ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ

অলোক আচার্য
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ

কবি উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের নারীর মূল্য কবিতার বাংলা অনুবাদ এরকম, আমি মনে করি, নারীরা একটু বোকা ধরনের হয়/নইলে নিজেদের তারা পুরুষের সমান ভাববে কেন?/তারা পুরুষদের চেয়ে অনেক অনেক উন্নত এবং সর্বকালের জন্য, চিরকালের জন্য তাই সত্য।/নারীকে যাই দাও না কেন, সে তাকে বাড়িয়ে তুলবে।/যদি একটি শুক্রাণু দাও তাকে, সে দেবে সন্তান।/যদি একটি ঘর দিতে পারো তাকে, সে দেবে সংসার। মুদির দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল, নুন এনে দাও/সে তোমাকে চমৎকার খারার রান্না করে খাওয়াবে। একটি হাসির বিনিময়ে সে তোমাকে দেবে হৃদয়। সে ছোটকে বড় এবং কমকে বেশি করতে জানে। আরও দুলাইন রয়েছে। কবির নারী সম্পর্কিত বর্ণনায় এত উঁচুতে স্থান দেয়া হয়েছে যে প্রকৃতপক্ষে আর কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।

মা, বোন, স্ত্রী অথবা কন্যা, যে রূপেই হোক না কেন, নারীর প্রেম পুরুষের প্রেম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও পবিত্র। উক্তিটি করেছেন। এইচ জি লরেন্স। নারী যা অবারিতভাবে দেয়, পুরুষ তা কার্পণ্য করে। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার নারী। আজকের এই সফলতায় যেমন পুরুষের অবদান রয়েছে তেমনি রয়েছে নারীদের অবদান। এই অবদান মনে করিয়ে দেয়- এ বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী আর অর্ধেক তার নর। কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই কবিতার লাইন। পৃথিবীর মঙ্গলময় সৃষ্টিতে নারীর রয়েছে সমান অবদান। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা কিন্তু অতীত কাল থেকেই নারীরা অবহেলিত। অথচ আমরা নারীর উপর সহিংসতার আগে ভুলেই যাই যে, এরকমই কোনো নারীর দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করা তীব্র যন্ত্রণা হাসিমুখে সহ্য করার কারণেই আজ আমরা এই পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আজ আমার যে অধিকার বলে চিৎকার করি সে অধিকার আদায়ের শুরুটা পৃথিবীর আলো দেখিয়ে একজন নারীই করেছে। দিন বদলের সাথে সাথে নারীদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করে নিতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। নারীর কাজ যে শুধু সন্তান জন্ম দান নয় তা বোঝাতেই কেটে গেছে অনেক বছর। নারীদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। ঘরের কোণ থেকে বের হয়ে আজ মহাশূন্য পর্যন্ত তাদের পদচিহ্ন রাখছে সফলতার সাথে। তবে কাজের ক্ষেত্র বাড়লেও কমেনি নারীর উপর সহিংসতার হার। বরং দিন দিন সহিংসতার নতুন নতুন ঘৃণ্য রূপ সমাজকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। যে সহিংসতা থেকে বাদ পরছে না তিন থেকে ত্রিশ বা তদুর্ধো বয়সি নারীরা। তাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে, বাসে গণধর্ষণ শেষে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এতসব করেও নারীরা আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সমান অংশীদার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অর্ধেক শক্তি। নারী শক্তি বাদ দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা অসম্ভব। নারীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগামী ভুমিকা পালন করছে। দেশের গার্মেন্টস শিল্পের একটি বিশাল অংশই নারী শ্রমিক। এই খাতে আজ যে সাফল্য বাংলাদেশ পেয়েছে সেটা এই নারীর জন্যই। পোশাক শিল্পের বর্তমানে বড়, মাঝারি ও ছোট-সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গার্মেন্টস কারখানায় কাজ কওে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্যমতে দেশের পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিক মোট শ্রমিকের ৬০-৬২ শতাংশ। সে হিসাবে বর্তমানে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ লাখের মতো। যদিও নব্বই দশকে পোশাক শিল্পে কর্মরত মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই ছিল নারী। বিভিন্ন কারণে পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের হার আগের চেয়ে কমে এসেছে। নারীর ক্ষমতায়ন মূলত চারটি পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো-পরিবারে নারীর আর্থিক অবদান, সম্পদে নারীর প্রবেশাধিকার, পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ এবং সংকট সামলানোর ক্ষমতা। গার্মেন্টস খাতে নারী কর্মীদের আর্থিকভাবে অবদান রাখতে, পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ, সম্পদে অধিকার ও ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা তৈরি করে। এগুলো শেষ পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে সমাজে তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন মূলত চারটি পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো- পরিবারে নারীর আর্থিক অবদান, সম্পদে নারীর প্রবেশাধিকার, পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ এবং সংকট সামলানোর ক্ষমতা। গার্মেন্টস খাতে নারী কর্মীদের আর্থিকভাবে অবদান রাখতে, পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ, সম্পদে অধিকার ও ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা তৈরি করে। এগুলো শেষ পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে সমাজে তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করেছে। একটা সময় প্রায় ৪৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের প্রায় ৩৫ লাখই ছিল নারী। এটি চাকরির বাজার হিসাবে বিশাল খাত। ফলে অনেক নারী যেমন বাসাবাড়িতে যারা কাজ করত, তাদের অনেকেরই গার্মেন্টসে কর্মসংস্থান হয়েছে। নারীর মেধা এবং পারদর্শীতার স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করা ব্যক্তির এ সমাজে অভাব নেই। অধিকার ফলানোতেই যেন তাদের আনন্দ সিমাবদ্ধ। বাল্যবিয়ে, যৌতুক,ধর্ষণ, রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিগ্রহ, পরিবারে অনিশ্চয়তা সবকিছু মিলিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রই যেন নারীদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মূলত বাল্যবিয়ে এবং যৌতুক নামক এক ভয়ংকর প্রাচীন কিন্তু আধুনিক জীবনের আদিমতা থেকে আজও বের এ বিশ্ব বের হতে পারেনি। কারণ কেবল বাংলাদেশ নয় ভারত, পাকিস্থান সহ অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের প্রধান বাধা এই বাল্যবিবাহ এবং যৌতুক প্রথা। কছু মানুষের বর্বরতায় কুলষিত হচ্ছে সমাজ জাতি দেশ। ধর্ষণ নামক এক নোংরা মানসিকতায় সমাজের কিছু মানুষ আনন্দ খুজে নিচ্ছে। তারা ধর্ষণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সেখানে কোনো মায়া নেই, মানবিকতা নেই কোনো সংকীর্ণতাবোধ নেই। তিন বছর থেকে শুরু করে সব বয়সি নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটা এমনভাবে বেড়ে চলেছে যে প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই কয়েকটি করে ধর্ষণের খবর মিলছে। এটা তো গেল পত্রিকায় যা আসছে তার কথা। তার বাইরেও তো নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত