ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাদ্রাসাবিদ্বেষী আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে আসাদ উদ্দিন ওয়াইসির প্রশ্ন-

‘রাজা রামমোহন রায় কেন মাদ্রাসায় পড়েছিলেন?’

অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
‘রাজা রামমোহন রায় কেন মাদ্রাসায় পড়েছিলেন?’

হায়দ্রাবাদের অভিজাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, লোকসভার বারবার নির্বাচিত সদস্য ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি। হায়দ্রাবাদ থেকে শুরু করে দিল্লি, বোম্বে, পাটনা, লক্ষ্মৌ, কলকাতা, গুয়াহাটিতে আয়োজিত জনসভায় ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসির বক্তব্য সংখ্যালঘুদের স্বার্থের জায়গায় তাকে ক্রোধের প্রতীকে পরিণত করেছে। ভারতের মুসলিম তরুণ-তরুণীরা অনেক বিষয়ে তার মতামত জানতে উদগ্রীব থাকেন। নিঃসন্দেহে ভারতের ৩০ কোটি মুসলমানের হতাশাকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি। ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মুসলিম স্বার্থে কথা বলতে কাউকে পরোয়া করেন না; রাখেন না কোনো রাখঢাক।

২০১৯ সালে তেলেঙ্গানা রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এক জনসভায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে জেনে রাখুন ওয়াইসিকে তেলেঙ্গানা ছেড়ে পালাতে হবে। ঠিক যেমন নিজাম হায়দরাবাদ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।’ এমন মন্তব্যের জবাবে ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হায়দরাবাদের মালাকপেটে এক জনসভায় যোগী আদিত্যনাথকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আপনি ইতিহাস জানেন না, যারা পড়াশোনা জানেন, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন- নিজাম হায়দরাবাদ ছেড়ে পালিয়ে যাননি, তাকে রাজ্যের প্রধান করা হয়েছিল।’ ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এরকম যুক্তিনির্ভর বক্তব্য প্রতিপক্ষের লাগামহীন বক্তব্যকে যেমন অসার প্রমাণ করে, তেমনি মুসলমান জনগোষ্ঠীর মাঝে সৃষ্টি করে আশার সঞ্চার।

২০১৯ সালের মে মাসে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত লোকসভা সদস্য হিসেবে প্রথম পার্লামেন্ট সভার ভাষণে ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করলে বিজেপির লোকসভা সদস্যরা তুমুল হট্টগোল শুরু করে তার পুরো বক্তৃতার সময় ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এসময় তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, আমার গলায় ছুরি চালালেও আমার ধর্ম অনুমোদন দেয় না, এমন স্লোগান আমি দেব না। ‘আল্লাহ আকবর’ বলে তিনি বক্তৃতা শেষ করেন। সর্বশেষ ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসির যুক্তির কষ্টিপাথরের নিশানার শিকার হলেন আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।

গত ২৫ মে ২০২২ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, যতদিন মাদ্রাসা থাকবে ততদিন শিশুরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা ভাবতে পারবে না। তিনি মাদ্রাসা শব্দটি বাতিলেরও দাবি জানান। বাচ্চাদের মাদ্রাসায় ভর্তি করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথেও তুলনা করেন। তিনি বলেন, ২-৩ ঘণ্টা ধর্মীয় শিক্ষা দিন। শিক্ষার্থীদের সেভাবেই স্কুলে পড়ানো উচিত, যাতে তারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। সেটার ব্যবস্থা করুন। তিনি আরও বলেন, কেউ তো কোরআন না পড়ার কথা বলছে না। মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত, জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং প্রাণীবিজ্ঞান শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উল্লেখ্য, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রাজ্যটির শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি রাজ্যটিতে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব মাদ্রাসা বাতিল করে দিয়ে সেগুলোকে সাধারণ স্কুলে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক দুটি আইন বাতিল করার জন্য আসামের বিধানসভায় একটি আইনও পাস করেছিলেন। যদিও গুয়াহাটি হাইকোর্ট ওই আইন স্থগিত রাখে। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ভারতের মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলের প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি গত ২৬ মে এক বক্তৃতায় দাবি করেছেন, প্রাচীন ভারতের সর্বপ্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল মাদ্রাসাকেন্দ্রিক, যা হিন্দুদের বৈদিক শিক্ষার মতো ছিল না। বৈদিক কথাটি এসেছে সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বেদ থেকে। আর বেদ ছিল বৈদিক শিক্ষার মূল উৎস। ভারতে প্রাচীনকালে সর্বসাধারণের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত ছিল না। শিক্ষা ছিল কেবল শাসক, পুরোহিত ও সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য।

চতুর্বণের সর্বনিম্ন স্তরে থাকা শূদ্রদের এবং সব বর্ণের নারীদের, শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। প্রাচীন ভারতে শূদ্ররা ছিল জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ। তাদের সবার জন্য মন্ত্র উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ। প্রাচীন ভারতে বেদ পাঠ ছিল শিক্ষালাভের একটি প্রধান দিক। তিনি বলেন, প্রাচীন ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে সময় পার্থিব জীবনের তুলনায় আধ্যাত্মিকতায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো। যার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ঘটেছে তৎকালীন শিক্ষাদর্শনেও। পক্ষান্তরে, মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আত্মসম্মানবোধ এবং সহানুভূতির শিক্ষা দেওয়া হতো এবং এখনও দেওয়া হচ্ছে। ওয়াইসি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ইসলাম শিক্ষার পাশাপাশি বহু মাদ্রাসায় বিজ্ঞান, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান পড়ানো হয়।’ তিনি দাবি করেন, যে সময় সংঘ পরিবারের লোকেরা ব্রিটিশদের দালাল হিসেবে কাজ করত, সে সময় বহু মাদ্রাসা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিয়োজিত ছিল। ওয়াইসি আসামের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘অশিক্ষিত লোকেরা এসব বুঝবে না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, হিন্দু সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় কেন আরবি ও ফারসি শিখতে পাটনায় মাদ্রাসায় পড়েছেন? আসামের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মুসলমানদের জন্য মানহানিকর বলে মন্তব্য করে ওয়াইসি বলেন, ‘মুসলিমরা ভারতকে গ্রহণ করেছে এবং সেটা তারা অব্যাহত রাখবে।’ ব্যারিস্টার ওয়াইসি আরও বলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষিত। তাকে ভারতের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ভারত সরকার তার জন্মদিন ১১ নভেম্বরকে জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে অনেক আগে থেকেই। ব্যারিস্টার ওয়াইসি হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে এও বলেন, ‘তবে আমিও আপনার সঙ্গে একমত যে, যেহেতু মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে ওরকম উচ্চতর গবেষণার আগ্রহ নেই, আগ্রহ থাকলেও সুযোগ নেই, তাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের মাদ্রাসাগুলোর অতীতে স্বর্ণযুগ ছিল। সেটাকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে।’ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ভারতের শিক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ২৮টি অঙ্গরাজ্য ও ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৮টিতে সরকারিভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত উদ্যোগে আরও কিছু রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু এসব মাদ্রাসাকে আধুনিকায়নের পরিবর্তে বর্তমান বিজেপি সরকার ওঠেপড়ে লেগেছে সমূলে ধ্বংস করে দিতে।

ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসির যুক্তিভিত্তিক বিবৃতির পর বিজেপিসহ ভারতের রাজনীতিক অঙ্গনসহ, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী মহলে পক্ষে-বিপক্ষে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উন্মোচিত হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার অতীতের স্বর্ণালি অধ্যায় নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারতবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা হয় ৭১১ সালে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের কিছুকাল পরই। মুহাম্মদ ঘুরী দ্বাদশ শতকের শেষদিকে ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৯৩ সালে তিনি আজমিরে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মোগল আমলে ভারতবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তার ঘটে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্ম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। দিল্লিতে প্রথম মাদ্রাসা স্থাপিত হয় শামসুদ্দিন ইলতুতমিশের আমলে (১২১১-১২৩৬)। তার শাসনামলে গোটা দিল্লি নগরী তদানীন্তন ভারতের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছিল। দিল্লি সুলতানাতের পাঁচটি রাজবংশের মধ্যে তুঘলকদের আমলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় সবচেয়ে বেশি। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ২৫ নবছরের শাসনামলে কেবল দিল্লিতেই প্রায় এক হাজার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১১৯৭ সালে বখতিয়ার খিলজির সামরিক অভিযানের পর থেকে মাদ্রাসা ও মক্তব শাসকদের অনুদান পেতে থাকে। বখতিয়ার খিলজি নিজে এবং তার পরবর্তী শাসকরাও বেশ কিছু মাদ্রাসা স্থাপন করেন।

মোগল আমলে মাদ্রাসার সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। সম্রাট বাবরের আমলের (১৫২৬-১৫৩০) রাজদরবারের কাগজপত্র থেকে জানা যায়, বাবরের প্রশাসন মনে করত, জনগণের শিক্ষা হচ্ছে শাসকের দায়িত্ব। আকবরের আমলে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য একটি বিশেষ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-১৬২৭) একটি বিশেষ আইন জারি ছিল যে, যখন কোনো বিদেশি নাগরিক বা কোনো দেশীয় ব্যবসায়ী কোনো উত্তরাধিকারী না রেখে মৃত্যুবরণ করতেন, তখন তার রেখে যাওয়া ভবনগুলো মেরামত করে মাদ্রাসা কিংবা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হতো। মাদ্রাসায় শিক্ষিত ওলামাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে মোগল শাসকদের। এমনকি কোনো কোনো সম্রাট আলেমদের যুদ্ধক্ষেত্রেও নিয়ে যেতেন প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য। মোগল আমলে আলেমরা প্রধানত তিনটি বিশেষ কাজে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতেন-

এক. রাজপরিবারের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া।

দুই. আদালতে কাজীগিরি বা বিচারকের দায়িত্ব পালন এবং

তিন. সম্রাটদের বিভিন্ন রকমের দাতব্য তথা হেকিমি কাজকর্মের তদারকি করা।

এ বিষয়ে ইংরেজ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম হান্টার লিখেছেন, ‘কাজী অথবা মুসলমান আইনজ্ঞরা দেওয়ানি আদালতে বিচার করতেন। এমনকি, আমরা যখন সর্বপ্রথম শিক্ষিত বিলাতি দিয়ে এ দেশের বিচারকাজ চালানোর চেষ্টা করলাম, তখনও মুসলমান আইনজ্ঞরা আইনের পরামর্শদাতা হিসেবে তাদের সঙ্গে রীতিমতো ওঠবস করতেন। ইসলামি বিধিব্যবস্থাই এ দেশের আইন-কানুন ছিল এবং সরকারি ছোটখাটো অফিসগুলো মুসলমানদেরই সম্পত্তি ছিল। তারাই সরকারি ভাষা বলতে পারত এবং প্রচলিত ফারসি অক্ষরে লেখা সরকারি নথিপত্র একমাত্র তারাই পড়তে পারত।’ (উইলিয়াম হান্টার, দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস, আবদুল মওদুদ অনূদিত, আহমদ পাবলিশিং হাউস, বাংলাবাজার, ঢাকা, চতুর্থ মুদ্রণ, জুন ২০০৮, পৃ. ১০৯)।

সুতরাং এরপরও কি বোধোদয় ঘটবে না হিমন্ত বিশ্ব শর্মাদের!

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত