ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের এখনই সময়

সুফল পাবে দুই কোটি মানুষ
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের এখনই সময়

১৯৭২ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন। সেই থেকে বৈঠকের পর বৈঠক আর আলোচনা হলেও এখনো সমাধান হয়নি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার। হয়নি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। ফলে বাংলাদেশ অংশে শুষ্ক মৌসুমে নদী পানিশূন্য থাকায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতি। তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

ভারতের সাথে চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ তিস্তা নদীতে একটি বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশকে এক দিকে যেমন ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না, তেমনি পুরো এলাকায় অভাবনীয় পরিবর্তনের পাশাপাশি বদলে যাবে উত্তরের পাঁচ জেলার দুই কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় এ প্রকল্প নিয়ে ভারত-চীনের অবস্থান বিপরীতমুখী হওয়ায় বাংলাদেশ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক পা এগোলে দুই পা পিছিয়েছে। অথচ ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিশাল জনপদে দেখা দেয়া মরুকরণ প্রক্রিয়া ঠেকানোর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের এই প্রকল্প পুরোপুরি আত্মরক্ষামূলক।

শুরু থেকে এই প্রকল্পে সহায়তায় আগ্রহী চীন, বিগত সরকার চীনের পক্ষে সায় দিয়েছিল; কিন্তু দিল্লির আপত্তিতে তাঁবেদার সরকার অতিপ্রয়োজনীয় প্রকল্পটি নিয়ে আর সামনে এগোয়নি। উপরন্তু দেখা যায়, চীনকে বাদ দিয়ে পরে ভারতকে এই প্রকল্পের কাজ দিতে উদ্যোগী হয়। এ নিয়ে তখন ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন তৈরি হয়। কিন্তু এর কিছুদিনের ব্যবধানে জুলাই বিপ্লবে হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে এখন অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চীন এরইমধ্যে একটি প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য আমাদের আর ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।

পানি নিয়ে ভারতের হঠকারিতায় তিস্তা তীরবর্তী ও আশপাশের প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বুকজুড়ে থাকে বালু আর বালু। সাথে অজস্র্র পাথর আর নুড়ি। অন্য দিকে বর্ষাকালে তিস্তা প্রচণ্ড বেগে আছড়ে পড়ে দুই তীরে। তীব্র নদীভাঙনে প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে পথে বসছেন।

তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীর গভীরতা ১০ মিটার বাড়বে, বর্ষা মৌসুমে বন্যায় প্লাবিত হবে না কোনো জনপদ। সারা বছর নৌ-চলাচলের মতো পানি থাকবে। এতে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুই পাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে উপশহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে। নৌবন্দর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পাড়ে থানা, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে প্রকল্পে। তিস্তা ইস্যুর নিষ্পত্তি হলে বাংলাদেশের ওপর ভারতের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব আর থাকবে না।

আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথে বাংলাদেশের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের এখনই মোক্ষম সময়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত