
ক্ষমাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে নিয়ে আদালতে নানা অভিযোগ তুলেছেন দুদকের মামলায় গ্রেফতার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে দুদক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতে হাজির করা হলে তিনি কত সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন তা জানতে চান বিচারক। জবাবে কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আমাকে প্রথমে বিইউপিতে প্রো-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তৎকালীন সরকার একদিনের জন্য আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করে। পরে আমাকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
এরপর বিচারক বলেন, ‘২০১৭ সালে।’ তিনি বলেন, ‘হ্যা।’ বিচারক জানতে চান ক্যাম্পাস কোথায়? কলিমউল্লাহ বলেন, ‘রংপুরে।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি তো ফুল টাইম ঢাকায় থাকতেন।’ কলিমউল্লাহ বলেন, ‘না, স্যার। আমি ঢাকায় থাকলেও ওখানে আমার বাঙলো ছিল। এর জন্য বেতনের ৪০ শতাংশ কেটে নিত।’
তখন বিচারক বলেন, ‘চাকরীকালে আপনি তো ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ঢাকায় ছিলেন।’
এর জবাবে তিনি বলেন, ‘তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অন্যায় আবদার করতেন। তার কারণে ক্যাম্পাসে যেতাম না। আমি এই আবদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করি। তিনি রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস না থাকার অপবাদ ছড়িয়েছেন।’
তার দাবি, ‘প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘণ্টা ভার্সিটির স্বার্থে কাজ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পর এটাই প্রথম, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিক্ষামন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই কারণে দীপু মনি আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি ও আপনার মা একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘তিনি (তার মা) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি ছিলেন। এ জন্য সরকার নিয়োগ বোর্ডে সদস্য করেন।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি কি ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম না। আমার আগের ভিসির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এসব দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্বে থাকতে হয়েছে।’
বিচারক জানতে চান, ‘চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোন টাকা পেয়েছেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘আমার আগের ভিসি নুর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আর নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ আগের ভিসির বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটায় উন্নয়ন প্রজেক্ট। আমি এসে নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছি।’
তখন বিচারক বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য আপনার বিরুদ্ধেই।’ এ সময় কলিমউল্লাহ বলেন, ‘নো, নেভার, নেভার।’
এ সময় দুদক প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, ‘উনি ১৭ ঘণ্টা কাজ করেছেন। আমরা তো তাকে টকশোতে দেখেছি।’ তখন কলিমউল্লাহ বলেন, ‘সেটা তো রাতে।’
এসময় বিচারক দুদক প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, ‘তার বিরুদ্ধে অন্য মামলা আছে কি না। আদালতকে জানানো হয়, এই মামলাই আছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত শুরু হবে।’
বিচারক বলেন, ‘অভিযোগ আগে, তদন্ত হোক। আপনি কি করেছেন, সেটা আলিমুল গায়েব জানেন, আপনি জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। এরপর মানুষ জানবে।’
তখন কলিমউল্লাহ বলেন, ‘গত মাসের ১৮ তারিখে মামলার বিষয় ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। আমি ভেবেছিলাম, দুদকে আমাকে তলব করা হবে। সকালে আকস্মিকভাবে নাস্তার পর ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। আপত্তি করিনি।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি আপত্তি করবেন কেন? আপনার তো জেলে যেতে হবে। কবরেও একা যেতে হবে, জেলখানায়ও একা যেতে হবে। সঙ্গে কেউ যাবে না।
এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আবা/এসআর/২৫