প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
কিছু কিছু মানুষকে জীবনের অ্যাকাউন্ট থেকে চিরতরে ডিলেট করে দিতে হয়। পথ চলতে কিংবা ভালোভাবে বাঁচতে টক্সিক মানুষগুলোর নাম পুরোপুরি বাতিলের খাতায় তুলে না দিলে সময় বাজে দিকে ছুটবে। যারা মন খারাপ করে দেয়- তাদের মতো শত্রু মর্ত্যলোকে আর কেউ আছে? কথার খোঁচায় মন খারাপ করে দেয়া মানে একটা সুন্দর দিন নষ্ট করে দেয়া। বিশ্বাস ভাঙ্গা মানে একটা সমস্ত সন্ধ্যা দুঃসহ করে তোলা। প্রতিশ্রুতি না রাখা মানে গোটা রাতকে নির্ঘুম চোখের জলে পাহারা দেয়া। যারা আপনাকে স্বার্থে ব্যবহার করে- সেটা বুঝেও সেখানে পড়ে আছেন- আপনার দুঃখ ঘুচাবে কে? যারা প্রয়োজনে প্রিয়জন সাজে আপনিও তাদের অন্তত আপনার মূল্য বুঝিয়ে দিন। যারা আপনাকে সস্তায় পেয়ে বসবে তারা আপনাকে শুষে নিঃশেষ না করা পর্যন্ত পিছু ছাড়বে না। জীবনে একটু কম উদার হন। আপনারও ভালো থাকা জরুরি। ভালো থাকতে চায়- এমন একটা মন আপনার মধ্যেও বাস করে। যারা পেছনে আপনার নামে কুৎসা রটায় তা যদি কোনোদিন শুনে ফেলেন তবে খাতির বাড়াতে যাবেন না। যারা স্বার্থের জন্য আপনাকে বিক্রি করতে পারে তাদের কখনোই বিশ্বাস করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ভালো থাকতে পাঁচশ’ মানুষ লাগে না। যারা আপনাকে অন্যায়ের দিকে প্ররোচিত করে, মন্দ কাজের সঙ্গী হতে প্রেরণা দেয় তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করুন। বয়কট করুন গোটা দুর্নীতিবাজের চক্রকে। যাদের নিঃশ্বাসে বিষ তাদের থেকে দূরে থাকুন। যে আসরে ষড়যন্ত্র হয়, অন্যের নামে মিথ্যা অপবাদ ওঠে সে আসরে বসলে আপনারও হাশর নষ্ট হবে। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা খুব জরুরি। যেখানে সম্মান থাকবে সেখানে মিশে থাকা মানুষের দায়িত্ব। কারো ক্ষতির কারণ না হয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকলেও সেটা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সম্মান- সম্পদে নয় বরং ব্যক্তিত্বে। বিবেক বেচে দিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করলে শেষমেশ সবকিছু বুমেরাং হবে। যারা আপনাকে স্বার্থে ব্যবহার করে এবং প্রয়োজন ফুরালে ছুড়ে ফেলে দেয় তাদের কাছে দ্বিতীয়বার গিয়ে আঘাত পেলে আপনি নির্লজ্জ-বেহায়া-বেশরম। কখনো কখনো কাছের মানুষের সাথের ক্ষতিকর সম্পর্কের বলিদান করেও নিজেকে ভালো রাখার চুক্তি করতে হয়। যতই প্রিয়জন সাজুক- যারা গুঁতো দিয়ে কথা বলে, কথায়-কাজে ছুতো ধরে তারা সুবিধার লোক নয়। বিশ্বস্ত মানুষকে জীবনের অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় করতে হয়। যারা ব্যথা দেবে না বরং জড়িয়ে রাখবে- এমন সুজন দুজন হলেও একজীবন সুন্দরভাবে কাটবে। ভালো থাকার জন্য এবং ভালো রাখার জন্য দুনিয়ার অনেক মানুষের প্রয়োজন হয় না। বরং ঘরের অল্প সংখ্যক মানুষও খুব যতনে সঙ্গ দিতে পারে। মানুষ খুঁজুন, মানুষ ভজুন। যারা সংক্রামক তাদের থেকে দূরে থাকুন। দিনশেষ নিজের ভালো থাকাটাই জরুরি। সেটাই আসল হিসাব। তবে নিজেকে স্বার্থপর করে নয়।
প্রয়োজনে যাদের পাশে পাওয়া যায় না, বিপদে যারা ছায়া হয় না- তারা দেহের যত পাশে থাকুক, মনের কেউ নয়। কত মানুষ আশপাশে আছে অথচ দুর্দিনে কতজনে সাড়া দেবে? যারা ঢাল হয়ে বাঁচায় তারা বাজারের মানুষ হতে পারে তবে তারাই প্রাণের মানুষ। মানুষ জমালে আন্তরিক মানুষ, পরোপকারী মানুষ কিংবা বিশ্বাসঘাতক নয় এমন মানুষ জমাতে হয়। দিনশেষে যাদের ডাকলে পাওয়া যায়, স্বার্থ ছাড়াই হাজির হয় এবং মন থেকে শুভকামনা জানায়- তাদের হারিয়ে যেতে দিয়েন না। মানুষ যে সম্পদের চেয়েও শ্রেয় সেটা দুর্দিনে অনুধাবন করা যায়। একজন বিশ্বস্ত সহচর লক্ষ কোটি গোলাপের চেয়েও বেশি সৌন্দর্য বহন করে। খারাপ মানুষের থেকে কদর্য দুর্গন্ধ বের হয়। কাজেই আপন করার মন্ত্র মনের মধ্যে লালন করতে হবে।
মানুষ মানুষের হলে এত অশান্তি থাকতো না। মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে যা নিয়ে শত্রুতা করে তা তুচ্ছ। অথচ সম্পর্কের মূল্য আপন হলে লোভ-ক্ষোভ দানা বাঁধতো না। শুধু আমিত্বের কারণে ভেঙে যায় কত ঘর, দূরে যায় কত মানুষ। মানুষ যদি একটু নত হতো, বিশ্বাস ধরে রাখতো এবং স্বার্থপর না হতো তবে মানুষের সুবাসে আশপাশের ফুল বিমোহিত হতো। অথচ হয় কি? মানুষ কুকুর-কাকের থেকেও অধম আচরণ করে। স্বার্থের জন্য ইতি টানে সম্পর্কের। প্রলোভনে কেউ কেউ ঘর ভাঙে। সুযোগ পেলেই হানে মারাত্মক আঘাত। বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মনের ঘরে করে ডাকাতি। সুতরাং নিজেকে ভালো রাখতে এবং মানসিকভাবে ভালো থাকতে বিষাক্ত মানুষকে জীবনের চৌহদ্দি থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে হবে। দিনশেষে মানসিক প্রশান্তির মতো আত্মতৃপ্তির আর কোনো বিকল্প নেই। ভালো থাকুন, নিজেকে ভালো রাখুন।