ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

টিপস

কোরবানির পশুর হাটে বিড়ম্বনা ও সতর্কতা

সৈয়দ হামদুল্লাহ লাবীব
কোরবানির পশুর হাটে বিড়ম্বনা ও সতর্কতা

পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ৭ জুন দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদুল আজহা বেশি পরিচিত কোরবানির ঈদ নামে। পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা এ ঈদ উদযাপন করে থাকেন। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। জমে উঠতে শুরু করেছে পশুর হাটগুলো। পথে-ঘাটে ‘হাট হাট হাট, এক বিশাল গরু-ছাগলের হাট’ মাইকিং শুরু হয়েছে।

পশুর হাটে সতর্কতা : পশুর হাটে সতর্ক থাকা জরুরি, নইলে বিপদে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। পশু কিনতে কোরবানির হাটে গেলে রাস্তার খাবার খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এ সময় পশু কেনার টাকা হাতিয়ে নিতে অজ্ঞান পার্টির আনাগোনা বেড়ে যায়। কোরবানির পশু কেনার আগের কয়েকদিন বিভিন্ন পশুর হাটে পশুর দরদাম যাচাই করা ভালো। এতে যে কোনো পশুর সঠিক দামের ধারণা পাওয়া যায়; পাশাপাশি কোরবানি হাটের দালালের দৌরাত্ম্য থেকেও রক্ষা মেলে। অনেক সময় কোরবানির হাটে কিছু উন্মাদ পশুর দেখা মেলে। যেসব পশুকে রাখালও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হাটে প্রায়ই এমন পশুদের দড়ি ছিঁড়ে দৌড়াতে দেখতে পাওয়া যায়। তাই কখনওই পশুর হাটে শিশু, বৃদ্ধ কিংবা পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের নিয়ে যাবেন না। হাটে কোরবানির জন্য পশু কিনতে গেলে পরিচিতরা দল বেঁধে যাওয়া ভালো। কারণ, এক দুজন মিলে কোরবানির পশু কিনতে গেলে মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারেন। সংখ্যায় বেশি সদস্য নিয়ে হাটে গেলে এদের খপ্পরে পড়ার শঙ্কা অনেকটাই কমে আসে।

পশুর হাটের হালচাল : পশুর হাট বা বাজারের হালচাল ভালো থাকে না। দেখা গেছে, বিক্রেতা পশু বিক্রি করে ফেলেছেন, ক্রেতা জাল নোট ধরিয়ে দিল। দিতেই পারে। তাই বিক্রেতার কাছে পশু হস্তান্তরের আগে হাটে কিংবা পশুর বাজারে অবস্থিত ব্যাংকের অস্থায়ী বুথে জাল নোট শনাক্ত করে টাকাগুলো গুনে বুঝে পশু হস্তান্তর করুন। মনে রাখবেন, যারা জাল নোট বহন করে, তারা মারাত্মক অপরাধী। এদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিন। অননুমোদিতভাবে রাস্তাঘাট, ফুটপাত, খেলার মাঠ কিংবা রাস্তায় চলমান বিক্রেতার কাছ থেকে পশু কেনা নিরাপদ নয়। এতে বর্ডার পাস করা, কারও জমি থেকে হারিয়ে যাওয়া, গোয়াল ঘর থেকে খোয়া যাওয়া পশুও কিনে ফেলতে পারেন। কাজেই অনুমোদনপ্রাপ্ত পশুর হাট থেকে পশু কিনুন। অনেক সময় ক্রেতার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা পশুর শরীরে কৃত্রিম রঙ মেখে, বয়স লুকিয়ে, পশুর দাঁত প্রদর্শন না করে, নেশা খাইয়ে, পশুর পায়ে প্যারেক গেঁথে, লেজে আলপিন মেরে অসুস্থ পশু বিক্রি করতে পারে। তাই পশু অসুস্থ কি না, পরখ করে কিনতে হবে।

হাটে দালালের উৎপাত : পশুর হাটে দালালের উৎপাত খুব বেশি। এদের লড়াইয়ে চলাই বাজারের ধরন। লক্ষ করলে দেখবেন, যে লোক একবার আপনার পক্ষে আরেকবার বিক্রেতার পক্ষে কথা বলছে, বুঝে নেবেন- লোকটি এখানকার দালাল। আবার ক্রেতা সাজিয়ে আরও দু’চারজনকে দরদাম করার জন্য লাগিয়ে রাখে। আপনার করা দামের চেয়ে তারা বেশি দাম বলে। তখন বুঝে নেবেন, লোকগুলো ফড়িয়া। অনেকে কেনা পশু বাসা-বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সাহায্যকারী নেন। কিন্তু সাহায্যকারীর কোনো পরিচয় রাখেন না। এতে হয়তো ফাঁকফোকরে আপনার পশু খোয়া যেতে পারে। তাই সাহায্যকারী নেওয়ার আগে সাহায্যকারীর আসল পরিচয় জানতে তার রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের কপি রাখুন। একান্ত অপারগ হলে হাতে থাকা ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলে ছবি তুলে রাখুন।

কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য : সাধারণত সুস্থ, স্বাভাবিক, সবল পশু কোরবানি করার নিয়ম। কোরবানি দেওয়ার জন্য পশু কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কোরবানি করার জন্য শরিয়তে কয়েক ধরনের পশু নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। অন্য কোনো পশু দিয়ে কোরবানি করার বিধান নেই। আর বয়সের ক্ষেত্রে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা অন্তত এক বছর। গরু, মহিষ অন্তত দুই বছর এবং উট অন্তত ৫ বছর হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, ছয় মাসেরটি দেখতে এক বছরের মতো লাগে, তাহলে সেটি দিয়ে কোরবানি হবে। কোরবানির পশু কেনার আগে খেয়াল রাখতে হবে, এমন দুর্বল পশু কেনা যাবে না, যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে বা কোরবানির স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে না। এ রকম পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। আর মোটাতাজা পশু দিয়ে কোরবানি করা উত্তম।

সুস্থ পশু চেনার উপায় : পশু কেনার জন্য তাড়াহুড়ো না করে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে হাটে যেতে হবে। সুস্থ পশুর স্বাভাবিক চাঞ্চল্য থাকবে এবং মাঝেমধ্যে জাবর কাটবে। অন্যদিকে অসুস্থ পশু ক্লান্ত থাকবে। সুস্থ পশু সচেতন থাকবে এবং কোথাও কোনো শব্দ হলে সেদিকে লক্ষ করবে। সুস্থ পশুর নাকে কিছুটা ঘাম থাকবে। নাকের ওপরের কালো অংশ ভেজা ভেজা এবং চকচকে হবে। অন্যদিকে অসুস্থ পশুর নাক থাকবে শুকনো। সুস্থ পশুর গতিবিধি চটপটে থাকবে। কান ও লেজ দিয়ে মশামাছি তাড়াবে। সুস্থ পশুর সামনে খাবার ধরলে পশু নিজ থেকে জিহ্বা দিয়ে টেনে খাবে। সুস্থ পশুর শরীরের চামড়া টানটান, মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে। চামড়া টান দিয়ে ছেড়ে দিলে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। স্টেরয়েড বা ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা পশুর মাংসপেশি থেকে শুরু করে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিক ফোলা থাকবে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে। পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে। সুস্থ পশুর শরীরের তাপমাত্রা থাকবে স্বাভাবিক। অসুস্থ পশুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। সুস্থ পশুর শ্বাসপশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে এবং অযথা ছটফট করবে না। অনেকক্ষণ খেয়াল করলে সুস্থ পশুকে পায়খানা অথবা প্রস্রাব করতে দেখা যাবে, গোবর স্বাভাবিক (পাতলা নয়) ও প্রস্রাব থাকবে পরিষ্কার। চলাফেরা স্বাভাবিক কি না, তার জন্য পশুকে হাঁটিয়ে দেখতে হবে।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

কোরবানি,পশুর হাট,বিড়ম্বনা ও সতর্কতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত