রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, মাণ্ডা, মুগদাপাড়া, খিলগাঁও, পুরান ঢাকার কিছু এলাকা, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর ও রামপুরা এলাকার চিত্র খুব খারাপ। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এসব এলাকার বাসিন্দারা। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক প্রাপ্তবয়স্ক মশা ফাঁদে ধরা পড়েছে, যা অক্টোবর ও নভেম্বরে ছিল দুই শ’র কম। মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উত্তরা, দক্ষিণখান ও মিরপুর এলাকায়।
দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার ঢাকায় মশার উৎপাত একটি দীর্ঘ দিনের বড় সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে অতীতে কখনও ভুল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আবার কখনো ব্যাপক হারে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ফলে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মশার যন্ত্রণা ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েই থেকেছে।
২০১৭ সালে মশা নিধনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নর্দমাগুলোতে গাপ্পি মাছের পোনা ছেড়েছিল। ২০২০ সালে ঢাকার তিনটি জলাশয়ে ছাড়া হয় তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস। এরপর ঢাকার জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এভাবে একের পর এক নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও মশার দাপট কমানো যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্বববিদ মশা মারতে প্রচলিত ‘ফগিং’ অকার্যকর পদ্ধতি বলে মন্তব্য করেছেন । ২০২৩ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মশা নিয়ন্ত্রণে তার আগের ছয় অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যয় করেছে প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকা। এরপর তৎকালীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেছিলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। এভাবেই দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে মশা নিয়ন্ত্রণের নামে তামাশা চলেছে।
ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে কীটতত্ত্ববিদরা চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। সেগুলো হলো, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ, বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল, কেমিক্যাল বা কীটনাশক কন্ট্রোল এবং কমিউনিটি পার্টিসিপেশন। বিষয়গুলো দুই সিটি কর্পোরেশনকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
ঢাকাবাসীকে মশা থেকে বাঁচাতে দায় শুধু দুই সিটি কর্পোরেশনের নয়, ঢাকাবাসীরও রয়েছে। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেছেন, মশা নিধনে আমরা নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রাম, লার্ভিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগ করছি। কিন্তু তা তেমন কাজে আসছে না। ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল-ঝিল-খালে পানির প্রবাহ নেই। এসব স্থানে দীর্ঘ দিন মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এখানে লার্ভিসাইডিং ও ফগিং কোনো কাজে আসে না। একদিকে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করলে আরেক দিকে ভরে যায়। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীর সচেতনতা ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
চলতি অর্থবছরে মশা নিধনে প্রায় ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে এই অর্থ যে প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করবে তা বোঝা যায়। ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, মশা মারার পেছনে অর্থ খরচ হবে ঠিকই; কিন্তু মশার উৎপাত কমবে না, রক্ষা মিলবে না এ থেকে ঢাকাবাসীর।