ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাথাব্যথা কমাতে কার্যকর উপায়

মাথাব্যথা কমাতে কার্যকর উপায়

মাথাব্যথা হলেই আমরা অনেকেই ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব বেশি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। এতে একটা সময়ে গিয়ে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খেলে পেইন রিসেপ্টর নিয়মিত উদ্দীপিত হতে থাকে, ফলে একটা সময় তাদের ওপর ওষুধ আর প্রভাব ফেলতে পারে না।

এমন অবস্থাই হয়েছিল জার্মান তরুণী ইয়োনা কোজারের। পরে তিনি একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাকে বিকল্প কিছু থেরাপি শেখানো হয়।

ইয়োনার মাথাব্যথা গুরুতর মাইগ্রেনে রূপ নিয়েছিল। তার মধ্যে কিছু স্নায়বিক উপসর্গও দেখা দিয়েছিল। এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষ যা করে, ২১ বছর বয়সি ইয়োনাও সেটিই করেছেন। অর্থাৎ ব্যথানাশক বা পেইনকিলার খেয়েছেন। প্রথমে উপশম হলেও তার মাথাব্যথা ক্রমেই বেড়েছে এবং আরও গুরুতর হয়েছে।

ইয়োনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমি প্রায়ই উচ্চমাত্রার পেইনকিলার খেতাম। কারণ, মাঝেমধ্যে আমি কিছুই করতে পারতাম না- অথচ আপনাকে কাজ করতে হবে।”

ইয়োনা জানান, মাথাব্যথার চিকিৎসার জন্য পরিচিত এক বিশেষ ক্লিনিকে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জানতে পারেন যে, নিয়মিত ব্যথানাশক খাওয়ার জন্য তার মাইগ্রেন আরও খারাপ হয়েছে। যা অনেকটা দুষ্ট চক্রের মতো; চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে “ব্যথানাশক-প্ররোচিত” মাথা ব্যথা বলে।

বিষয়টি নিয়ে জার্মান নিউরোলজিস্ট ডা.কারোলিন ইয়াগেলা বলেন, “আমাদের ধারণা, পেইন রিসেপ্টরগুলোর অতিসংবেদনশীলতার কারণে এটা হয়। পেইন রিসেপ্টর নিয়মিত উদ্দীপিত হতে থাকে। একটা সময় সেগুলো ফিডব্যাক মেকানিজমের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের ওপর ওষুধ আর প্রভাব ফেলতে পারে না। তারা এত বেশি উদ্দীপিত হয়ে ওঠে যে, বলতে গেলে, সেগুলো ব্যথার কারণ হতে পারে।”

চিকিৎসকরা প্রথমে ইয়োনার নিউরোলজিক্যাল চেকআপ করেন, পরে দ্বিতীয় ধাপের উপসর্গগুলো পরীক্ষা করেন। ইয়োনার এখন যে ধরনের ব্যথা হচ্ছে, সেটি স্ট্রোকের আগের ধাপ হতে পারে- যদিও ইয়োনার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা তা মনে করছেন না। তবে তাকে পেইনকিলার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

পেইন থেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. এস্টেল নিব বলেন, “মাইগ্রেন ও মাথাব্যথার ওষুধ খাওয়ায় বিরতি দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা ‘ওষুধ বিরতি' বলি। এটা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা নয়। রোগী চেয়েছেন বলে নয়, তিনি যেন দৈনন্দিন কাজ করতে পারেন সেজন্য পেইনকিলার খেয়েছেন। এই চক্র বন্ধ করতে আমরা ‘ওষুধ বিরতি'র সময় ব্যবহার করা যায় এমন ওষুধ খাওয়ার কথা বলি।”

তিনি জানান, এর মানে হলো আর কোনো পেইনকিলার নয়। এর পরিবর্তে প্রথম কয়েকদিনের জন্য কোর্টিসন দেওয়া, এবং তারপর এন্টিডিপ্রেসেন্ট। তবে সমন্বয় সহজ নয়।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা ইয়োনা বলেন, “এটা কঠিন! মাঝেমধ্যে আমি বলি, ‘আমি কি কিছু খেতে পারি?' কিন্তু আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে ও ভাবতে হবে যে, ‘আপনি এখন এটা করবেন৷ প্রথমে এটা কঠিন, কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়।”

চিকিৎসকরা বলছেন, এটিকে “মাল্টিমোডাল ট্রিটমেন্ট” বলা হয় যার উদ্দেশ্য সাহায্য করা। এর একটি উপাদান হলো পেশী শিথিলকরণ।

এর সঙ্গে একটি ব্যায়াম জড়িত, যা রোগীকে ব্যথার স্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

আচরণগত থেরাপির মাধ্যমে ইয়োনা মাইগ্রেন ও নিয়মিত পেইনকিলার ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে জানতে পারেন। ওষুধ নেওয়ার পরিবর্তে যা তাকে নতুন সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

নিউরোলজিস্ট ডা.কারোলিন ইয়াগেলা বলেন, “তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে- এই ভয় থেকে তিনি অনেক বেশি ওষুধ সেবন করছিলেন। এটাই তার জন্য কাল হয়েছিল। তাকে এমন মানসিকতা থেকে বের করে আনা এবং তিনি মেনে চলতে পারেন এমন কিছু আচরণগত নীতি দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে ছিল ফিজিওথেরাপি। ইয়োনার ঘাড় ব্যথার সঙ্গে মাইগ্রেন জড়িত। এমন চিকিৎসা শুরুতে তাকে সহায়তা করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় ফিজিওথেরাপিস্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

এই চিকিত্সার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ব্যায়াম, যেমন, ধৈর্য শেখার জন্য হাঁটা।

আরেকটি সহায়ক বিষয়: ইয়োনার টানটান পেশি শিথিল করা ও তার প্রধান ট্রিগার ফ্যাক্টর চাপের সঙ্গে লড়াই করা। কোনো ব্যথানাশক ছাড়াই ১৬ দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ায় তার শরীরে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ইয়োনা বলেন, “আমি বুঝতে পারছি, যাওয়ার সময় আমার শরীরের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি শক্তি অনুভব করছি। অর্থাৎ আমি জানি, আমি কোথায় শুরু করতে পারি, নিজের জন্য কী করতে পারি। এটা একটা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমার স্পিরিটটা ভালো আছে।”

নিজের দৈনন্দিন জীবনে বিকল্প থেরাপিগুলো মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন ইয়োনা। তিনি আশা করছেন, সামনের দিনগুলোতে মাইগ্রেনে ব্যথা কম হবে এবং তিনি ব্যথানাশক কম করে ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।

মাথাব্যাথা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত