ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা রোধে আলেমদের দায়িত্ব

জুবায়ের আহমেদ
ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা রোধে আলেমদের দায়িত্ব

আল্লাহ তায়ালা জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। জিন জাতি অপ্রকাশ্য হলেও ইনসান তথা মানুষই পৃথিবীতে প্রকাশ্যভাবে বসবাস করে। মানবজাতিকে তৈরি করা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে। আর প্রত্যেক নরনারীর ওপরই কোরআন শিক্ষা করা ফরজ করা হয়েছে। মুসলিমরা পবিত্র কোরআনের অনুসারী হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে ধর্মকর্মের জন্য কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করলেও হাফেজ, মুফতি, মোহাদ্দেস তথা আলেম-ওলামারা কোরআন-হাদিসের পূর্ণ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মুসলিমসহ সমগ্র মানবজাতির মানে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারের মাধ্যমে ইসলামি জ্ঞানার্জন এবং দৈনন্দিন জীবনে ইসলামি বিধি বিধান প্রয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। মুসলমানরাও আলেম-ওলামাদের থেকে শেখেন এবং তাদের অনুসরণ করেন ধর্মীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ে।

মাহফিল অর্থ মিলনমেলা, মিলনায়তন, আর ওয়াজ অর্থ উপদেশ, নসিহত, বক্তব্য। ধর্মপ্রাণ মানুষ এক জায়গায় জমায়েত হয়ে ধর্মীয় বক্তাদের কাছ থেকে যে উপদশে ও বক্তব্য শ্রবণ করেন প্রচলিত অর্থে তাকেই ওয়াজ মাহফিল বলা হয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম, মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান, ইসলামের বাণী প্রচার, সাধারণ মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে জানার ও দৈনন্দিন জীবন ইসলামের বিধান প্রয়োগের জন্য জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্য ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে ইসলামি আদর্শে জীবন পরিচালনার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা; কিন্তু আজকাল আলেম-ওলামাদের মধ্যে একে অপরের সমালোচনা ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে দেশব্যাপী ওয়াজ মাহফিল বেশি হয় বিধায় এ সময় মাহফিলে কোরআন-হাদিসের আলোচনা হওয়ার পাশাপাশি বক্তাদের ভুলত্রুটি হলে তা নিয়ে সমালোচনা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর মতো ঘটনা ঘটে। যার কারণে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত হন এবং পক্ষবিপক্ষ নিয়ে সমালোচনার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ওয়াজ মাহফিল সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৬টি সুপারিশ হলো- ১. হুজুররা যেন বাস্তবধর্মী ও ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা করা, এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। ২. যারা ওয়াজের নামে হাস্যকর ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করার চেষ্টা চালান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রো-অ্যাকটিভ উদ্বুদ্ধিকরণ। ৩. অনেক আলেমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রির মতো উচ্চশিক্ষা ব্যতীত যারা ওয়াজ করেন, তারাই জঙ্গিবাদ ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাই মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষিত ওয়াজকারীর নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা। ৪. অনেকেই আছেন, যারা হেলিকাপ্টারে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন এবং ঘণ্টাচুক্তিতে বক্তব্য দিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তারা নিয়মিত ও সঠিকভাবে আয়কর প্রদান করেন কি-না, তা নজরদারির জন্য আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কমতৎপরতা বৃদ্ধি করা। ৫. ওয়াজি হুজুরদের বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া এবং উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বক্তব্য দিলে তাদের সতর্ক করা। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়াজ করার অনুমতি না দেওয়া। ৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনা।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ছয়টি সুপারিশ বিবেচনায় রাখা আলেম-ওলামাদের কর্তব্য। তাছাড়া আলেম-ওলামাদের যারা অনুসরণ করেন তাদের মধ্যে যেন ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তি না ছাড়ায় তার জন্য আলেম-ওলামাদের মধ্যে যৎসামান্য ভিন্নমতকে একপাশে রেখে মিলের জায়গাগুলো নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার মাধ্যমে দেশব্যাপী সব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। কোনো আলেম ভুল বক্তব্য প্রদান করলে তা সুন্দরভাবে শুধরে দেওয়া, সত্যটা কি হবে তা জানিয়ে দিলে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় থাকে। মনে রাখতে হবে, আলেম-ওলামাদের মানুষ পছন্দ করেন এবং তাদের মন্তব্যগুলোকে মানুষ গ্রহণ করেন। আলেম-ওলামারা যেন এমন কিছু না করেন, যাতে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ফাটল তৈরি করে। আলেম-ওলামারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং মাহফিলে একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মেতে না উঠে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠলে আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা কমবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত