ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস 

ঈশ্বরদীতে হিটস্ট্রোকের শঙ্কায় মুরগির খামারি ও ব্যবসায়ীরা

ঈশ্বরদীতে হিটস্ট্রোকের শঙ্কায় মুরগির খামারি ও ব্যবসায়ীরা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় চলমান তীব্র তাপদাহে পোলট্রি খামারের হিটস্ট্রোকে মুরগির মারা যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে পোল্ট্রি খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

চলমান তাপদাহে মুরগির হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষার জন্য খামারিরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের পরামর্শে তাপদাহের বিপদ থেকে মুরগি স্ট্রোক করা থেকে মুরগি রক্ষায় মুরগির ঘর ঠান্ডা রাখতে ফগার কুলিং স্প্রে, ফ্যান বা নরমাল স্প্রে মেশিন দিয়ে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সেডের ভিতর প্রতি এক ঘণ্টা পর পর পানি স্প্রে এবং পানিতে ভিটামিন সি ও ইলেক্ট্রোলাইট দিতে হবে। যে সমস্ত পোলটি খামারিদের ঝরনা দিয়ে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই তারা ঘরের উপরে ভিজানো চট বা বস্তা ভিজিয়ে রাখার ব্যবস্থা নিয়ে মুরগির হিট স্টোক থেকে রক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে মুরগি বিক্রির দোকান গুলোতে উপরে ফ্যান ঝুলিয়ে রাখলেও হিটস্টোক থেকে মুরগির রক্ষা করতে পারছেন না।

উপজেলার আডমবাড়িয়া বাজারে মুরগি বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার তার দোকানে হিটস্টকে ১৬ টি মুরগি এবং পাশের মুরগির বিক্রেতা নয়নের ৮ টি মুরগি মারা যায়। এছাড়াও হঠাৎ করে দুই একটা মুরগি প্রায় দিনই মারা যাচ্ছে। যেসব খামারিরা মুরগির সেডে ঝরনা দিয়ে পানি অথবা চট বস্তা ভিজিয়ে রেখে মুরগি রক্ষা পেলেও তাদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। অপরদিকে হিট স্টোকের আশঙ্কায় মুরগির দাম প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বয়লার মুরগি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হলেও আজ রোববার তা কমে এসে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পল্টি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরেই পাবনার ঈশ্বরদী অঞ্চলে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বইছে। বিশেষ করে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হচ্ছে। আজ রবিবার (১১ই মে) বিকেল তিনটায় ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে। গতকাল শনিবার এখানে আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই চলমান তাপমাত্রায় পোলট্রি খামারগুলোতে তৈরি হয়েছে মারাত্মক সংকট।

রবিবার (১১ই মে )উপজেলার কয়েকটি পল্টি খামারে সরেজমিনে খুঁজে দেখা গেছে এই চিত্র।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে গরমে লেয়ার মুরগির ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। কিন্তু ডিমের চাহিদা আগের মতই আছে। চাহিদার তুলনায় ডিমের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলার আরমবাড়ীয়া বাজারের পাইকারিও খুচরা ডিম বিক্রেতা ফজলু আলী বলেন, আজ রবিবার এক খাচি (ত্রিশটা ) ডিমের মূল্য ৩১৫ টাকা যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ছিল ২৭০ থেকে ২৮৫ টাকা। তিনি বলেন, চাহিদা ঠিক থাকলেও গরমে পোল্ট্রি খামারগুলোতে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে ফলে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ডিম বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই বাজারে মুদি দোকানদার ফেয়ারের দোকানে ডিম বিক্রেতা ম্যানেজার স্বপন জানান, ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় আজ রবিবার এক খাচি (ত্রিশটা ডিম) বিক্রি হচ্ছে ৩১৫ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেও এই এক খাচি ডিম ২৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে ২৮৫ টাকা ছিল। উপজেলার একই বাজারে বয়লার ও সোনালী মুরগি বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকার আফতাব গাজী সুবর্ণা ৭১ তামিম কোম্পানি সহ বেশ কিছু কোম্পানি ঈশ্বরদীর পল্টি খামারিদের মুরগির বাচ্চা,খাদ্য, ও ঔষধ সরবরাহ করে। এরাই প্রতিদিন মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয়।সেই অনুযায়ী বাজারে মুরগি বিক্রি হয়। তীব্র তাপদাহে শুধু পল্টি খামারেই মুরগি মারা যাচ্ছে তা নয় আমরা বাজারে দোকানে এনে মুরগি বিক্রির জন্য রাখলে দোকানেও মুরগি মারা যাচ্ছে। গত শুক্রবার তার দোকানে ১৬ টি ও তার পার্শ্ববর্তী নয়নের দোকানে ৮ টি মুরগি মারা যায়। চলমান তাপদাহ না কমলে মুরগি আরো মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়লে আমার ব্যবসাও ঝুঁকিতে পড়ে।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: আকলিমা খাতুন বলেন, হিটস্ট্রোক কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়। গরমে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় মুরগি মারা যায়। খামারে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ছায়াযুক্ত পরিবেশ এবং পানি স্প্রে করার ব্যবস্থা না থাকলে এই ক্ষতি ঠেকানো যাবে না। এ অবস্থায় মুরগিকে পর্যাপ্ত ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে, দিনে অন্তত ২-৩ বার ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ওষুধ দিতে হবে।গরমে মুরগি স্বাভাবিকের চেয়ে কম খাবার খায়, ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি কম পায়, যা ডিম উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।

অতিরিক্ত গরমে মুরগিরা বেশি পানি খায়, কিন্তু যদি পানির সহজলভ্যতা না থাকে, তবে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয় এবং ডিম কমে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন যেমন লিউটিনাইজিং হরমোনের (LH) ক্ষরণ কমে যায়।একারণে ডিম উৎপাদন কমে যায়।

এছাড়া হিট স্ট্রেসে মুরগি হাঁপাতে থাকে, পাখা মেলে রাখে, শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়—এই অতিরিক্ত শারীরিক চাপ ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি হ্রাস করে।

ডিমের গুণমানও কমে যায়: খোসা পাতলা হয়, ডিম ছোট হয় বা ডিমের সংখ্যা কমে যেতে পারে।

মুরগি,হিটস্ট্রোক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত