ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত আরও ৯১ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত আরও ৯১ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা থামছেই না। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনেই নিহত হয়েছেন আরও ৯১ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. আবু সালমিয়ার পরিবারের সদস্যও রয়েছেন।

রোববার (২১ সেপ্টেস্বর) গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটিকে দখল করতে এবং সেখানকার মানুষদের দক্ষিণের তথাকথিত ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ ঠেলে দিতে ইসরায়েলি সেনারা আকাশ ও স্থলপথে হামলা চালাচ্ছে। শনিবারের হামলায় বসতবাড়ি, স্কুলে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু এবং পালিয়ে আসা মানুষ বহনকারী ট্রাককে নিশানা করা হয়। শুধু এসব হামলাতেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৬ জন।

দিনের শুরুতে ইসরায়েলি হামলায় গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ওই হামলায় তার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন।

শোকে ভেঙে পড়া আবু সালমিয়া বলেন, “আমি জরুরি বিভাগে ডিউটিতে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, আমার ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ সামনে এনে রাখা হয়েছে। এখন আর কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হয় না— প্রিয়জনেরা হয়তো শহীদ হয়ে যাচ্ছে, নয়তো আহত অবস্থায় আসছে।”

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে চিকিৎসকদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চালানো “রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা” বলে আখ্যায়িত করেছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ১ হাজার ৭০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং আরও অন্তত ৪০০ জনকে আটক করেছে।

এদিকে গাজার নাসর এলাকায় আরেকটি হামলায় একটি ট্রাককে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায়। এতে অন্তত চারজন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলার পর নিহতদের রক্তাক্ত মরদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল।

আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ, কামান হামলা এবং কোয়াডকপ্টারের গুলিবর্ষণ থেকে বাঁচতে হাজারো মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তিনি জানান, ইসরায়েল এখন বিস্ফোরকভর্তি রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিচ্ছে। স্থানীয়দের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “প্রতিটি বিস্ফোরণের সময় মনে হচ্ছে যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।”

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজার প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এর আগে সেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করত। ইসরায়েলি সেনারা শুধু গত দুই সপ্তাহেই অন্তত ২০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানের কারণে গাজা অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ তাদের বাসভূমি ছেড়ে পালিয়েছে। এর আগে সেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করত। ইসরায়েলি সেনারা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ২০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে বলে জানানো হয়েছে।

তবে পালিয়ে আসা মানুষজন এখন চরম বিপর্যয়গ্রস্ত অবস্থায় পড়েছেন। হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, “আমরা দেখছি, মানুষ রাস্তায় তাঁবু ফেলছে। পানির কোনো সরবরাহ নেই, বিদ্যুৎ নেই, অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস—তাদের আর কোনো বিকল্পও নেই।”

গাজা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত