সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে খামারীসহ গ্রামঞ্চলে গাভী পালনে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকেরা। গাভী পালনে দুধ উৎপাদনও বেড়ে গেছে। এতে অনেক স্থানে বাজারের প্রভাব বিস্তার ঘটেছে এবং বাজারে দুধের দাম এখন ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৩ হাজার গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে বিভিন্ন জাতের ১৫ লাখ ৬ হাজার ২৫৩টি গরু রয়েছে। এসব খামারে বেশিরভাগ গাভী রয়েছে এবং শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে খামারের পাশাপাশি বাড়িতেই দুধ উৎপাদনকারী একাধিক গাভী রয়েছে। গত বছর এ জেলায় ৭ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১৯ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ংসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দুগ্ধ সংগ্রহকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে এসব দুধ সংগ্রহ করে এবং প্রতি লিটার দুধ গড়ে ৫৫ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এ দামে দৈনিক দুধ বিক্রির টাকা দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি। এদিকে বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা এলাকাসহ উল্লাপাড়া, এনায়েতপুর, কামারখন্দ ও চরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকেরা গো-খামারী গড়ে উঠেছে কয়েকযুগ আগে।
এরমধ্যে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়াসহ অনান্য স্থানে গো খামারীতে গাভীর সংখ্যাই বেশি। এসব খামারে উৎপাদিত দুধ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দুগ্ধজাত পণ্য দীর্ঘদিনেও বাজার ধরে রাখতে পারেনি। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় বাজার অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঘি, মিষ্টি, দই, পনির, ছানা, লাবাংসহ বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। দুগ্ধজাত পণ্যের বছরে বাজারম‚ল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও যেমন লাভবান হচ্ছে এবং গাভী পালনে কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়েছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান। সেইসাথে সরকার কয়েক বছর আগে দেশে টেকসই ও পরিবেশসম্মত ব্যবসার উদ্যোগ বাড়াতে ‘সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট’ (এসইপি) ও স্মার্ট ডেইরি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের তত্বাবধানে সারা দেশে ৬৪টি উপ-প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উলাপাড়া উপজেলায় বর্তমানে স্মার্ট ডেইরি দুগ্ধজাত পণ্য উপ-প্রকল্প চালু রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি এনজিও সংস্থ্যা এনডিপি। এছাড়া পিকেএসএফ শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৭’শ উদ্যোক্তাকে নিয়ে কাজ করছে। দুগ্ধজাত পণ্যের পাশাপাশি বায়োগ্যাস, ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও সাইলেজ (গোখাদ্য) উৎপাদনে সহযোগিতা করছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০০২ সাল থেকে দুধ থেকে ছানা ও ঘি তৈরির ব্যবসা করছেন। পরবর্তী ২০২১ সালে অনেকে সনদ নেয় এ কাজে সহযোগিতা করেছেন এসইপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উলাপাড়া স্মার্ট ডেইরি উপ-প্রকল্প চলমান রয়েছে। টেকসই পণ্য উৎপাদন পদ্ধতিতে গেলে এই এলাকার দুগ্ধজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার ১২০ কোটি টাকা ছাড়বে। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, এ জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গো খামারে গাভী পালনের সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ খামারে গাভীর সংখ্যা বেশি এবং বাড়িতেও কৃষকেরা গাভী পালনে ঝুঁকে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থ্যার সহযোগীতা করছে। কম খরচে লাভজনক দুগ্ধ উৎপাদন করছে। বাজার ভালো থাকায় এসব কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।