কুড়িগ্রামে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীনের পেকিন জাতের হাঁস পালন। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি এটি স্থানীয় বেকারদের জীবিকা নির্বাহের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে নারী-পুরুষের নতুন কর্মসংস্থান।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হাঁসের খামার রয়েছে, যার মধ্যে ৬ শতাধিক খামারী পেকিন জাতের হাঁস পালন করছেন।
রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাট মাধাই গ্রামের মীর মোশাররফ হোসেন একজন সফল খামারী, যিনি আধুনিক পদ্ধতিতে পেকিন হাঁস পালন করছেন। এই হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল এবং মাত্র ৩০-৪৫ দিনেই তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। বর্তমানে তার খামারে এক হাজার পেকিন হাঁস রয়েছে, যা অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা, কুমিল্লা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বাজারজাত করা হচ্ছে।
এক সময় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া মোশাররফ হোসেন ব্যাংক ঋণ নিয়ে ২০২২ সালে ব্রয়লার মুরগির খামার শুরু করেছিলেন। কিন্তু বার্ড ফ্লু রোগে মুরগি মারা যাওয়ায় খামার বন্ধ করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মাত্র ১০০টি পেকিন হাঁস নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
গ্রামের নারী শ্রমিক রহিমা বেগম জানান, খামারে কাজ করে তারা বাড়তি আয় করতে পারছেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কাজ করার সুযোগ থাকে এবং দিনমজুরির ভিত্তিতে ৩০০ টাকা কিংবা চুক্তিভিত্তিক প্রতিটি হাঁসের জন্য ২৫-২৭ টাকা আয় হয়। এতে তাদের সংসারে অভাব অনেকটাই কমেছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সৌরভ কুমার সরকার জানান, খামারীদের আর্থিক সহায়তা, পরামর্শ, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন ও বাজারজাতকরণের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, আরডিআরএস কৃষি ইউনিট টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, জেলার সদর ও রাজারহাট উপজেলায় ৭৫ জন খামারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাজারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রহমত আলী বলেন, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
