ইসলাম মানবতার সামগ্রিক কল্যাণের জন্য সুমহান আদর্শ। এ আদর্শ মানুষের মাঝে প্রচারের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবীও রাসুল দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তারা মানুষকে হাতে কলমে বাস্তবজীবনে অনুশীলন করে শিখিয়েছেন কিভাবে সে আদের্শকে লালন করতে হয়।
ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় উভয়ই নিষিদ্ধ। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ কল্যাণকর আদর্শ। তাই এতে অপচয় ও অপব্যয়ের মতো কৃপণতাও নিষিদ্ধ। কারণ কৃপণতাও মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। বিশ্বাসঘাতকতা ও নির্দয়তার লক্ষণ। কুরআন মজীদ ও হাদীসে ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য দান, অনাথ-ইয়াতিমদেরকে লালন-পালন, নিঃস্ব ব্যক্তির উপার্জনের ব্যবস্থা করা, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা মুসলিমদের কর্তব্য বলে ঘোষণা করা ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ঈসরাইলের ২৬-২৭ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
আত্মীয় স্বজনকে তার হক প্রদান কর এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও দান কর এবং কিছুতেই অপব্যয় করোনা। নিশ্চয অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
অন্যত্র সূরা আরাফের ৩১ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
তোমরা খাও এবং পান করো কিছুতেই অপচয় করোনা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা অপচয় ও অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেননা। মুসলিম শরীফে বর্ণিত- রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন– কারো ঘরে একটি বিছানা তার জন্য অপরটি তার স্ত্রীর জন্য তৃতীয়টি মেহমানের জন্য এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।
নদীতে বসে ওযু করলেও তা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ এ বর্ণিত, ‘একদা নবী করীম (সা.) হযরত সা’আদ (রা.)- এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি ওযু করছিলেন। নবী করীম (সাঃ) বললেন, হে সা’আদ অপচয় করছো কেন! সা’আদ বললেন, ওযুতে কি অপচয় হয়? নবী করীম (সা.) বললেন, হ্যাঁ প্রবাহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো, তা অপচয়।’ এ আয়াত ও হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকে মিতব্যয়ী হতে হবে। ধন সম্পদের অধিকারী হলেই প্রয়োজন ব্যতীত নিজের খেয়াল খুশী অনুযায়ী ব্যয় করা যাবেনা।
যেহেতু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাই অপচয়, সেহেতু সবধরনের বিলাসিতাই অপচয়। তাই দামি খাবার, দামি পোশাক, সুরমা অট্টলিকা, অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন অপচয়ের শামিল। এ জন্য নবী-রাসূল, ওলী-আল্লাহ ও পরহেজগার মুসলিমের জীবনে এতোটুকু বিলাসিতাও স্থান পায়নি।
আর তাই সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় না করে তা মানব কল্যাণে ব্যয় করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন-মুসলিমের কাজ।ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃপণতা যেমন দূষণীয় তেমনি অপচয় অপব্যয় দূষণীয়।
সম্পদ কমে যাওয়ার ভয়ে নিঃস্ব ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা না করার জন্য কৃপণরা দোষী। আর অপচয়কারীরাও দোষী এ কারণে যে, তারা নিজের প্রয়োজন ছাড়াই ব্যয় করছে, অথচ নিঃস্ব ও বিপদগ্রস্তদের প্রয়োজন মিটাতে সহায়তা করছে না।
মানুষ তখনই প্রকৃত মানুষ হয়, যখন সে অন্য মানুষের দুঃখ-কষ্টে সহানুভূতি দেখায়, বিপদে-আপদে সহায়তা করে। কিন্ত কৃপণ, অপচয় ও অপব্যয়কারীরা তা করতে পারে না কিংবা করে না।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সুরা আল ফুরকান এর ৬৭ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এ দুয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।’
এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে সে কখনো দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত হয় না।’
এ আয়াত ও হাদিসের শিক্ষা বাস্তবসম্মত। কেননা, আমরা সমাজে এ রকম বহু নজির দেখতে পাই যে. সম্পদশালী মানুষও অপচয় ও অপব্যয়ের দরুন নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়ে। তাই মানবতার সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের জন্য অপচয়-অপব্যয় হতে বিরত থাকতে হবে।
একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে অপব্যয় ও অপচয় বিরাট এক প্রতিবন্ধক। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার দায়িত্ব দেশের প্রতিটি নাগরিকের। জাতিয় সম্পদের অপচয় রোধে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আমাদের বাসাবাড়িতে অফিস আদালতে, কল-কারখানায়, রাস্তাঘাটে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ মন্দির সহ সর্বত্র পানি, গ্যাস,বিদ্যুৎ ও জাতীয় সম্পদের অপচয় হতে দেখা যায়।এমনকি বিবাহ শাদীর অনুষ্ঠানেও অনেক সময় অতিরিক্ত সাজ সজ্জ্বাও লাইটিং করে বিকাল থেকে পরদিন সকাল ৮টা পযন্ত বিদ্যুৎ জ্বালিয়ে জাতীয় সম্পদের অপচয় হতে দেখা যায়্। এ ছাড়াও অতিরিক্ত খাবার দাবার খেতে না পেরে ফেলা দেয়া হয় কিংবা অযথা খাবার নষ্ট করা হয়। যা নিতান্তই অপচয় ছাড়া কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত- রাসূলে কারিম সা. এরশাদ করেছেন-দেহকে সুস্থ-সবলও কর্মক্ষম রাখার জন্য যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন, ততটুকুই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট। যদি কোন ব্যক্তি বেশী খাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে না পারে তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য, একতৃতীয়াংশ শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।
পবিত্র কুরআন ও সুন্নার শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে অপচয়-অপব্যয়, ঘুষ –দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও সকল প্রকার অন্যায়-অনাচার খেকে বিরত খেকে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আদর্র্শ রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।