দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়হরিপুর পোদ্দারপাড়া গ্রামের কৃষক প্রভাষ রায়ের স্ত্রী পুতুল রানী কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সফলতা দেখে আশপাশের অনেকেই এই জৈব সার উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছেন। বর্তমানে এই গ্রামের প্রায় ১৫-২০ জন উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার তৈরি করছেন।
পুতুল রানী জানান, কেঁচো সার বিক্রি করেই তিনি সংসারের খরচ চালান এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যয় বহন করেন। প্রতিকেজি সার ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তার তৈরি সার কিনে থাকেন।
২০১৮ সালে পুতুল রানী উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কেঁচো সার ও কুইক কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাড়ির আঙিনায় দুটি রিংয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারের নাম ‘বড়হরিপুর সিআইজি মহিলা ফসল সমবায় সমিতি লিমিটেড’।
প্রথমে ৩০টি কেঁচো দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৩০ লাখ কেঁচো রয়েছে। তিনি জানান, কেঁচো সাধারণত গোবরের মধ্যে ডিম দেয়, যা থেকে সাত-আটটি নতুন কেঁচো জন্মায়। প্রতিটি রিং থেকে প্রায় ৪০ কেজি সার পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ৬০টি রিং থেকে প্রায় ২,০০০-২,৪০০ কেজি সার উৎপাদন হচ্ছে, যা বিক্রি করে প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি, প্রতি কেজি কেঁচো ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, কেঁচো সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়, পানি ধারণক্ষমতা উন্নত করে এবং মাটিকে নরম রাখে। এতে ৮৮.৩২% জৈব পদার্থ, ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ১.২৬% বোরন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, "আমরা কৃষকদের রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, তাই কেঁচো সার অন্যতম উত্তম বিকল্প।"
তিনি আরও জানান, এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় পুতুল রানীকে ১৬টি রিং, শেড, ৪ কেজি কেঁচো এবং সার তৈরির কৌশল শেখানো হয়েছে।
কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা এনে পুতুল রানী শুধু নিজের জীবন পরিবর্তন করেননি, বরং আশপাশের নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। তার অনুপ্রেরণায় গ্রামের অনেক নারীই জৈব সার উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন।
