ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাহির দেখে বিচার করা অভিনয়ে ভালো থাকা!

রাজু আহমেদ
বাহির দেখে বিচার করা অভিনয়ে ভালো থাকা!

বাহিরে হাসি দেখানো আর ভেতরে ভালো থাকাণ্ড ঢের তফাৎ আছে। সময়ের প্রয়োজ্বনে, নিত্যকার জীবনযাপনে কতরকমের অভিনয় করতে হয়! ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে তবুও বলতে হয়- এইতো বেশ ভালো আছি। পারিপার্শ্বিকতা নানাভাবে দুঃখ দেয়, প্রিয়জ্বন আঘাত করেই সুখ পায় কিংবা প্রয়োজ্বনে স্বার্থের টানে দূরে যায়- এভাবেই ব্যথার তরী ভরে ওঠে।

শত বেদনার মাঝেও নানা পোশাকে সাজ্বতে হয়, বাহারি ঢঙে ছবি তুলতে হয় কিংবা নানা ভাঁজের কথা বলতে হয়! আদতে ভালো না থাকলে এই সমাজ্ব-সভ্যতার কিছু যায়-আসে না কিন্তু ভালো না থেকেও যদি ভালো থাকার অভিনয় না করেন তবে সবাই তিক্ত কথায় জাপটে ধরে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তৃপ্তি খোঁজে কিংবা পাছের কথায় ঝড় ছোটাবে! সমাজ্ব-সংসার বাহির দেখে বিচার করে! ভালো থাকা, না থাকা যে ভেতরে থাকে সে বুঝ ক’জ্বনে বোঝে? দরদ আর ক’জ্বনে ধরে! আঘাত করতে করতেও কামনা করে আঘাতপ্রাপ্ত পৃথিবীকে জানাতে বলুক- ভালো আছি! সবাইকে দেখিয়ে দিক- সুখে আছি! অথচ ভেতরটা দেখানো যায় না। কখনো কখনো দেখানো হয় না! কাউকে কাউকে দেখাতে ইচ্ছাও করে না! কেউ কেউ দেখতেও চায় না বা পায় না। সমাজ্ব বাহ্যরূপ দেখে মানুষের বিচার করে বলে চির দুঃখীজ্বনও ভালোর ছদ্মাবরণে সমাজ্বকে ঈর্ষান্বিত করে রাখতে চায়! আসলেই ভালো আছি- এটা সমাজ্বস্থদের হিংসার মহান কারণ! কেউ মহাদুঃখে আছে- সমাজ্ব এমন কাউকে পেলে খুব সন্তুষ্ট হয়! বেদনার বড় বড় পাহাড় সেখানে চাপিয়ে দিয়ে মহানন্দ পায়! সমাজের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে তাই ভালো থাকার অভিনয় এই এখানে নতুন কিছু নয়। সেজ্বন্যই বাথরুমে জ্বড়ানো অশ্রুফোঁটার খোঁজ্ব বেডরুমের সহবাসী বহুলাংশেই জানে না। একাকীত্বের যাতনা আড্ডায় কেউ কোনোদিন তোলে না। বৃষ্টির সাথে মিশে যায় চোখের পানি! বালিশ শুষে নেয় যে নোনাজ্বল সেটাই আসল আপনি-আমি! দুঃখগুলো কেউ ধরে ফেলুক, নিজ্বস্বতা কেউ জেনে যাক, বাধ্য না হলে এসব কাউকে কখনোই জানানো হয় না। জীবনটা মানাতে মানাতে চলে যায়। রেখে যায় স্মৃতিচিহ্ন! যার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কেউ খোঁজে না। যে দুঃখের কেউ ভাগীদার হয় না, যে ব্যথায় কেউ মমত্বের স্পর্শ দেয় না কিংবা সুজ্বন হয়ে সান্ত¦নার অংশীজ্বন পর্যন্ত হয় না, সেখানে কষ্ট-ব্যথার হাঁটবার বসালে কেউ দরদাম করার প্রয়োজ্বনও মনে করবে না! প্রয়োজ্বনের পৃথিবীতে প্রিয়জ্বনের সাথে জ্যোছনা দেখা, বারিষ ছোঁয়া কিংবা নদীর তীরে হাঁটা-এমন সৌভাগ্য খুব কম মানুষের হয়! ভুল মানুষের সাথে বেদিক যাত্রা করে আফসোসে বলি- ভুল হয়ে গেছে বিলকুল! জীবনে দুঃখ জ্বড়ো হতে থাকে! এক পাহাড় দুঃখ থেকে দু’টো দুঃখ কাউকে বিশ্বাস করে তুলে দিয়ে দুঃখ আরও বাড়াই! কেননা শখের বেপারি দুঃখ নিয়ে কারবার করতেই ভালোবাসে! সে জিম্মি করে, সুযোগে দুর্বলতায় আঘাত হানে! লোকে লোকে বলে- অমুকের এমন দুঃখ, তমুকের তেমন! সুখের রাজ্য থেকে সুখ কুড়ানোর হাতের অন্ত নেই কিন্তু দুঃখ নেয়ার ভাগীদার ধরাধামে জোটে না! কাজেই দুঃখগুলো বুকের বামপাশে খুব যতনে জ্বমা রেখে রোজ্ব একচিলতে লম্বা হাসিতে বলতেই হয়- ভালো আছি! তোমরাও ভালো থেকো। আমি যে সুখী- নানা কসরতে সেটা জানাতে হয়! মিথ্যার বেসাতিতে ভালো থাকার গল্প সাজাতে হয়! যদি ধরা পড়ে যাই- এই ভয়ে মুখের সারল্য বাড়াতে হয়! দুঃখ এখানে পাপ! পাপ দেখানো আরো বড় পাপ! কাজেই মিথ্যা সুখে জীবন উৎসর্গ করতে হবে! ভালো আছি- বলে বলে জিহ্বার তেজ্ব বাড়াতে হবে! একদিন ঠিক ধরা পড়ে যায় মনের খবর! জানাজানি হয়, অতঃপর রচিত হয় কবর! সাহসীরা স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে লয় আর দুর্বলরা নিত্যদিনে কয়েকবার করে মরে। সুখের ভান ধরে আর বহ্নিশিখায় পুড়ে! ভালো নেই- কেন এই সত্য মানুষ স্পষ্টভাবে বলতে পারে না? সত্য বলতে পারলে বুকের ভেতরটা হালকা হতো! ফলকা হয়ে একসাগর দুঃখ শুঁকিয়ে যেতে পারতো! অথচ সমাজ্ব শেখায়- দুঃখকে যতভাবে পার লুকিয়ে রাখো! মিথ্যার মোড়কে, অসত্যের মুখোশে বারবার ভালো থাকার কথা বলো! সমাজের এই মন্দ নীতি মিথ্যা গীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে! এখানে হেরেও বলতে হবে জিতে গেছি! মরেও বলতে হবে বেঁচে আছি! অথচ সাধারণ সুন্দর হতে পারত! ভেতর-বাহিরের সমণ্ডআমি মুক্তিকামী-স্লোগানে স্লোগানে সত্যের জ্বয় হতে পারত। হয় না, কেন হতে দিই না- সেসব জানি না! জানলেও প্রথাভাঙা মানি না! কেমন আছ? ভালো আছি! - বলতে বলতে জীবনের ক্ষ্যান্ত খুঁজি!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত