দেশের যে কোনো স্থানে আগুন, ভূমিধস, বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলে, সেখানে হঠাৎ করে জ্বনতার ভিড় জ্বমে যায়। এসব মানুষ নিছক সেখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখতে থাকে। কেউ কেউ মোবাইলে সেখানকার চিত্র ধারণ করে। কেউ কেউ ভিডিও করে। গণমাধ্যমের কর্মীরাও তা সরাসরি প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া ইউটিউব যারা চালান তারাও ভিডিও করেন। এতে করে দুর্ঘটনাস্থলে মানুষের জ্বটলা বাড়তে থাকে। ফলে উদ্ধার কাজ্ব ব্যাহত হয়। সাধারণ ও অপ্রয়োজ্বনীয় মানুষ কেন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিড় করবে, সেই মনস্তাত্বিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অনাবশ্যক ভিড়ের কারণে দমকল বাহিনী ও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উৎসুক জ্বনতাকে নিবৃত্ত করার জ্বন্য কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কাজ্ব ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও রাজ্বধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘উৎসুক জ্বনতা’। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তেমন তৎপর দেখা যায় না। দাঁড়িয়ে ভিডিও করা, সাহায্য করার আগ্রহ থেকে ভিড় জ্বমানো এ যেন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড হয়ে উঠেছে। অথচ মূল কাজ্বটি যে ব্যাহত হচ্ছে, তা কারোর চিন্তাতে নেই। লোকজ্বনকে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন- ভোর, সকাল কিংবা মধ্যরাত যখনই আগুনের ঘটনা ঘটে, তার পরপরই উৎসুক জ্বনতার ভিড়ে আগুন নেভানোর স্বাভাবিক কাজ্বকর্ম ব্যাহত হয়।
আগুন লাগার পর কত দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, সেদিকেই বেশি তৎপর থাকেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয় আগুন নেভানোর কাজ্ব। ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে মাইকে কিংবা স্থানীয় ব্যক্তিরা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উৎসুক জ্বনতাকে ভিড় না করতে বললেও তারা শোনে না। বেইলি রোডের ঘটনায় দেখা যায়, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজ্বনরা। এসময় উৎসুক মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ে আগুন নেভানোর কাজ্ব ব্যাহত হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধার কাজ্ব বিঘ্নিত হওয়ায় এক পর্যায়ে ভবনটির সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের।
তবে দুর্যোগব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ দিয়ে জ্বনতার ভিড় ঠেকানো যাবে না। এজ্বন্য একটা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যদি একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়, তবে যেখান থেকে মানুষ সব তথ্য পাবে। তাহলে হয়তো ভিড় এড়ানো সম্ভব। আহতদের মধ্যে যাদের হাসপাতালে নেয়া হয়, তাদের নামণ্ডঠিকানা মাইকে ঘোষণা করা হলে অযথা ভিড় কমবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের অভিমত ‘যে কোনো দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় যাওয়ার আগে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়। তবে তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই ভিড় হয়ে যাওয়ায় তাদের কাজ্ব ব্যাহত হয়। দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানো ও উদ্ধারের দায়িত্ব পালন করেন।
ভিড় সামলানোর দায়িত্ব তাদের নয়।’ ঢাকার মতো যানজ্বটের শহরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে কিছুটা সময় লাগে উল্লেখ করে পুলিশ বলছে, ‘উৎসুক জ্বনতাকে শৃঙ্খলায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট থাকে। ঘটনাস্থলে অশিক্ষিত, শিক্ষিত নানা ধরনের মানুষ আসেন। তাদের সচেতন হতে হবে। যেখানে পুলিশের করণীয় নেই, সেখানে শুধু কৌতূহলবশত ভিড় বাড়ানো ঠিক না, সেটা বুঝতে হবে। সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। শৃঙ্খলায় রাখতে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে ব্যারিকেড দেয়, মানববন্ধন তৈরি করে ঘিরে রাখতে চেষ্টা করা হয়। আবার অনেকে আপনজ্বনের জ্বন্যও আসে। ফলে ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে অনাকাঙ্ক্ষিত জ্বনতার ভিড় কোনো অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত নয়। এজ্বন্য একটা বিধিবিধান প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।