অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগে—প্রথমে সংস্কার আনা প্রয়োজন। এই তিন জায়গায় সমস্যা থেকেই যাচ্ছে, অথচ সেগুলো ঠিক না করে কেবল তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন বা সেমিনারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি আয়োজিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের নিজেদের ভেতর আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এই মানসিকতা না থাকলে কেবল আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনও কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, মানবাধিকার শুধু আইনের বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক ও সংস্কৃতিগত চর্চা। মানুষের আচরণ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের মধ্য দিয়েই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যখন কোনো সরকারের ক্ষমতা হারানোর ভয় চলে যায়, তখন তারা কীভাবে দানবীয় রূপ নেয়, তা আমরা অতীতে দেখেছি। সেই সময় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন, অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। আমরা সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে, তবে যেন আমরা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কল্পনার জগতে না হারিয়ে যাই। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ নয়—এটি দীর্ঘ সংগ্রামের বিষয়।
সম্মেলনে গুম হওয়া অধিকারকর্মী মাইকেল চাকমাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে গুম হওয়ার পর তার পরিবার বহু জায়গায় খোঁজ করেছে, এক সময় তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় যে তিনি আর বেঁচে নেই। এমনকি তার পরিবার তার শেষকৃত্যও সম্পন্ন করে ফেলে।
তিনি বলেন, একজন মানুষের অস্তিত্বের শেষ বিন্দুটুকুও যখন মুছে যায়, তখন পরিবার কতটা অসহায় হলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। তিনি ফিরে এলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে—আমাদের ভবিষ্যৎ কী? আর কতজন গুম হবে? আর কত পরিবার ধ্বংস হবে?
সম্মেলনে গুম হওয়া আইনজীবী আহমেদ বিন কাশেম, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া নাইমা সুলতানার পরিবারের সদস্য এবং আহত যোদ্ধার স্বজনরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।