ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্ধারিত সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ, স্বস্তিতে হাওরের চাষীরা

নির্ধারিত সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ, স্বস্তিতে হাওরের চাষীরা

নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়েছে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ১৫০ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। এতে করে স্বস্তিতে রয়েছেন হাওরের বোরো চাষীরা। আগাম বন্যা থেকে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের বোরো ফসল বাঁচাতে এসব বাঁধ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে এখন শুধু সবুজের সমারোহ। হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

চলতি বছর জেলায় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিকটন চাল। সরকার নির্ধারিত দামে যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

চলতি মৌসুমে জেলার হাওরে আবাদ করা, ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল রক্ষায়, ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১২৯ টি প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে দেড়শ কিলোমিটার বাঁধের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ হাওর অধ্যুষিত ৯ টি উপজেলায় সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ায় স্বস্তিতে কৃষকেরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতভাগ হাওর অধ্যুষিত ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ জেলার মোট ৯টি উপজেলার সকল বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ শেষে পুরোদমে চলছে ঘাস লাগানোর কাজ। নদী থেকে পানি এনে ঘাসের উপর ঢেলে পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিকেরা।

মিঠামইন হাওরের কৃষক কাশেম আলী বলেন, এ বছর বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে দ্রুত এবং শেষও হয়েছে নির্ধারিত মেয়াদে। বাঁধ খুব মজবুত হয়েছে, আমরা এবার নিশ্চিন্তে ফসল পরিচর্যা করতেছি। আশা করি আগাম বন্যা হলেও হাওরে পানি ঢুকতে পারবেনা।

ইটনা উপজেলার কুনিয়ার হাওরের কৃষক বজলুর রহমান বলেন, এ হাওরে ৩ একর জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। ফসল খুব ভালো হয়েছে। আমাদের প্রধান চিন্তা হলো বাঁধ নিয়ে, কারণ আগাম উজানের ঢল আসলে ফসল ডুবিয়ে ফেলে। এ বছর যেহেতু ফসলরক্ষা বাঁধ সময়মতো হয়েছে, পাশাপাশি খুব মজবুত হয়েছে বাঁধ, তাই নিশ্চিন্তে আছি।

অষ্টগ্রাম হাওরের কৃষক জলিল মিয়া বলেন, বাঁধ এবার ভালো হয়েছে, ফসলও ভালো হয়েছে, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত ভাল আছে। এমন থাকলে পাঁকা ধান কেটে বাঁধের উপর দিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো ইনশাল্লাহ্।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "নির্ধারিত মেয়াদেই বাঁধের কাজ শেষ করতে পেরেছি আমরা। হাওরের কৃষকের বোরো ধান আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষায় আমরা বাঁধের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি বরাবরই। সে জন্য হাওরের বড় নদীগুলোর মোহনায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে উজানের ঢল থেকে ফসল রক্ষায় বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে এ বছরেও। কৃষকেরা তাদের কষ্টের সোনার ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত আমরা যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ যাবো। গেলো বছরের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এসব বাঁধের কাজের নির্ধারিত মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি।"

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর, ২০১৮ সাল থেকে হাওরের কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ফসলরক্ষা বাঁধ,হাওর,চাষী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত