প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৯ নভেম্বর, ২০২২
মাত্র ২৮ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ কাতার পৃথিবীর কেবল সবচেয়ে ধনী দেশই নয়, এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত একটি দেশ। নিজস্ব ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখে ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বিশ্বকাপের বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে দেশটি। ফুটবল বিশ্বের সব পথ যেন মিশে গেছে মরুর দেশ কাতারে। কাতারে বর্তমানে অবস্থান করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফুটবলপ্রেমী দেড় মিলিয়ন মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। এত বিশাল সংখ্যক বিদেশির অবস্থান সত্ত্বেও নেই কোনো বিশৃঙ্খলা ও বেহায়াপনা-অশ্লীলতার ছিটেফোঁটা। সবকিছু চলছে কাতারের নিজস্ব ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে। কাতার ফিফা বিশ্বকাপ-২২ মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বের প্রথম বিশ্বকাপ। আর এশিয়ায় দ্বিতীয়। জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথভাবে আয়োজনের পর এশিয়ার একমাত্র একক আয়োজক দেশ হচ্ছে কাতার।
১১,৪৩৭ বর্গ কি.মি. আয়তনের ক্ষুদ্র দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০ হাজার কোটি ডলার আর মাথাপিছু আয় ৯৩ হাজার ৪০০ ডলার, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। কাতারের অর্থনীতি জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগই আসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানি থেকে। উপসাগরীয় ক্ষুদ্র এই দেশটি বিশ্বে নানা বিরোধ মীমাংসায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কাতারকে এখন বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় মধ্যস্থতাকারী দেশ। মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশের সংকটে দেশটি সৎ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। দোহার দূতিয়ালিতে বিবদমান পক্ষের মধ্যে বহু ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রথাগতভাবে কাতার প্রথম শ্রেণির মার্কিন মিত্র হলেও নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী একটি ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতি এবং তালেবানরা ফের ক্ষমতায় ফেরার পেছনে নীরব ভূমিকা রেখেছে কাতার। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানকে এক টেবিলে আনতে দীর্ঘ দিন ধরে মাঠ প্রস্তুত করেছিল দোহা। তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তি প্রক্রিয়ায় কাতারের ভূমিকা ছিল বিশাল ও বিস্তৃত। তালেবানের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছিল কাতার। গোষ্ঠীটিকে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে ভেতরে-বাইরে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে দেশটি। আফগানিস্তানের বর্তমান বাস্তবতার পেছনে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান কিংবা চীনের ভূমিকা সামনে এলেও আড়ালেই রয়েছে কাতারের অবদান। ২০১১ সালে দোহায় তালেবানকে রাজনৈতিক কার্যালয় খোলার অনুমতি দিয়েছিল কাতার। রাজতান্ত্রিক দেশ হয়েও কাতার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলে কেন বারবার ভূমিকা রাখছে- এই প্রশ্ন অনেকের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাতারের এই ভূমিকার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন এবং মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকার চেষ্টাই প্রধান উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করছে। সেই সঙ্গে রয়েছে কাতারের রাজ পরিবারের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্যদের আগ্রহ। প্রচুর পেট্টো-ডলারের বদৌলতে শান্তির প্রতিদান হিসেবে প্রয়োজনে আর্থিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়াও কাতারের পক্ষে সম্ভব। আফগান শান্তিচুক্তির আগে কাতার সুদানের দারফুরে শান্তিচুক্তি, লেবাননে গৃহযুদ্ধের অবসান ও জিবুতি-ইরিত্রিয়ার সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রেখেছে। শান্তিচুক্তির পর এসব দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে কাতার। আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি এবং সৌদির সঙ্গে ইরানের সমঝোতার জন্য এরই মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছে কাতার।
কাতার মিশরের ব্রাদারহুডসহ মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যমপন্থি বিভিন্ন ইসলামি গ্রুপের প্রতি বরাবরই সংবেদনশীল। পশ্চিমাদের চাপে বিভিন্ন দেশ ইসলামিক স্কলারদের নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করলেও কাতার এসব ইসলামিক স্কলারদের সাদরে গ্রহণ করে এবং তাদের অবাধে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যে কাতারই একমাত্র দেশ, যে নিজ দেশে আমেরিকার পাশাপাশি তুরস্ককেও সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যম আলজাজিরা চ্যানেল পৃথিবীর অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম। মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ কাতারের সঙ্গে রয়েছে শিয়া মুসলমান অধ্যুষিত ইরানের গভীর সম্পর্ক।
কাতারের এরকম ভূমিকা তার প্রতিবেশী সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর ও বাইরাইনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দেখা দেয়। এসব দেশের শাসকরা কাতারের আমিরের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে আরব বসন্তের উস্কানিদাতা বলে মনে করতে থাকেন। চ্যানেলটিতে যেভাবে আরব শাসকদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতেই ভয় দেশগুলোর। শাসকদের আশঙ্কা, এই সংবাদমাধ্যমের কারণে তাদের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠতে পারে। ২০১৭ সাল থেকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ও আরব আমিরাতের তৎকালীন প্রিন্স বর্তমানে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ কাতার আক্রমণের ছক আঁকতে শুরু করে। প্রথমে শুরু হয় বাগ্যুদ্ধ। সৌদি কর্তৃপক্ষের ভাষায়, কাতারের আমির একজন ‘বেপরোয়া শাসক’। অন্যদিকে কাতারের মতে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান একজন ‘প্রমোদ বালক’ এবং আরব আমিরাতের মুহাম্মদ বিন জায়েদ একজন ‘ক্রীড়নক’ মাত্র।
২০১৭ সালের জুন মাসের ৭ তারিখ। গ্রীষ্মের সকালে কাতারবাসীর ঘুম ভেঙেছিল সৌদি-আমিরাত জোটের অবরোধের সংবাদ শুনে। অবরোধ অবসানে মোট শর্তের সংখ্যা ছিল ১৩টি। বিশ্বের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম আলজাজিরার দরজা সিলগালা করা ছাড়াও ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসকে অর্থসাহায্য এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়া অন্যতম শর্ত ছিল। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক শর্ত ছিল দোহায় তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করা। শর্তারোপের পাশাপাশি সৌদি বলয়ের আচমকা হামলা করে কাতার দখলের হুমকিও ছিল।
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন যেভাবে কুয়েত দখল করেছিলেন, সৌদি আরব ও তার মিত্ররাও একইভাবে কাতার দখল করতে চেয়েছিল। এরই মধ্যে তুরস্কের সৈন্যরা কাতারে এসে পৌঁছে সীমান্ত এলাকায় একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে, যাতে সৌদি বাহিনী দ্রুততার সঙ্গে কাতারে প্রবেশ করতে না পারে। ইরান তার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয় কাতারকে। তুরস্ক ও ইরানের পররাষ্ট্রনীতি কাতারকে ঘিরে নতুন মাত্রা লাভ করে। দোহা দুর্দান্তভাবে সৌদি বলয়ের অবরোধ মোকাবিলা করেছে। কাতার কোনো শর্ত তো মানেইনি, বরং আগের পথেই হেঁটেছে, সৌদি বলয়ের বিরোধীদের একত্র করেছে এবং তুরস্ক, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানকে কাছে টেনে নিজস্ব বলয়ের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। দ্য ইকোনমিস্ট ওই সময়ে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছিল, সৌদি জোটের অবরোধকে কাজে লাগিয়ে নিজ দেশের মানুষকে তীব্র জাতীয়তাবাদী করে তুলছেন কাতারের বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি।
ব্যর্থ অবরোধের দরুন ব্যক্তিগতভাবে বিন সালমান এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদি আরব ইমেজ সংকটে পড়ে। অবরোধের একটি শর্তও কাতারকে মেনে নিতে বাধ্য করাতে পারেননি বিন সালমান এবং মুহাম্মদ বিন জায়েদ। অর্থপূর্ণ রাজনীতির ময়দানে মুহাম্মদ বিন সালমান এবং মুহাম্মদ বিন জায়েদ ক্রমাগত হেরে গেছেন। ম্রিয়মাণ হয়েছে আরব বিশ্বের একক কণ্ঠস্বর হওয়ার স্বপ্ন। শূন্যস্থান কিঞ্চিৎ হলেও পূরণে সক্ষম হয়েছে কাতার-তুরস্ক বলয়। দিনে দিনে সালমান যতটাই ফ্যাকাশে হয়েছেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ততটাই নির্ভীক হয়ে চলেছেন। তিন বছর পর স্বেচ্ছায় কাতারের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে বাধ্য হয় সৌদি-আমিরাত জোট। এমন বর্ণনাও পাওয়া যায় যে, তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সৌদি নেতৃত্বাধীন এই আগ্রাসনের বিরোধী ছিলেন। তাঁরা নাকি তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ১০ হাজারের বিশাল বাহিনীর অবস্থানকালে কাউকে দেশটিতে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ দিলে বিশ্বব্যাপী মার্কিন গ্রহণযোগ্যতা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হবে। এ অবস্থায় ট্রাম্প কাতারে হামলা পরিকল্পনা বাতিল করতে যুবরাজ সালমানকে চাপ দেন। ফলে সৌদি জোট হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর আগ্রাসনের হুমকি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের সমরাস্ত্রের ভান্ডার বাড়াতে এরই মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাকাক্সক্ষী পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি বিমান এবং নৌবাহিনীকেও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করছে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের কুয়েত দখলের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাতার আগে থেকেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। কাতারের অনুরোধে বৃহত্তম আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) অগ্রবর্তী সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। এই ঘাঁটি স্থাপন করতে দিয়ে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়। পাশাপাশি ২০১৬ সালে তুরস্ককেও একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে দেয় কাতার। তুরস্কের সেনারা সেখানে কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। এর মাধ্যমে তুরস্ক এই বার্তা প্রদান করে যে, কাতার একা নয়, তার সঙ্গে তুরস্কও রয়েছে। সৌদি জোটের অবরোধের সময় ক্ষীপ্রগতিতে সেনাবাহিনী প্রেরণ এবং খাদ্য ও রসদ দিয়ে বলতে গেলে এরদোগান একাই সৌদি জোটের অবরোধ ও আগ্রাসনকে ভ-ুল করে দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে কাতার সফরকালে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পিতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের বিমান বাহিনীর সঙ্গে শক্তির পার্থক্য ঘোঁচাতে ও ভারসাম্য আনতে কাতারও অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান কেনার প্রতি মনোযোগী হয়। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৪টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৬০০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়া ২০১৮ সালে আরও ১২ যুদ্ধবিমান কেনার অর্ডার দেওয়া হয়। এ নিয়ে রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে মোট ৩৬টি। আরও ৩৬টি কেনার কথা জানিয়েছে। শুধু রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েই থেমে থাকেনি, ২০১৭ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ৩৬টি অত্যাধুনিক এফ-১৫ কিউ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই বিমানটি যে কোনো ধরনের জঙ্গি বিমানের সঙ্গে যুদ্ধে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে সক্ষম। দূরপাল্লার স্থল অভিযান চালাতেও এই যুদ্ধবিমানের কোনো জুড়ি নেই।
কাতার তার বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও একে বহুমুখী করার জন্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ২৪টি টাইফুন যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে। এটিও বর্তমান সময়ে উচ্চ প্রযুক্তির একটি যুদ্ধবিমান এবং আকাশে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম। বিমানটির বিভিন্ন ধরনের অভিযান চালানোর সক্ষমতা রয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্য ও কাতারের বিমানবাহিনী টাইফুন জঙ্গি বিমান দিয়ে একটি যুদ্ধ মহড়া পরিচালনা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্ক- এই চারটি দেশই কাতারের পাইলটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া গ্রাউন্ড ক্রুদের প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সহায়তাও দিয়ে থাকে। যেখানে কাতারের বিমানবাহিনীতে আগে মাত্র ১২টি যুদ্ধবিমান ছিল, আগামী কিছু দিনের মধ্যেই তা ৯৬টিতে গিয়ে দাঁড়াবে। এগুলোর বেশিরভাগই হবে বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিমান। ফলে কাতারের বিমানবাহিনী হবে এই অঞ্চলের বিমানবাহিনীগুলোর মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী। কাতার তুরস্কের সমরাস্ত্র শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। সম্প্রতি তুরস্কের কাছ থেকে ছয়টি বেরেকতার টিবি ২ ড্রোন কিনেছে। এছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য তুরস্কে নির্মিত দুটি বড় আকারের ক্যাডেট প্রশিক্ষণ জাহাজও কিনেছে। একই সঙ্গে কোস্টগার্ডের জন্য অনেকগুলো দ্রুতগামী টহল বোটও কেনা হয়েছে কাতার নৌবাহিনীর জন্য। তুরস্ক কাতারের জন্য নির্মাণ করছে বিমানবাহী রণতরী।
সশস্ত্র বাহিনীর দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটানোর ক্ষেত্রে কাতারের অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জনশক্তি। মাত্র ২৮ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট এই দেশটিতে একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের জন্য অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহারের উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল তৈরি করাটাও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাতার দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। মাত্র কয়েক বছর আগেও যে দেশটি ছিল সামরিক দিকে থেকে একেবারেই হিসাবের বাইরে, সেই দেশটি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। নিজের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও মিত্রদের সহায়তায় কাতার এখন সমীহ করার মতো একটি আঞ্চলিক শক্তি।
লেখক : কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক