ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাসিনার শাসনামল ছিলো দুর্নীতি-সহিংসতা-স্বৈরাচারে ভরপুর: দ্য গার্ডিয়ানকে ইউনূস

হাসিনার শাসনামল ছিলো দুর্নীতি-সহিংসতা-স্বৈরাচারে ভরপুর: দ্য গার্ডিয়ানকে ইউনূস

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, ছিল একটি দস্যু পরিবারের শাসন। সরকারপ্রধানের যেকোনো আদেশই তখন পালিত হতো। কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব যে আপনি যেন সব আসনে জয়ী হন। আপনি টাকা চান? এই যে ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ, যা আপনাকে কখনোই ফেরত দিতে হবে না।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ব্যাপক নৃশংসতা ঘটান। তবে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও তিনি সেখানেই আছেন।

ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এতে দেশ অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, এটা মানা যায়। ভারতকে ব্যবহার করে আমরা যা যা করছি, তা নষ্ট করার প্রচারণা চালাতে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামল ছিল স্বৈরতন্ত্র, সহিংসতা এবং দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যে ১ হাজার ৪ শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য জাতিসংঘও তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। হাসিনা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

মুহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর অনেকেই আশা করেছিলেন, বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটতে চলেছে। কিন্তু আজ ছয় মাস পর আপনি যদি ঢাকার সড়কে হাঁটেন, তাহলে অনুভব করবেন যে দেশটি ফের খাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যদিও ইউনূসের প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত রয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে এও সত্য যে অপরাধ দমন ও শান্তি রক্ষায় তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

এর একটি বড় কারণ, শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছেন এবং বাকিরা সবাই আত্মগোপনে আছেন। ফলে সার্বিক চেইন অব কমান্ডে একধরনের ফাঁকা ভাব বা শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী। ঢাকার রাস্তাঘাটে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সংঘবদ্ধ অপরাধ বা গ্যাং তৎপরতা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমানে নবগঠিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘‘বর্তমানে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, তাতে শিগগিরই একটি অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন হওয়া অসম্ভব।’’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আবা/এসআর/২৫

হাসিনা,শাসনামল,স্বৈরাচার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত