার হামিদুর রহমান বলেন, পদাগঞ্জ অঞ্চল হাঁড়িভাঙ্গাসহ আমের জন্য বিখ্যাত। সঠিক দাম পেলে চাষিরা আরও লাভবান হবেন। তবে লোকসান নেই।

রাণীপুকুর এলাকার মিনজারুল ইসলাম বলেন, এবার আমের ভালো মুকুল এসেছে। গত বছরের চেয়ে বেশি। সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে। আশা করছি আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে লাভবান হবেন।

সদরের আম ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, আগাম বাগান নিয়ে রেখেছি ভালো লাভের আশায়। লাভের আশা থাকলেও ফলন নিয়ে সন্দিহান। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: রিয়াজ উদ্দিন বলেন, "রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় আম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩৪৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ১৯১০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং চাষিরা সঠিক পরিচর্যা করলে আশানুরূপ ফলন হবে। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।"

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, "রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬১৮৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙ্গা আমসহ অন্যান্য জাতের আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। ইতোমধ্যেই হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যার ফলে দেশে-বিদেশে চাহিদা বেড়েছে। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলার মধ্যে রংপুর জেলাতেই আম চাষ সবচেয়ে বেশি হয়।"

আবা/সজল

আম,মুকুল,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত