তুমি কারো কাছের নাকি দূরের তা তোমার কথা ও আচরণ নির্ধারণ করবে। কেউ ভৌগোলিকভাবে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করেও খুব আপন। আবার কেউ কেউ পাশাপাশি থেকে খুব দূরের। মানুষের কথাতেই মানুষ আপন হয়। কথার খোঁচাতেই মানুষ দূরে যায়। কারো কাছে, কারো নামে এমন কোনো কথা বলা উচিত হবে না, যাতে তেমন কথা কথকের নামে কেউ বললে কথকও ব্যথা পেতো। অন্যদের যে আচরণে অপমান অনুভূত হয় তেমন কোনো আচরণ কেউ কারো সাথে না করুক। মানুষকে আপন করার মধ্যে মহত্ত্ব আছে কিন্তু দূরে ঠেলার মধ্যে কৃতিত্ব নাই। শরীরের ব্যথা মিলিয়ে যায় কিন্তু মানুষ মনের ব্যথা খুব সহজে ভুলতে পারে না। কেউ কেউ মানুষকে ব্যথা দিয়ে মজা পায়। তারা যে মানুষের মন থেকে উঠে যায়, কত দূরে যায় তা একবারও ভাবে না। আত্মসম্মানবিহীন মানুষের সংখ্যা চারিদিকে খুব কম। কেউ পেশায় ছোট হলেও, সমাজিক অবস্থানে ক্ষুদ্র হলেও তাকে কথা ও আচরণে কষ্ট দেয়া মানবিক নয়। কথার কষ্ট ক্ষুধার কষ্টের চেয়েও সাংঘাতিক বেদনার সৃষ্টি করে। কেউ যদি একবার মন থেকে উঠে যায়, সে যত বিখ্যাত ও বৃহত্তর হোক- পূর্বের অবস্থানে, সম্মানে-শ্রদ্ধায় কিংবা ভালোবাসায় আর ফিরতে পারে না। মন সবকিছু মনে রাখে। কে তাকে কবে কী বলেছিল, কেমন করে বলেছিল কিংবা কোন স্বর ও সুরে বলেছিল- মন সেসবের কিছুই ভোলে না। মানুষের কথা শুনে, আচরণ মেপে মন মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করে। কাউকে মনে রাখে, কাউকে দূরে ঠেলে।
কাছে থেকে দূরের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাকে সফলতা ভাবার কোন সুযোগ নাই। রোজ কথা হয়, দেখা হয় কিন্তু কেউ কারো মনের আপন নয়- এটা আচরণ বুঝিয়ে দেয়। এই যে মন থেকে উঠে যাওয়া তা একদিনে কিংবা একটি-দুটি কথার দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। অপমান-অবহেলা জমে জমে, কথার খোঁচা পেতে পেতে মন একদিন বিদ্রোহ করে বসে। চেনা মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, চেনা পথ পাল্টে দেয়। তবুও মানুষ কুকথার তীর থামায় না। আড়ালে নিন্দা করতে ছাড়ে না। মানুষের যে মানবিক আচরণ, যা যা দায়িত্ব তা ভুলে গিয়ে দম্ভণ্ডঅহংকারে ডুবে যায়। অন্যকে শত্রু বানাতে তেড়ে আসে। মনের অবস্থান পাল্টে যেতে, শ্রদ্ধা-সম্মান হারিয়ে যেতে কিংবা বিশ্বাস-ভরসা নড়ে যেতে খুব বেশি কথা লাগে না। লাগামহীন শক্ত কথা সম্পর্কের রূপ বদলে দেয়।
একটু একটু কোমল কথা, ছাড়ের মানসিকতা এবং সুন্দর আচরণ- মানুষ মানুষের যে কতখানি আপন করতে পারে তা ভাবনারও অতীত। সুখে-দুঃখে পাশাপাশি বাঁচা, একসাথে মরতে চাওয়া- এসব কথা ও আচরণে সৃষ্টি হয়। অচেনা মানুষের সামনেও হাসিমুখে কথা বললে বড্ড আপন হওয়া যায়। যাদের সাথে জীবনে মাত্র একবার দেখা হয়েছে সেখানেও ভালো আচরণ রেখে এলে মানুষ মনে রাখে। যে কোনো ব্যাপারে ছাড়ের মানসিকতা, ভুল স্বীকার করা, যত্রতত্র দোষ না ধরা কিংবা অহেতুক অভিযোগহীন একটা জীবন গড়তে পারলে জীবনে সন্তুষ্টির প্রগাঢ়তা ও প্রসার বাড়বে। অল্পে তুষ্টির জীবনকে প্রভু সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি দিয়ে ভরিয়ে দেন। মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি অন্যকোনো প্রাপ্তি দিয়ে মাপা যায় না। সীমাহীন সম্পদ, মাত্রাতিরিক্ত ভোগ এবং রাজ্যের ক্ষুধা- এসব মানুষকে অশান্তিতে ডুবায়। স্থূল সুখ মানুষকে মুক্তি দিতে পারে না। মানুষের সাথে হেসে কথা বলা, ভালো আচরণ করা- এসব পরবর্তী প্রজন্মের পথ চলাকেও সহজ করে। মা ভালো, বাবা ভদ্র- এসব গুণাগুণ সন্তানদের মানুষের কাছে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করে।